৮৫ শতাংশ আবাসিকের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার বেহালদশা

  • আপডেট সময় রবিবার, এপ্রিল ২১, ২০২৪
  • 133 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২১ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ঢাকায় কতটি বাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ তা তারা আলাদা করে কোনো সমীক্ষা করেনি। এটি বাড়ির মালিকদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারা শুধু জনবহুল এলাকায় যেসব ভবনে মার্কেট, বিপণিবিতান ও হোটেল-মোটেল আছে ঝুঁকিপূর্ণ সেই ভবনগুলোতে সমীক্ষা করে থাকে।

তবে ফায়ার সার্ভিসের একটি সূত্র বলছে, তারা প্রাথমিক পর্যায়ে ছোট করে একটি সার্ভে করেছিল। কিন্তু সেটি চূড়ান্ত নয়। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রায় ৪৫ শতাংশ আবাসিক ভবনই আগুনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকায় ৮৫ শতাংশ আবাসিক ভবনই আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে এমন ভবনে ব্যানার টাঙানো হয়ে থাকে। কিন্তু তারা আইনগত প্রক্রিয়া প্রয়োগ করতে পারে না বলে তাদের এই ব্যানার অনেকেই কর্ণপাত করেন না। বিষয়টি দেখভাল করে থাকে রাজউক।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক শাহজাহান শিকদার জানান, ফায়ার সার্ভিস কতটি বাড়ি অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ তা নিয়ে আলাদা করে জরিপ চালায়নি।

যোগাযোগ করা হলে সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মেহেদী আহসান জানান, ঢাকায় প্রায় ৮৫ শতাংশ ভবনই আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এটা প্রতিরোধ করতে হলে ফায়ার সার্ভিসকে ক্ষমতা দিতে হবে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, অগ্নিঝুঁকি এড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ও অগ্নি আইন (২০০৩) প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে আগুন প্রতিরোধ করার জন্য ৩০টিরও বেশি নিয়ম দেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব নিয়মের তোয়াক্কা কেউ করছেন না।

সূত্র জানায়, একটি বাসায় অগ্নিদুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য নানা রকম সুবিধা থাকবে। সেগুলো হলো বাসার ফ্লোরের আয়তন বেশি হওয়া, সিঁড়ির প্রশস্ততা, জরুরি প্রস্থানের সিঁড়ির সংখ্যা বেশি হওয়া ও প্রতি তলায় সেফটি লবি থাকা যাতে আগুন লাগলে বাসিন্দারা সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।

এ ছাড়া বাসার ছাদে ওঠার একাধিক সিঁড়ি রাখা, ছাদের দরজায় কোনো অবস্থাতেই তালা না দেয়া অর্থাৎ সব সময় খোলা রাখা, ছাদের ওপরে পানির টাংকিতে ওঠার ছোট সিঁড়ি রাখা এবং সেখানে কিছু অতিরিক্ত জায়গা রাখা, বাসার নিচের রিজার্ভ ট্যাংক ৭০ হাজার গ্যালন পানি থাকার ব্যবস্থা, রিজার্ভ ট্যাংকের মুখ বড় হওয়া, ট্যাংকির চারপাশ বড় হলে সেটি আগুনের ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া আবাসিক ভবনে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং থাকা, ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকা ও বাসায় আলো চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিস সারা দেশে ২০২৩ সালে একটি সাধারণ জরিপ করেছিল। সেই জরিপে ৫ হাজার ৩৭৬ ভবন তারা পরিদর্শন করে। সেই ভবনগুলোতে বিপণিবিতান, শিল্পকারখানা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৯৪টি ভবন আগুনের ঝুঁকিতে ছিল।

গত সপ্তাহে সরেজমিনের হাতিরপুলের বাজারের পাশে দুটি বাসায় গিয়ে দেখা যায়, একটি বাসা ৯ তলা। আরেকটি বাসা ১১। ৯ তলা ভবনের কেয়াটেকার আলী হোসেন জানান, এই বাসায় কোনো লিফট নেই। এটি আবাসিক একটি ভবন। ভবনে আগুন নির্বাপণ করার ব্যবস্থা নেই।

২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার গুলশানের একটি বহুতল আবাসিক ভবনে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে মারা যান একজন। ওই ভবনে উচ্চবিত্ত লোকজন বাস করেন। একাধিক শিল্পপতির ফ্ল্যাটও আছে বলে জানা যায়। পরে জানা গেছে, ওই আবাসিক ভবনে আগুন নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পাশাপাশি বাসাটির সামনেও ছিল না ফায়ার সার্ভিসের কোনো ফায়ার হাইড্রেন্ট। এতে আগুনের মাত্রা বেড়ে যায়।

শুধু গুলশানের ওই আবাসিক ভবন নয়, ঢাকার অধিকাংশ আবাসিক ভবনেই আগুন থেকে সুরক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। থাকলেও সেটি লোক দেখানো। পর্যাপ্ত পরিমাণে নয়। অধিকাংশ আবাসিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকায় কতটি আবাসিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ তা কোনো প্রতিষ্ঠান আলাদা করে সমীক্ষা করেনি।

তিনি আরও জানান, ফায়ার সার্ভিস বা রাজউকের কোনো পরিদর্শক তাদের ভবন পরিদর্শন করতে আসেননি।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!