অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকও আর কাজ করে না

  • আপডেট সময় রবিবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৩
  • 249 পাঠক

দিশারী ডেস্ক । ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

সারা দেশে প্রায় ৬৩ শতাংশ বিক্রয়কর্মী ও ৫৫ শতাংশ গ্রামীণ চিকিৎসকের অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান নেই। তাদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর দিক সংক্রান্ত ধারণা মোটেই নেই। ফলে মানুষ তাদের মাধ্যমে ওষুধ কিনে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে।

মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবীগুলো তাদের হটানোর জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলোতে সক্রিয় উপাদান বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্টগুলোকে অকার্যকর করে দেয়। অনেক রোগের ক্ষেত্রেই জটিল পর্যায়ে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকও আর কাজ করে না। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঔষধবিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নাল স্প্রিঙ্গারে প্রকাশিত হয়েছে। আগের আরও কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কেবল মানুষের শরীরেই অ্যান্টিবায়োটিকেরই যথেচ্ছ ব্যবহার নয়, বরং গৃহপালিত প্রাণী এবং মাছেও যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে ; যা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকে মানুষকে আরও বেশি বিপদে ফেলছে।

চলতি বছর পাস হওয়া আইনে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে অন্য একটি জরিপের ফলাফলের বরাত দিয়ে বলা হয়, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে।

২০১৪ সালে ছিল প্রতি হাজারে ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ২০১৬ সালে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ, ২০১৭ সালে ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ, তারপর বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সালে হয়েছে ৫২ শতাংশ।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজির অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। এটি শুধু মানুষের অ্যান্টিবায়োটিকেই নয়, প্রাণী ও কৃষি খাতে যা ব্যবহার হচ্ছে- সব ক্ষেত্রেই। বিশেষ করে এখন প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বেচাকেনা দুটোই নিষিদ্ধ। এ জন্য লাল মোড়ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকেও রোগীদের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে গ্রামীণ বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স নিয়ে গ্রামীণ চিকিৎসক ও ওষুধের দোকানদারদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার-সম্পর্কিত জ্ঞান, মনোভাব এবং অনুশীলনের ওপর একটি ক্রস-বিভাগীয় গবেষণা করা হয় চলতি বছরের শুরুতে।

গবেষক দলের লব্ধ ফলাফলে বলা হয়, সমীক্ষায় অংশ নেয়া ৩৯৬ জনের মধ্যে ২৪৭ জনই গ্রামীণ চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত এবং ১৪৯ জন ফার্মেসির দোকানদার। যাদের বয়স ১৮ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্রামীণ চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত প্রায় ৬৩ শতাংশ এবং ৫৫ শতাংশ ওষুধ বিক্রেতা অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য ওষুধের ব্যাপারে উপযুক্ত জ্ঞান রাখেন না।

বিশেষজ্ঞরা জানান, যখন অ্যান্টিবায়োটিক (যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়) এবং অন্যান্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট অকার্যকর হয়ে পড়ে, তখন সংক্রমণের চিকিৎসা করা কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়ে, রোগের বিস্তার, গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

ওষুধ প্রযুক্তিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, দেশে যেভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বৈধ ও অবৈধ ওষুধের দোকান, তাতে তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। মানুষ যথেচ্ছভাবে ওষুধ কিনছে ও মুড়িমুড়কির মতো খাচ্ছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যে মডেল ফার্মেসি চালু করেছে, সেটিও অপ্রতুল। এর পরিধি না বাড়ালে মানুষের বিপদ কমবে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রতিবছর শুধু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে। ফলে এএমআরকে মানবতার মুখোমুখি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের শীর্ষ ১০টি হুমকির মধ্যে একটি হিসেবে তুলে ধরেছে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!