দিশারী ডেস্ক। ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
মাতৃভাষা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানা নেই দেশের ৯২ শতাংশ মানুষের। নানা উদ্যোগ থাকলেও বেশি চাহিদা থাকা ভাষা ইংরেজি জানেন মাত্র ৫ ভাগ মানুষ। আর বাংলাকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেন এক ভাগের একটু বেশি মানুষ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘ বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স-২০২৩ শীর্ষক সর্বশেষ গবেষণার ফলাফলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বায়নের যুগে বেশি ভাষা জানা জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব বাড়লেও এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই প্রাথমিক পর্যায় থেকে ইংরেজিকে দ্বিতীয় ভাষার পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী তৃতীয় ভাষাও শেখানোর সময় এসেছে। আগের গবেষণা আর বর্তমান গবেষণায় পরিবর্তন এসেছে। আগে বলা হতো, একাধিক ভাষা শিখতে গেলে সবগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকত। তবে এখন বলা হচ্ছে বহুভাষী হলে এগিয়ে থাকা যায় সবক্ষেত্রে। কারণ এখন ‘গ্লোবালাইজড কমিউনিটি’। বিশ্ব নাগরিক হিসেবে টিকে থাকতে হলে বেশি ভাষা জানতেই হবে।
বিবিএস এর তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ভাষা ভেদে ৫ বছর ও এর চেয়ে বেশি বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে বাংলা ভাষা জানে ১ দশমিক ৪৮ ভাগ মানুষ। ইংরেজি জানে ৫ দশমিক ৪৩ ভাগ। এ ছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা দশমিক ২৭ এবং অন্যান্য ভাষা দশমিক ৯১। দ্বিতীয় ভাষা জানা নেই ৯১ দশমিক ৯২ ভাগ মানুষের।
মাতৃভাষার দিক থেকে বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, বাংলা ভাষাভাষী মানুষ ৯৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। ইংরেজিকে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করেন ০.০১ শতাংশ। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ১ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং অন্যান্য ০.৪৮ শতাংশ।
দক্ষ শিক্ষকের অভাবই ইংরেজিতে পিছিয়ে থাকার কারণ
বর্তমানে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ওপর পাঠ গ্রহণ করে থাকে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সঠিকভাবে এই ভাষার ব্যবহার করা জনগোষ্ঠী কম। এমনকি ইংরেজি ভাষার ওপর অনার্স-মাস্টার্স করেও সঠিকভাবে বলতে ও লিখতে পারেন না। ইংরেজি ভাষা শেখার মৌলিক দুর্বলতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছে খবরের কাগজ।
তাদের মতে, ইংরেজি ভাষা শেখানোর মতো দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া ইংরেজি ভাষা শেখার ম্যাটেরিয়াল বা উপকরণ পূর্ণাঙ্গ না। তার ওপর বিভিন্ন সময় সিলেবাস পরিবর্তন করতে গিয়ে ভিত্তি নড়ে গেছে।
একই সঙ্গে শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। তার লেখার ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া হয় না। যার কারণে শিক্ষার্থীর উন্নতির সুযোগ থাকে না। প্রথমেই গ্রামারের কঠিন নিয়ম না শিখিয়ে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা যায় এমন বাক্য-শব্দসম্ভার শেখানো অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইংরেজি ভাষা শেখাসহ ভাষার নানা দিক নিয়ে গবেষণা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আলমগীর তৈমুর।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বাস্তবমুখী কারিকুলাম করতে হবে। প্রত্যেক ইংরেজির শিক্ষকের আইইএলটিএস (ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা) স্কোর থাকতে হবে। এ জন্য তাদের ৬ মাস বা এক বছর সময় দেওয়া যেতে পারে। প্রাথমিক, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্কোর আলাদা থাকবে। এটা যদি সরকার বাধ্যতামূলক করে দেয় তাহলে অবস্থার দ্রুতই উন্নতি হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে অধিক জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে হলে ভাষা শেখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একজন ব্যক্তির যখন একাধিক ভাষার ওপর দক্ষতা তৈরি হয় সেটা তার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। একই সঙ্গে জানার পরিধি বেড়ে যায় এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা আসে। সেদিক থেকে আমাদের এই সংখ্যাটা বাড়াতে হবে।
Leave a Reply