——————————————————————————————————
বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ
——————————————————————————————————
দিশারী ডেস্ক। ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
এবার দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবার চিত্র ওঠে এলো বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে। জনশুমারি ২০২২ শীর্ষক প্রকাশনায় সংস্থাটি দেখিয়েছে, দেশে ডাক্তার ও ডেন্টিস্টের সংখ্যা সম্মিলিতভাবে মাত্র এক লাখ ৭৯ হাজার ১৬০ জন। আর দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১।
অর্থাৎ প্রতি এক হাজারের জন্য ডাক্তার ও ডেন্টিস্ট রয়েছেন সম্মিলিতভাবে এক দশমিক শূন্য পাঁচজন। অথচ দেশে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী রয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ১৯৬ জন। অর্থাৎ প্রতি হাজারের জন্য ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন এক দশমিক ৩১ জন।
পুরো দেশে ডাক্তার তুলনামূলক কম থাকলেও, পাশাপাশি পল্লি এলাকায় এ সংখ্যা আরও অনেক কম। দেশের পল্লি এলাকায় ডাক্তার ও ডেন্টিস্ট রয়েছেন মাত্র ৩৯ হাজার ১০৩ জন। অথচ দেশের পল্লি এলাকার জনসংখ্যা ১১ কোটি ৬০ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৪।
অর্থাৎ পল্লি এলাকায় প্রতি তিন হাজারের বিপরীতে ডাক্তার ও ডেন্টিস্ট রয়েছেন একজন। আর পল্লি এলাকায় ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন ৬০ হাজার ২৮২ জন। অর্থাৎ প্রতি দুই হাজারের জন্য একজন করে ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন।
এদিকে দেশের শহর এলাকার জনসংখ্যা পাঁচ কোটি ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ১০৭ জন। তাদের জন্য ডাক্তার ও ডেন্টিস্ট রয়েছেন এক লাখ ৪০ হাজার ৫৭ জন ও ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন এক লাখ ৬১ হাজার ৮১৪ জন।
অর্থাৎ শহর এলাকায় প্রতি হাজারের জন্য ডাক্তার ও ডেন্টিস্ট রয়েছেন দুই দশমিক ৬১ জন ও ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন তিনজন। এ হিসেবে দেখা যায়, পল্লি এলাকার তুলনায় শহর এলাকায় ডাক্তার বেশি রয়েছেন সাড়ে সাতগুণ ও ইঞ্জিনিয়ার সাড়ে পাঁচগুণ।
যদিও ডাক্তারদের পল্লি এলাকায় কাজ না করার মানসিকতার বহুবার সমালোচনা করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহেদ মালেক। এমনকি ডাক্তারদের গ্রাম থেকে শহরে বদলি হওয়ার প্রবণতা ও লবিংয়ের জন্য একাধিকবার শাস্তির হুমকিও দিয়েছেন তিনি। এরপরও ডাক্তারদের গ্রামমুখী করা যাচ্ছে না।
বিবিএসের তথ্য বলছে, সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাক্তার ও ডেন্টিস্ট রয়েছেন ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ডাক্তার ও ডেন্টিস্টের সংখ্যা ৯৩ হাজার ৪২৪ জন। অর্থাৎ সারাদেশের অর্ধেকের বেশি ডাক্তার/ডেন্টিস্ট ঢাকা বিভাগে। একই ধরনের চিত্র ইঞ্জিনিয়ারের ক্ষেত্রেও। ঢাকা বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার ১২ জন। অর্থাৎ মোট ডাক্তার/ডেন্টিস্টের ৫২ শতাংশ ও ইঞ্জিনিয়ারের ৫৪ শতাংশ ঢাকা বিভাগেই।
যদিও ঢাকা বিভাগের মোট ডাক্তার ও ডেন্টিস্টের ৮৮ শতাংশের বেশি শহর এলাকাতেই। আর পল্লি এলাকায় রয়েছে মাত্র ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ বিভাগের পল্লি এলাকায় ডাক্তার ও ডেন্টিস্ট রয়েছেন মাত্র ১০ হাজার ৯৮৮ জন আর শহরে ৮২ হাজার ৪৩৬ জন। অন্যদিকে ঢাকা বিভাগের পল্লি এলাকায় ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন ১৮ হাজার ১৫ ও শহর এলাকায় এক লাখ এক হাজার ৯৯৭ জন।
দুই ধরনের পেশাজীবীদের দিক থেকেই এরপর চট্টগ্রাম বিভাগের অবস্থান। এ বিভাগে ডাক্তার/ডেন্টিস্ট ২৮ হাজার ৮০ জন ও ইঞ্জিনিয়ার ৩৩ হাজার ৩৭৫ জন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা খুলনা বিভাগে ডাক্তার/ডেন্টিস্ট ১২ হাজার ৩১৯ জন ও ইঞ্জিনিয়ার ১৫ হাজার ২৪০ জন। আর রংপুর বিভাগে ডাক্তার/ডেন্টিস্ট রয়েছেন ১০ হাজার ৮০ জন ও ইঞ্জিনিয়ার ১১ হাজার ৮৬৫ জন।
এদিকে ময়মনসিংহ বিভাগে ডাক্তার/ডেন্টিস্ট সাত হাজার ৫৯৯ জন ও ইঞ্জিনিয়ার আট হাজার ৬৭৩ জন। বরিশাল বিভাগে ডাক্তার/ডেন্টিস্ট রয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৪০ জন ও ইঞ্জিনিয়ার সাত হাজার ৬৮২ জন। সবচেয়ে কম ডাক্তার/ডেন্টিস্ট ও ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগে ডাক্তার/ডেন্টিস্টের সংখ্যা চার হাজার ৯৫৩ জন ও ইঞ্জিনিয়ার পাঁচ হাজার ৪৯ জন।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর, তা দেখা গেছে করোনা সংক্রমণের সময়। বিশেষত ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা সংক্রমণ যখন চরম আকার ধারণ করে, সে সময় হাসপাতালে রোগীদের জায়গা দেয়া যায়নি। আইসিইউ সংকট ও অক্সিজেনের অভাবে দেশে প্রচুর রোগীকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।
শুধু করোনাকালীন সময়েই নয়, অন্যান্য স্বাভাবিক সময়েও দেশের চিকিৎসার মান নিয়ে ওঠেছে নানা প্রশ্ন। প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও সরঞ্জাম সংকটে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্সগুলোয় ঠিকমতো চিকিৎসা দেয়া যায় না। যেকোনো জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য রোগীদের হতে হয় ঢাকামুখী।
এখানেই শেষ নয়, দেশের স্বাস্থ্যসেবার করুণ চিত্র। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে বা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা না রাখতে পেরে অনেকেই দেশের বাইরে যাচ্ছেন। দেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ প্রতি বছর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর অবস্থাপন্ন মানুষ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন চিকিৎসা সেবা নিতে।
Leave a Reply