কর্মক্ষেত্রে ১০ বছরে মৃত্যু বেড়েছে তিন গুণ

  • আপডেট সময় রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
  • 48 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ২৮ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

দেশে কর্মস্থলে দিন দিন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। আহত হওয়ার ঘটনা, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটছে পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকদের। তারপরই মৃত্যু বেশি সেবা ও নির্মাণ খাতে। দেশে ১০ বছরের ব্যবধানে কর্মস্থলে মৃত্যু বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।

২০১৪ সালে মৃত্যু হয়েছিল ৩২০ জনের, ২০২৩ সালে হয় ৮৫৭ জনের। পর্যায়ক্রমে প্রতিবছরই এই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এই ১০ বছরে দেশে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটেছে মোট ৫ হাজার ২৩৫ জনের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে ঢাকায়। মৃতদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ পুরুষ এবং মাত্র ২ শতাংশ নারী শ্রমিক।

দেশে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত ও মৃত্যু নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির (এসআরএস) ২০২৩ সালের প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ রবিবার পালিত হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস।

জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা-২০১৩ অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২৮ এপ্রিল এই দিবস পালন করা হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ শ্রমিক, শোভন কর্মপরিবেশ, গড়ে তুলবে স্মার্ট বাংলাদেশ’।

বিশেষজ্ঞরা জানান, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হলো একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা, যা কাজের পরিবেশে ঘটে, যার ফলে একজন কর্মচারী আঘাত পান বা তার মৃত্যু হয়। নির্মাণ, উৎপাদন, পরিষেবা, কৃষি এবং পরিবহনসহ যেকোনো শিল্পে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে।

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা; বিস্ফোরণ; বিদ্যুৎস্পৃষ্ট; বজ্রপাত; মেঝে বা ওপরে থেকে পড়ে; কঠিন বা ভারী বস্তুর আঘাত; পানিতে ডুবে যাওয়া; আগুনে পোড়া; বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে আসা এবং পাহাড়, মাটি, সেতু, ভবন বা ছাদ, দেয়াল ধসে পড়া।

এসআরএসের নির্বাহী পরিচালক সেকান্দার আলী মিনা বলেন, আমরা বার্ষিক, মাসিক ও ক্ষেত্রবিশেষে সাপ্তাহিক তথ্যগুলোর সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পর্যালোচনা করে বার্ষিক পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করি। এ ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের প্রতিবেদনই আমাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন। যেখানে আমরা গত ১০ বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছি, দেশে কর্মস্থলে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বাড়ছে। দুর্ঘটনা ও মৃত্যু বাড়ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (বিডা) মহাপরিদর্শক মো. আবদুর রহিম খান সাংবাদিকদের জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিডার নেতৃত্বে ১০ হাজারের বেশি কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। এসব কারখানায় ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে। লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ২০৫টি প্রতিষ্ঠানকে। ৩১ হাজার ৩৩৮টির লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে।

মো. আবদুর রহিম খান জানান পরিদর্শনে দেখা গেছে, বিভিন্ন খাতে অনিবন্ধিত কারখানা রয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার। এখনো শ্রমিকদের কোনো ডেটাবেজ নেই। তাই লেবার ইনফরমেশন ডেটা সিস্টেম করা হচ্ছে। এখানে শ্রমিকদের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। যার মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি আরও সুরক্ষিত হবে বলে আশা করি।

বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু প্রতিবেদন ২০২৩ অনুসারে ২০১৪ সালে মারা গেছেন ৩২০ জন, ২০১৫ সালে ৩৭৩ জন, ২০১৬ সালে ৩৮২, ২০১৭ সালে ৪৩৭ জন। ২০১৮ সালে ৫৯৩ জন মারা যান। এই পাঁচ বছরে ধারাবাহিক মৃত্যু বেড়ে যায়। পরের বছর ২০১৯ সালে তা সামান্য কমে নামে ৫৭২ জনে। এর পরের বছর আরও কমে মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩৩ জনে। এই দুই বছর কিছুটা কম থাকার পর ২০২১ সালে তা আবার লাফিয়ে উঠে যায় ৫৩৮ জনে, ২০২২ সালে হয় ৭১২ জন এবং সর্বশেষ গত বছর মৃত্যু হয় ৮৭৫ জনের। এসব মৃত্যুর মধ্যে ৫৩০ জন মারা যান কর্মস্থলে অগ্নিকাণ্ডে। সর্বোচ্চ ৭৭ জন মারা গেছেন গত বছর, ২০২৩ সালে।

এদিকে ২০২৩ সালে সেক্টর হিসাবে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটে ৩৪০ জনের (৩৯ শতাংশ) পরিবহন সেক্টরে, শ্রমিকদের। ১৮৫ জনের (২১ শতাংশ) মৃত্যু হয় সেবা খাতে। যাতের বেশির ভাগই ইলেকট্রিশিয়ান। এ ছাড়া নির্মাণ খাতে ১৭৪ জনের মৃত্যু হয়, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে মারা যান ৯৬, কৃষি খাতে ৮০ জন।

ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে সর্বোচ্চ ৩২ জনের মৃত্যু ঘটে গার্মেন্টসে। ২০২৩ সালে দেশে কর্মস্থলে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটে জুলাই ও ডিসেম্বর মাসে। ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর মধ্যে ৯১টি ঘটনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৩২ জনের মৃত্যু ঘটে ঢাকায়। এরপরই ৫৪ ঘটনায় ৬৮ জনের মৃত্যু হয় চট্টগ্রামে, ৩২ ঘটনায় ৫৫ জনের প্রাণহানি হয় গাজীপুরে।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিবছর দেশে কর্মস্থলে যারা মারা যান, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫ দশমিক ১৪ শতাংশের বয়স ২১-৩০ বছরের মধ্যে।

কর্মক্ষেত্রে অসুস্থতাজনিত মৃত্যুর হিসেব নেই

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ- বিলসের পরামর্শক এবং কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ খোন্দকার আব্দুস সালাম বলেন, দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি হাজারও প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কারখানায় আন্তর্জাতিক মানের তো দূরের কথা দেশীয় কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাপনায়ও নজর নেই।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনা নিয়ে পরিবহন সেক্টরে কিছুটা আলোচনা হলেও বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিকদের বিভিন্ন রাসায়নিক বা জীবাণুর সংক্রমণে যে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়, সেদিকেও নজর নেই বললেই চলে। অনেক শিল্পকারখানায় শ্বাসকষ্ট, ক্যানসারসহ আরও কিছু রোগের উৎস থাকে। সেই সব সেক্টর নিয়ে কোনো কাজ হয় না। ফলে এ ধরনের অসুস্থতাজনিত কতজনের মৃত্যু হয় এর কোনো হিসেব নেই।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!