——————————————————————————————————————————-
আওয়ামী রাজনীতির ভ্রান্ত কৌশল
——————————————————————————————————————————-
আকাশ মো. জসিম। ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
১) হরেক-রকম ! ব্যতিক্রম ! এটিও নাকি শেষ জমানার গণতন্ত্র ! যেখানকার কর্মকর্তারা সেখানেই আছেন। অথচ, আমাদের পরিষ্কার মনে আছে, যেদিন থেকে দেশ সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরে গেছে, সেদিন থেকেই নির্বাচনের তফসিল গণণার সময়ে বহাল তবিয়তের সরকার ব্যবস্থাটাও ক্ষমতা হারিয়েছে। প্রশাসনের সর্বত্রই ব্যাপক রদবদল হয়েছে। একতরফা সংসার সবতরফা হয়েছে।
অতপর ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ এর নির্বাচনের আয়োজনে দেখছি, বহাল সরকার নিজেকে নিজে বহাল রেখে নির্বাচনের ডামাঢোল পেটাচ্ছেন। এটি সভ্যতা, সুস্থ্যতা আর গণমানুষের গণতন্ত্র ? ১৯৯০ সালে নিরীহ ডা. মিলনের রক্তের বর্ণরেখার গণতন্ত্র ? শহীদ নুর হোসেন,শহীদ আসাদের মুক্তির মহামন্ত্র ?
২) কোন দেশের গণতন্ত্র যখন কোন সরকার ব্যবস্থায় জিম্মি হয়ে যায়, তখন শুধু রাষ্ট্রই নয় ওই সরকার এবং দলও একসময় দলীয় শৃঙ্খলা হারায়। আওয়ামী লীগ আজ নিজের ঘরে নিজেরাই বৈধ প্রার্থী। বৈধ প্রতিবাদী, বৈধ প্রতিদ্বন্ধি। আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠের যে প্রার্থীটি শক্তভাবে প্রতিবাদ জানাবেন, তিনি এখনো আওয়ামী লীগের নিজস্ব ঠিকানায়।
যেহেতু, আওয়ামী লীগ থেকেই তিনি বৈধ প্রতিবাদী হিসেবে নির্ধারিত, মনোনীত এবং সম্মানিত হিসেবেও স্বীকৃত ; সে কারণে আমরা মনে করি, তিনি ( বৈধ প্রতিবাদী ) আওয়ামী লীগের নৌকা কিংবা প্রার্থী বা মূল দলের অবকাঠামোর বিরুদ্ধে মাঠে যা বলবেন তাও নিশ্চয় মিথ্যেবাদীতার নামান্তর হয়না এবং হওয়ার কথাওনা।
কৌশল হিসেবে আর যাই বলেননা কেন, মাঠে এখন নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ বা নৌকার লোককেই বলতে হবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মুখে আওয়ামী লীগের কানকেই শুনতে হবে। যেহেতু আলামতে বিএনপি, জামাত, ইসলামী ঐক্যজোটসহ দেশের এক বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী সহি-সালামতে ভোটের মাঠে বা কেন্দ্রে যাবেননা। যাচ্ছেনওনা।২০১৪ আর ২০২৮ সাল তো এমন ঘটনারই স্বাক্ষ্য হয়।
যাকে অনেকটাই লেজেগোবরে অবস্থা বলা যায়। এ কারণে বলা যায়, বেশি রাজনীত করাটাও ভাল নয়। অন্যের জন্যে গর্ত খুঁড়লে সেখানে নিজেকেই আগে পড়তে হয়।আওয়ামী লীগে আজ একই ঘরে আরেক ধরনের পরবাসীর বাস। এখানে ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাইয়ের চাষ। আমরা মনে করি, এসব রাজনীতির কুটপথ পারষ্পরিক সহনীয় মূল্যবোধরও চরম হ্রাস।
৩) একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, সরকার কমপক্ষে ৫২ শতাংশ জনগণকে ভোটের মাঠে উপস্থিত করতে চায়। বর্হিবিশ্বে একটি দেশের মোট ভোট সংখ্যা দেখানোর জন্যে অবশ্যই এটি একটি ভালো পরিকল্পনা বলা যায়।
কিন্তু, ৫২ শতাংশ ভোট তো এককভাবে আওয়ামী লীগের ধরে নেয়ার উপায় নেই।এ ৫২ শতাংশ ভোট আওয়ামী লীগের নৌকা আর আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যেই যদি ভাগাভাগি হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের ঘরে ৩৫ গেলেও ১৭ শতাংশ তো নিজের দখলে নেই ।
তাহলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কোথায় ! কেননা, ৫২ শতাংশ ভোট তো আওয়ামী লীগ এককভাবে পাচ্ছেন এমন নিশ্চয়তা নেই। এ ভোট সংখ্যা আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগের মধ্যে ভাগাভাগি হলে বর্হিবিশ্বে প্রমাণ হবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় নেমেছে ধ্বস। সুতরাং, কোন একটি রাজনৈতিক দল মূল দর্শনের মৌলিকত্ব হারালে শৃঙ্খলা রক্ষার উপায় নেই।
৪) এরপর যদি আওয়ামী লীগ ২০১৪ কিংবা ২০১৮ এর আদলে নিজের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন, তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী বলি আর যাই বলি, ওই প্রার্থী নিজের অস্তিত্ব বিপন্ন শেষে হয়তোবা বলে ওঠবেন, এটি সত্যিকার আওয়ামী লীগের চরিত্র হয় ? হয়তোবা ক্ষোভ, দু:খ ও কষ্টে বলবেন, এটি আওয়ামী জমানার উপহার ? হয়তোবা বললেন, এমন আওয়ামী লীগ তিনি জীবনেও চাননি, দেখেননি । হয়তোবা বলে ওঠবেন, বাকী জীবনে আর দেখতেও চাননা।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক।
Leave a Reply