জন্মনিবন্ধনের বাইরে কয়েক লাখ পথশিশু

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪
  • 94 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

ভবঘুরের মতোই জীবন কেটে যায় রবি, নাজিম ও করিমের। স্টেশনের প্ল্যাটফরমই তাদের রাতযাপনের আশ্রয়স্থল। শুধু এই তিনজনই নয়, তাদের মতো লাখো পথশিশু আছে ঢাকায়।

আইনে স্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও জন্মনিবন্ধনের বাইরে রয়ে যাচ্ছে এরা। মাঠপর্যায়েও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। এতে রাষ্ট্রীয় নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। ফলে তাদের সাধ আর সাধ্যের ফারাক থেকে যায় রেললাইনের মতোই, কী শৈশব, কী কৈশোর কিংবা বার্ধক্যে ! শহরজুড়ে পরিচয়হীন ঘুরে বেড়ানো এসব শিশু, মৌলিক নাগরিক অধিকার কিংবা সামাজিক নিরাপত্তার সব সুরক্ষার বাইরে। কিন্তু কোনোভাবে, গায়ে-গতরে খেটেও ওরা একটু শিক্ষিত হয়ে ওঠবে তারও সুযোগ নেই। কারণ জন্মসনদের আওতায় নেই তারা।

সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক (শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকার বিভাগ) আবদুুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই শিশুরা যখন জন্মনিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছে না, তখন তারা প্রথমেই বাংলাদেশের যে নাগরিক হওয়ার সুবিধা আছে তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের সব সুযোগ-সুবিধা পেতে কিছু ক্ষেত্রে জন্মসনদ প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্ট তৈরি, বিবাহ নিবন্ধন বা গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ-সুবিধায় দরকার জন্মনিবন্ধন সনদ।

জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ১০ লাখ কিংবা ঢাকার ৭ লাখ পথশিশুই রাষ্ট্রীয় এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অথচ এ নিয়ে নেই আইনের কোনো ঘাটতি। ২০১৮ সালের জন্মণ্ডমৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা বলছে, পরিচয়হীন শিশুর বাবা-মা, জন্মস্থান ইত্যাদি না পাওয়া গেলেও নিবন্ধন করতে বাধা দেয়া যাবে না। অসম্পূর্ণ স্থানে অপ্রাপ্য লিখে নিবন্ধন করতে হবে।

পথশিশুদের নিয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, সেখানেও তাদের জন্মসনদের বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, আইন থাকার পরও মাঠপর্যায়ের নিবন্ধন কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে ভুগছে পথশিশুরা। একজন আইনজীবী বলেন, যখন পথশিশুদের এই জন্মসনদ দেওয়া হচ্ছে না। তখন সে যেসব সামাজিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারত, সেগুলো থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

এদিকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় বলছে, এ বিষয়ে নিবন্ধন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও কার্যকর ফল আসছে না। আর এখন পর্যন্ত কতজন পথশিশু নিবন্ধনের আওতায় এসেছে সেই পরিসংখ্যানও নেই তাদের কাছে।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. জাহিদ হোসেন বলেন, অবশ্যই সবশিশু জন্মনিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য। এ রকম কোনো বিষয় নজরে আসেনি যে, আমাদের কোনো সংস্থা সুবিধাবঞ্চিত শিশুর জন্মনিবন্ধন অস্বীকার করেছে।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নাগরিক স্বীকৃতি পেলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা ভবিষ্যতে মানবসম্পদে রূপান্তরিত হয়ে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!