নকল সসে বাজার সয়লাব

  • আপডেট সময় বুধবার, ডিসেম্বর ২০, ২০২৩
  • 163 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

নিয়মিত বেস্ট’স চিলি অ্যান্ড গারলিক সস খেয়ে থাকেন এমন এক ক্রেতা সম্প্রতি দোকান থেকে ১৮১ টাকা মূলের ৩২০ গ্রাম ওজনের সসের একটি বোতল কেনেন। বাসায় নিয়ে বুঝতে পারেন সসের মান ভালো নয়। এরপর আরেকটি বোতল কেনেন। সেটিও ছিল ভেজাল। এক বোতলের সস পানির মতো, আরেক বোতলের সস অধিক টক।

তৃতীয়বার আরও এক বোতল কেনেন, তবে সেটির স্বাদ ও গুনগত মান ঠিক পাওয়া যায়। নকল সসের বিষয়টি দোকানির কাছে জানতে চাইলে দোকানির সোজাসাপ্টা উত্তর দেন তারা সস তৈরি করেন না, কোম্পানি থেকে কিনে এনে বিক্রি করেন। ভালো-মন্দ কোম্পানি বলতে পারবে। এভাবে দায়সারা উত্তর দিয়ে এড়িয়ে যান দোকানি।

ক্রেতা অবশিষ্ট সসসহ বোতল তিনটি সংরক্ষণ করেন। তার কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর বাজারে নামিদামি সুপার শপ, দোকানে বিক্রি হওয়া বেস্ট’স চিলি অ্যান্ড গারলিক সস যাচাই-বাছাই করা হয়। এতে ওই ক্রেতার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। দেখা যায়, বেস্ট’স চিলি অ্যান্ড গারলিক সসের বোতলের মোড়ক, উপাদানের তালিকাসহ যাবতীয় বিষয় দেয়া আছে এবং আসল সসের বোতলের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে। তবে সসের মান আলাদা। স্বাদ, মান এবং গুণগত দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাজারে চাহিদা থাকায় এই সস নামি-দামি হোটেল থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, অভিজাত ও পর্যটন এলাকার রেস্টুরেন্টে ব্যাপক হারে বিক্রি হয়ে থাকে।

মালয়েশিয়া থেকে আমদানিকৃত বেস্ট’স ব্র্যান্ডের টমেটো কেচাপ ও চিলি সস। বোতলজাত ‘বেস্ট’স চিলি অ্যান্ড গারলিক সস’ পণ্যটির মোড়কে, উপাদানের পরিমাণ, উৎপাদন এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম এমনকি পণ্যের মান নির্ধারণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) সিল ও কোড নম্বর সবই দেয়া আছে। বোতলের ভেতরে সসের রংও এক। বাইরে থেকে সব ঠিকঠাক থাকলেও বোতলের পুরো সস-ই নকল।

চাহিদার তুঙ্গে থাকা বিদেশী এ সস এভাবে নকল করে বাজারজাত করে আসছে একটি অসাধু চক্র। ইতোমধ্যে ভেজাল এই সস বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্রি হচ্ছে নামি-দামি সুপার শপে। বেশ কয়েকজন ভোক্তার অভিযোগ পাওয়ার পর এই সস নিয়ে অনুসন্ধানে এর সত্যতাও মিলেছে।

আমদানিকৃত সস যে নকল হচ্ছে এবং বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে, তা অকপটে স্বীকার করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শাহীন ফুড সাপ্লাইয়ার্স কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি তাদের নজরেও এসেছে।

এ বিষয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছেন, আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তা সত্ত্বেও পণ্যটি নকল করা হচ্ছে এবং চক্রের কাউকে আইনের আওতায় আনার খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বিএসটিআই এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, পণ্যটির বিষয়ে কোনো ভোক্তা অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মালয়েশিয়ান কোম্পানির বেস্ট’স চিলি অ্যান্ড গারলিক সস আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান হলো রাজধানীর লালবাগের শাহীন ফুড সাপ্লাইয়ার্স কোম্পানি। এই কোম্পানিই একমাত্র মালয়েশিয়া থেকে এই সস আমদানি করে। লালবাগের ৪৭, রাজ নারায়ণধর রোডে কোম্পানির গোডাউন। সেখান থেকে অর্ডার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাপ্লাই দিয়ে থাকে। অনলাইনেও এই সস বিক্রি করা হয়। সোমবার কোম্পানির অফিসে কথা হয় কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) মো. হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, গত জুনে বেস্ট’স চিলি সস নকল হওয়ার বিষয়টি তাদের নজরে আসে। ৯৪ কার্টনের একটি চালান নারায়ণগঞ্জ থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কক্সবাজারে পাঠায় একটি চক্র। বিষয়টি তাদের কক্সবাজার প্রতিনিধির নজরে আসলে তিনি কোম্পানিকে জানান।

এ ঘটনার দুই মাস পর নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। জিডিতে প্রেরক ও প্রাপকের নাম-পরিচয়সহ নকল সসের বোতলও থানায় জমা দেয়া হয়। র‌্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। তবে র‌্যাব-পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নকল সসের বোতল আর তাদের আমদানিকৃত আসল সসের পণ্যের বোতলের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে।

শুধুমাত্র উৎপাদন এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আসল সসের বোতলে উল্লেখ করা তারিখের ফন্ট ছোট, আর নকল সসের বোতলে লেখা তারিখের ফন্ট একটু বড়। হুমায়ুন কবিরের দাবি, বেস্ট’স চিলি অ্যান্ড গারলিক সস নকল করার বিষয়টি নিয়ে আগে কেউ তাদের কাছে অভিযোগ করেননি।

তবে বেস্ট’স চিলি সস নকল হওয়ায় তাদের বিক্রি আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে এবং বাজারে তাদের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। তাই গত ১২ তারিখে তারা বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। বর্তমানে তাদের অভিযোগটি নারায়ণগঞ্জ জেলের গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের কোম্পানি ২৮ বছর ধরে এ সস আমদানি করে থাকে।

মালয়েশিয়া থেকে জাহাজে করে চট্টগ্রাম পোর্টে আসার পর সেখানে বিএসটিআই কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে যাচাই-বাছাই শেষে চালান খালাস করা হয়। সস নকল করার সঙ্গে তাদের কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী জড়িত নয়। তার সন্দেহ নারায়ণগঞ্জে কোনো কারখানায় এ সস নকল করা হয়। তাদের জিডির সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করলে বিষয়টি বের হয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

বিষয়টি নজরে এনে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মনিটরিং কর্মকর্তা ইমরান ইমতিহান বলেন, এই পণ্যটির বিষয়ে তাদের কাছে কোনো ভোক্তা অভিযোগ করেনি। পণ্যটি যে নকল হচ্ছে, সে বিষয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানও অভিযোগ করেনি। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

তিনি বলেন, তাদের নিজস্ব কোনো সোর্স নেই, লোকবলের সংকট। তাই ভোক্তা কিংবা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। (সূত্র : অন্য দৈনিক।)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!