তারেক রহমান : আগামী বিএনপির খোলা চিঠি

  • আপডেট সময় শুক্রবার, এপ্রিল ২৩, ২০২১
  • 888 পাঠক

—————–

আকাশ মো. জসিম

—————–

মহান মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গত একযুগ ধরে প্রগতিশীল, সময়োপযোগী ও আর্থিক সংগতিপূর্ণ নেতৃর্ত্বের অভাব, নানামুখী ষড়যন্ত্র আর শত্রুতায় এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি পদে থাকার সময়ে এ দলটি প্রতিষ্ঠার গৌরব ও ব্যাপকতা পুরো দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বকেও তাক লাগিয়ে দেয়।

সে সময়ে জিয়াউর রহমানের একনিষ্ঠ সততা, সভ্যতা, পরিশ্রম ও মেধা দলটিকে একটি জনকল্যাণকর ও প্রত্যাশিত সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছিল। জিয়াউর রহমানের শতশুদ্ধ সততার সত্যাচারিতার প্রবাহমান ধারা আজো দলটির পক্ষে প্রচারের একমাত্র নিয়ামকশক্তিও।

জানা যায়, জিয়াউর রহমান এ দল প্রতিষ্ঠাকালীন সে সেময়ে দেশের মেধাবী, প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ, ব্যক্তিগত ও সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে সর্বোচ্চ ফোরাম গঠন করেন। যাতে সে সময়ে যোগ দেন অনেক সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গও।

বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দেশগঠনে তাঁর একনিষ্ঠ দেশপ্রেম, প্রগতিশীল চিন্তা, চেতনা বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছেও অতিস্বল্প সময়ে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিল। যে কারণে ইরাক-ইরান যুদ্ধের মিমাংসা, সার্ক প্রতিষ্ঠাসহ বিশ্বব্যাপী শান্তিপ্রিয় সমাজ গঠনে তাঁর নেতৃর্ত্বের প্রশংসনীয় গুণাবলী দেশ-বিদেশেও রাষ্ট্রপতি জিয়াকে পরিচিত হতে সহায়তা করে ।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে ৩০ মে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউজে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন কর্মকান্ড শেষে রাতযাপনের কোন একসময়ে কতেক বিপদগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহতের পরও দলটি বর্তমানের ন্যায় এতোবড় দূর্যোগ, দু:সময় ও দূর্বিপাক আর পোহায়নি।

বিএনপির সাংগঠনিক সূত্র জানায়, রাষ্ট্র্রপতি জিয়াউর রহমান নিহতের পর তাঁর রেখে যাওয়া সুসংগঠিত দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের অনুরোধে তাঁর গৃহিণী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮৩ সালে এর হাল ধরেন।

এরপর বেগম খালেদা জিয়াও স্বামীর ন্যায় দেশপ্রেম, সততা, মানবতা, মানবিকতা আর সাহসী নেতৃর্ত্বের বলিয়ানে দলটিকে দেশব্যাপী আরো বেশি পরিচিত ও জনসমাদৃত করে তোলেন।

ওই সূত্র জানায়, বিগত ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এ দলটির পক্ষে বেগম খালেদা জিয়ার সংগ্রামী, কর্মনিষ্ঠ নেতৃর্ত্ব তাঁকে দেশবাসীর কাছে আপোষহীন নেত্রীর মর্যাদায় নিয়ে যায়।

এরশাদ সরকার হঠানোর পরেই প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের অধীনে একটি অবাধ, সষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে সমর্থ্য হন।

খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর দেশ গঠনে তাঁর ভূয়সী নেতৃর্ত্বে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত জাতীয় পার্টিরও অনেক ভাগা ভাগা নেতা এবং একসময়ের ছাত্রলীগের জাতীয় পর্যায়ে নেতৃর্ত্বদানকারীদের অনেকেও তাঁর দলে যোগদান করেন।

ধীরেধীরে জিয়াউর রহমানের চেনা পথ ধরেই দলটি একটি শক্ত, মজবুত ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়ে চলছিল। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলেও সে সময়েও জাতীয় সংসদে ১১৬ আসন নিয়ে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে বিএনপি।

দলের সাংগঠনিক সূত্র আরো জানায়, ২০০১ সালে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপি অধিষ্ঠিত হয়ে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী আর দলের মহাসচিব বদরুদ্দৌজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করছিলেন। চলমান সে সময়ে দলে বিভাজন সৃষ্টি, কর্তৃত্ব ও নের্তৃর্ত্বের খায়েসে বদরুদ্দৌজা ও তাঁর পুত্রের বিষয়ে নানা খবর ভেসে আসে বেগম খালেদা জিয়ার রাজটেবিলে।

এসব খবরে দলের সদ্যদায়িত্ব নেয়া যুগ্মমহাসচিব তারেক রহমান বদরুদ্দৌজা ও তাঁর পুত্রের চলন-বলনকে বিএনপির বিপরীতে একটি অভিশপ্ত রাজনৈতিক খায়েস হিসেবে সন্দেহ ও সংশয়ের চোখে দেখলেও বরং অন্যদের কাছে এ ছিল একটি হেয়ালিভাব। তারেকের এ বিচক্ষণতাই তাঁকে বদরুদ্দৌজাদের কাছে রাজনৈতিক শত্রুতা তথা প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে।

ধীরেধীরে বদরুদ্দৌজা ও তাঁর পুত্রসমেত বিএনপি বিরোধী বক্তব্য ও কর্মকান্ড তারেক রহমানকে তাঁর বাবার মৃত্যূর আগের আর পরের নানা কাহিনী স্মরণ করিয়ে দেয়।

তারেক রহমান স্মরণ করেন, জিয়াউর রহমানের নিহতের ওই রাতে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউজে তাঁর পিতার সফরসঙ্গী হয়ে ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদা ও বদরুদ্দৌজারাও ছিলেন। তাঁরা অক্ষত থাকলেও লাশ হয়েছেন একমাত্র তাঁর পিতা জিয়াউর রহমান।

এরপর তারেক পিতার হত্যাকান্ডে বদরুদ্দৌজাদের নিরপেক্ষতার ভান আর তারেক বিরোধী প্রচার-প্রপাকান্ডের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন। সে অভিযানেই ছিটকে যান বদরুদ্দৌজারা। ফলশ্রুতিতে, তারেক রহমানকে মোকাবেলা করতে হয় আরেকটি নতুন ষড়যন্ত্রের।

একপর্যায়ে সরকার, তারেক রহমান ও বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগারে জড়িয়ে পড়েন ১৯৮১ সালে জিয়ার মৃত্য সময়ের আরেক নিরব ভূমিকার বিএনপি নেতা কর্ণেল অলি আহমেদও। তিনিও তারেক রহমানের শুদ্ধি অভিযানের প্রতিপক্ষ হয়ে দলের মধ্যে উপদল সৃষ্টি করে নিজ দল গঠন করেন।

অবশ্য, ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদা এ কিউ এম বদরুদ্দৌজা চৌধুরী ও কর্ণেল অলিদের পরেই দল গঠন করেছেন। তবে এসব প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির একটি জেলার এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারাই বিএনপিকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছে তারা নিজেরাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদা প্রথমে বিএনএফ নামে যে দল গড়ছেন সে দলেও তার জায়গা হয়নি। কর্ণেল অলি আর বদরুদ্দোজা এক হয়ে এক পতাকায় ভার বইতে পারেননি। অলির বর্তমান দলও দু’ভাগ হয়ে গেছে।

একইভাবে, বদরুদ্দোজার দল থেকেও অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারীসহ অনেকে বের হয়ে ভিন্ন দল করছেন।

দলের সাংগঠনিক সূত্র বলছে, নিজের ও দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর ক্ষমতাকালীন প্রতিপক্ষ সৃষ্ট হওয়ার জের কাটতে না কাটতেই দেশে সেনা সমর্থিত ১/১১ সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। সে সরকারের অন্যতম মদদপুষ্টে সে সময়েও বিএনপি থেকে বের হয়ে আবদুল মান্নান ভুইয়ারা সংস্কার দল করেন। অবশ্যই সাইফুর রহমানের পিছুহটার কারণে তা বেশিদুর এগোয়নি।

ফলে সব খড়গই ভর করে বিএনপি তথা তারেক রহমানের ওপর। এরপর ১/১১ সরকার শুরু করে বিএনপি তথা তারেক অনুসারীদের গ্রেফতার, মামলা ও হয়রানি।

একপর্যায়ে, দলের একজন তৃতীয় শ্রেনীর নেতা চাটখিলের আমিন আহেমেদ ভুঁইয়াকে দিয়ে সেনা সমর্থিত সরকার নাটকীয়ভাবে একটি চাঁদাবাজির মামলা রুজু করে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে। সে মামলার সাথে আরো কতেক মামলায় জড়িয়ে পড়েন তারেক।

নির্যাতন, হয়রানি ও নিষ্পেশনের একপর্যায়ে তারেক রহমানও আপোষনামা জামিনে দেশান্তরিত হন। এরপর পরবর্তী সরকার আসার পরে বিচারাধীন মামলায় সাজা, পরোয়ানা নিয়েই তারেক রহমান আরেকটি রাজনৈতিক বিভীষিকায় বিষন্ন হন।

তারেক রহমান দেশান্তরিন রাজনৈতিক হওয়ার পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়াও দু’টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিনই কারাভোগ করছেন। বর্তমানে করোনার করুনায় সরকারের সাথে আপোষ শর্তে গুলশানের ফিরোজায় রয়েছেন।

ওই আপোষের শর্তানুযায়ী, খালেদা জিয়াও বিএনপির রাজনীতির পূর্ণগঠন কিংবা জনসমর্থনপুষ্ট অন্য কোন কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করতে পারছেননা। যে কারণে সঠিক যুগোপযোগি, প্রগতিশীল নের্তৃত্ব ও দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় আর্থিক অসংগতি বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে একটি বেহাল, বিপর্যস্ত ও পঙ্গুদশা সংগঠনের ন্যায় পরিণত করছে।

তবে দলের তৃণমূণের নেতা কর্মীরা মনে করেন, দলটি স্থায়ী কমিটির অনেকের মৃত্যৃ জনিত কারণে পদ শূণ্য রয়েছে। সে পদসমূহে দলের অনেক পরীক্ষিত, ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের স্থান দিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে নতুন প্রাণের সঞ্চার করা যেতে পারে। সে জন্যে তারেক রহমানকে অনেক বেশি উদার হতে হবে।

তৃণমূল কর্মীরা মনে করেন, দলের এ সময়ের প্রতিটি নেতা কর্মীর ওপর তারেক রহমানকে অগাধ আন্তরিক বিশ্বাস, ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে হবে। তারা বলছেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে যারাই বিএনপির জন্যে নিজেকে বিজর্সন দিতে কার্পণ্য করছেননা, তাদের নিয়ে কোন ধরনের সন্দেহপোষনও আরেক রাজনৈতিক দৈন্যতা কিংবা হীনতারই নামান্তর। এর ব্যত্যয় হলে আরো গভীর খাদের কিনারে বিএনপি তথা তারেক রহমানকে খুঁজে পেতে আর কোন আশা থাকবেনা বলে তাদের ধারণা।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতি করার পরেও কতেক সিনিয়র নেতার অন্যতম আবদুল্যাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিজ্ঞ রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেমসহ অনেককে যথাযথ রাজনৈতিক সম্মান না দেয়ায় তারাও দল থেকে মুখ ফিরিয়ে অবসর যাপন করছেন।

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতে, এ তালিকায় আরো অর্ন্তভুক্ত করা যেতে পারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো.শাহজাহান, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, কক্সবাজারের জনপ্রিয় রাজনীতিক এম সালাহ উদ্দিন আহমেদ, রাজশাহীর মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ আরো কতেক জাতীয়তাবাদী তরতাজা চেতনাকে।

রাজনৈতিকবোদ্ধারা মনে করেন, সর্বোপরি দলকে আগামীর ক্ষমতারর উপযোগি করে তুলতে দরকার উধ্যোগ, উদার আন্তরিকতা, আর একাগ্রতা ।

তাঁরা আরো মনে করেন, বিএনপিকে রাজপথের উপযোগি করার প্রয়োজনে বিএনপির সব ধরনের নেতাদের যোগ্যতানুসারে পদ পদবীতে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দিতে হবে। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি, সাহস আর দৃঢ়তা ফিরে পেতে পারে দলটি।

তাঁরা বলেন, মনে রাখতে হবে ১/১১ সরকারকালে যে বা বিএনপির বিরুদ্ধে সংস্কার দাবি করেছিল তারা আজো বিএনপির জন্যে নিবেদিত কর্মী, নেতা বা সমর্থক হয়ে রয়েছে। তারা আজো অন্যকোন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় নিজেকে বন্দোবস্ত করেনি।

একইভাবে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতেও আরো ব্যাপক রদ-বদল ও পরিবর্তন আনয়ন জরুরী বলে মনে করছেন তৃণমূলসহ দলের সর্বস্তরের শুভাকাঙ্খীরা।

এদিকে জেলা সমূহেও জেলা,উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নিবেদিত, কর্মনিষ্ঠ, ত্যাগী ও যোগ্যদের স্থান করে দিয়ে দলকে আরেকবার রাষ্ট্র ক্ষমতার উপযোগি করা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপির শুভানুধ্যায়ীরা।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!