দিশারী ডেস্ক। ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশুদের ভাষা শিখতে সাহায্য করার জন্য তাদের সামনে গান গাওয়া অত্যাবশ্যক। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা প্রথমে পৃথক শব্দের পরিবর্তে তাল এবং স্বরের মাধ্যমে ভাষা বোঝে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে, গানে গানে কথা বললে শিশুদের তাড়াতাড়ি ভাষা শেখার প্রতি দক্ষতা বাড়ে।
সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, শিশুরা ছন্দ থেকে অর্থাৎ স্বরের উত্থান এবং পতন থেকে ভাষা শেখে- যেমন নার্সারি ছড়া বা গানে দেখা যায় বর্ণমালার গান। কেমব্রিজের গবেষক দলটি আরও আবিষ্কার করেছে, শিশুরা প্রায় সাত মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত ধ্বনিগত তথ্য-কথার ক্ষুদ্রতম শব্দ-প্রক্রিয়া করতে শুরু করে না।
গবেষকরা বলেছেন যে, নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত ফলাফলগুলি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যক্ত করে, ফোনেটিক তথ্য-সাধারণত বর্ণমালা দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা-ভাষা শিক্ষার চাবিকাঠি। তারা বলেছেন, ডিসলেক্সিয়া এবং বিকাশমূলক ভাষা ব্যাধি ধ্বনিগত তথ্য প্রক্রিয়াকরণে অসুবিধার পরিবর্তে ছন্দ উপলব্ধির সাথে যুক্ত হতে পারে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী অধ্যাপক ঊষা গোস্বামী, যিনি এই গবেষণার লেখক, বলেছেন, আমাদের গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় সাত মাস পর্যন্ত পৃথক শব্দ চিনতে শিশুদের অসুবিধে হয়, যদিও বেশিরভাগ শিশু ‘বোতল’-এর মতো পরিচিত শব্দ চিনতে পারে। তারপর থেকে পৃথক শব্দগুলি ধীরে-ধীরে ভাষার ভিত্তি তৈরি করে । আমরা বিশ্বাস করি, একটি গানের ছন্দ ভাষা বিকাশে সহায়তা করে।
অধ্যাপক বলছেন, অভিভাবকদের যতটা সম্ভব তাদের বাচ্চাদের সামনে গান করা অথবা নার্সারির ছড়ার তালে কথা বলা উচিত কারণ এটি ভাষার শেখার ফলাফলে একটি পার্থক্য আনবে।
পূর্বে মনে করা হয়েছিল যে, শিশুরা ছোট ছোট শব্দ উপাদানগুলি শিখে এবং শব্দ তৈরি করতে তাদের একত্রিত করে। এটি ছিল কিনা তা বোঝার জন্য গবেষকরা ৪, ৭ এবং ১১ মাস বয়সী ৫০ টি শিশুর মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করেছেন।
তাদের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮টি নার্সারি রাইমের ভিডিও দেখানো হয়েছিলো। শিশুরা কীভাবে মস্তিষ্কে এই তথ্য এনকোড করছে তা ব্যাখ্যা করতে দলটি বিশেষ অ্যালগরিদম ব্যবহার করেছিল। সেখান থেকেই দেখা যায়, রিদম সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহার করে শিশুরা বুঝতে পারছে, একটি শব্দ কোথায় শেষ নয় এবং পরবর্তী শব্দ কোথায় শুরু হয়। তার ভিত্তিতেই অভিভাবকদের সুরে সুর কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
অধ্যাপক উপাধ্যায় বলছেন, ছন্দ হলো প্রতিটি ভাষার একটি সার্বজনীন দিক যেখানে সমস্ত শিশুরা এক সেকেন্ডে দুবার শক্তিশালী শব্দাংশ সহ একটি শক্তিশালী বীট কাঠামোর সংস্পর্শে আসে। অধ্যয়নটি গোস্বামীর নেতৃত্বে ‘বেবিরিদম’ প্রকল্পের অংশ, যা ভাষা কীভাবে ডিসলেক্সিয়া এবং বিকাশমূলক ভাষা ব্যাধির সাথে সম্পর্কিত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।
Leave a Reply