——————————————————————-
বায়ুদূষণে জন্মাচ্ছে কম ওজনের শিশু
——————————————————————–
দিশারী ডেস্ক। ২০ নভেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
বায়ুদূষণের কারণে জন্ম নিচ্ছে কম ওজন বা অপরিণত শিশুর। দেশে প্রতি বছর ৫ লাখ ৭৩ হাজার অপরিণত শিশু জন্ম নেয়। এই অপরিণত শিশু বা অল্প ওজনের শিশু মৃত্যু অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুর মৃত্যুর হারের ২২ শতাংশ।
২০৩০ সালের মধ্যে এসডিএস অর্জন করতে হলে বর্তমান অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুর মৃত্যু প্রতি হাজারে ৩১ থেকে কমিয়ে ২৫ জনে, নবজাতক মৃত্যু নামাতে হবে প্রতি হাজারে ২০ থেকে ১২ জনে। আর এই অপরিণত শিশু মৃত্যুহার কমাতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
মিরপুর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা তাহিরা সিদ্দিকা ও মনোয়ার হোসেন দম্পতি। গত বছর তাদের প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম হয় দুই কেজিরও একটু কম ওজন নিয়ে এবং তা সময়ের আগে। এই দম্পতি জানান, গর্ভাবস্থায় বাসায় অবস্থান করছিলেন তাহিরা। হঠাৎ ছয় মাসের সময় তাহিরার সারা শরীর চুলকাতে শুরু করে, যা অসহনীয় অবস্থায় চলে যায়। চিকিত্সক জানান, অ্যালার্জি।
তবে গর্ভাবস্থায় ঔষধ দেয়া যাবে না। শরীরে লাগানোর জন্য একটি জেল জাতীয় মলম দেন। কিন্তু তাহিরা এই চুলকানির জন্য ঘুমাতে পারছিলেন না, খেতে পারছিলেন না। এসবের কারণে তিনি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সঙ্গে তার গর্ভের শিশুটিও। এভাবে আট মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই শিশুটিকে অস্ত্রোপচার করে বের করেন চিকিত্সক। তা না করলে শিশুটিকে বাঁচানো যেত না বলে জানিয়েছিলেন ঐ চিকিত্সক।
চিকিত্সক জানিয়েছিলেন, আমাদের দেশে দূষিত বায়ূর কারণে এমনটি হয়েছে তাহিরা সিদ্দিকার এবং এখন অনেক গর্ভবতী মায়ের সময়ের আগে নবজাতক জন্মানোর কেস পাওয়া যাচ্ছে বলে যায়।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় সন্তানসম্ভবা মায়েদের ওপর বায়ুদূষণের বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
রাজধানীতে জন্ম নেয়া ৩ হাজার ২০৬টি নবজাতককে নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় বেশি বায়ুদূষণের শিকার মায়েদের মধ্যে কম ওজনের শিশু জন্ম দেয়ার হার বেশি। অকালে সন্তান জন্মদানের ঝুঁকিও তাদের মধ্যে বেশি। গর্ভে পূর্ণ সময় থাকার আগেই শিশু জন্মানোরও একটি কারণ বায়ুদূষণ। এ দূষণের শিকার মায়েদের মধ্যে কম ওজনের শিশু জন্ম দেয়ার হার বেশি।
আইসিডিডিআর,বি-এর গবেষক ও ঐ গবেষণা দলের প্রধান মাহীন আল নাহিয়ান বলেন, আমরা দেখেছি, তুলনামূলকভাবে বেশি দূষণের শিকার মায়েরা বেশিসংখ্যক কম ওজনের শিশু জন্ম (লো বার্থ ওয়েট) দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে সময়ের আগে সন্তান জন্ম (প্রিটার্ম বার্থ) দেয়ার হারও বেশি।
রাজধানীর বায়ুদূষণের তথ্যউপাত্ত নেয়া হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের উৎস থেকে। আর মা ও নবজাতকের তথ্যউপাত্ত নেয়া হয়েছে রাজধানীর আজিমপুরের মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে।
জন্মের সময় নবজাতকের ওজন যদি ২ হাজার ৫০০ গ্রামের কম হয়, তাহলে তাকে ‘লো বার্থ ওয়েট’ বা কম জন্ম ওজন বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে কম দূষণের শিকার মায়েদের মধ্যে কম ওজনের শিশু জন্ম দেয়ার হার ২০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার মায়েদের মধ্যে এই হার ৩৬ শতাংশ। অর্থাত্ বেশি দূষণের শিকার মায়েদের মধ্যে কম ওজনের শিশু জন্ম দেয়ার হার ১৬ শতাংশ বেশি।
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বায়ুদূষণ বা বাতাসে থাকা অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণার কারণে ভ্রূণের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব অতিক্ষুদ্র ধূলিকণা সহজেই মানুষের চোখ, নাক, মুখ দিয়ে প্রবেশ করে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে হার্ট ফুসফুস, কিডনি, লিভারের ক্ষতি করে। তবে সবচেয়ে ক্ষতি হয় প্রজনন স্বাস্থ্যের। বিশেষ করে গর্ভপাত হয়, ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্মায়, স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিও ন্যাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম সবুজ বলেন, দেশে বর্তমানে পাঁচ বছরের নিচে শিশু প্রতি হাজারে ৩১ জনের মৃত্যু হয়। আর নবজাতকের মৃত্যু হয় প্রতি হাজারে ২০ জনের।
প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫ লাখ ৭৩ হাজার অপরিণত শিশু জন্মগ্রহণ করে যা ১৯.১ শতাংশ। এই অপরিণত শিশু ও অল্প ওজনের শিশুর মৃত্যু অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুর মৃত্যুর হারের ২২ শতাংশ।
বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিএস অর্জন করতে হলে বর্তমান অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুর মৃত্যু প্রতি হাজারে ৩১ থেকে কমিয়ে ২৫ জনে, নিওন্যাটাল মৃত্যু নামাতে হবে প্রতি হাজারে ২০ থেকে ১২ জনে। মনে রাখতে হবে, বর্তমানে এই অপরিণত শিশু মৃত্যু হার কমাতে হলে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে : অ্যান্টিন্যাটাল সেস্টিকসটিরিয়ড, ক্যাঙ্গারু মাথার কেয়ার (কেএমসি) এবং অসুস্থ শিশুর তাত্ক্ষণিক চিকিত্সা। সরকার এই অপরিণত শিশুর যত্ন নেয়ার জন্য স্ক্যানো এবং ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার প্রতিষ্ঠা করেছে।
Leave a Reply