অবৈধ সম্পদ থেকে দান-সদকার বিধান কী ?

  • আপডেট সময় বুধবার, জুলাই ১০, ২০২৪
  • 131 পাঠক

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা । ১০ জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

দান-সদকা মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। এর মাধ্যমে মানুষ পাপমুক্ত হতে পারে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা নেক আমলসমূহ খেয়ে ফেলে, যেমন আগুন জ্বালানি কাঠ খেয়ে ফেলে। দান-খয়রাত গুনাহসমূহ বিলীন করে দেয়, যেমন পানি আগুনকে বিলীন করে (নিভিয়ে) দেয়।

নামাজ মুমিনের নুর (আলো) এবং রোজা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষার ঢাল। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২১০)

তবে দান-সদকার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও পাপমুক্তির জন্য শর্ত রয়েছে, তা হলো, হালাল পন্থায় উপার্জিত সম্পদ থেকে দান-সদকা করতে হবে। হারাম পথে উপার্জিত সম্পদ দান করলে কোনো সওয়াব নেই। নামাজ পড়তে যেমন অজু আবশ্যক, নইলে সেই নামাজের কোনো মূল্য নেই, তেমনি হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ দান করাও মানুষের কোনো উপকারে আসে না।

উসামা ইবনে উমায়র (রা.) বলেন, রাসুল‌ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা ব্যতীত কোনো নামাজ কবুল করেন না এবং অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের সদকা গ্রহণ করেন না। (নাসায়ি, হাদিস : ১৩৯)

যার জীবন-জীবিকা হারাম, পেটে হারাম খাদ্য, পরনে হারাম পোশাক, সে অবস্থা থেকে তাওবা করে ও মানুষের হক আদায়ে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্যের আশা করা অনর্থক। কারণ দোয়া কবুল হওয়ার জন্য এগুলো সব হালাল হওয়া শর্ত।

আবু হুরায়রা‌ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, হে লোক সকল, আল্লাহ তাআলা পবিত্র।তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া কিছু কবুল করেন না। আল্লাহ তাঁর রাসুলদের যেসব বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন, মুমিনদেরও সেসব বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ হে রাসুলগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার করো এবং সৎকাজ করো। তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবগত।’ (সুরা মুমিনুন : ৫১)।

তিনি আরো বলেন, ‘ হে মুমিনগণ, তোমাদের আমি যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো। (সুরা বাকারাহ : ১৭২)। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুল (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত এবং সারা শরীর ধূলিমলিন। সে আসমানের দিকে হাত দরাজ করে বলে, হে আমার প্রভু, হে আমার প্রতিপালক, অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এ অবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯৮৯)

হালাল উপায়ে অর্জিত সম্পদ কম হলেও তাতে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে। তা থেকে সদকাকৃত সামান্য সম্পদও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে সদকাকারীর উপকারে আসবে। আবু হুরায়রা‌ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি তার হালাল ও পবিত্র উপার্জিত একটি খেজুর দান করলে আল্লাহ‌ তাআলা ডান হাতে তা গ্রহণ করেন এবং তোমাদের কেউ যেভাবে উটের বা ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন করে বড় করে থাকে, তিনিও সেভাবে এটা বাড়াতে থাকেন। অবশেষে তা পাহাড় অথবা এর চেয়েও অনেক বড় হয়। (মুসলিম, হাদিস : ২২৩৩)

কিন্তু হারাম উপায়ে অর্জিত পাহাড়সম সম্পদের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। বরকত নেই। তা থেকে অকাতরে খরচ করলেও তা কবুল হয় না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো বান্দা হারাম পথে উপার্জিত অর্থ-সম্পদ দান-সাদাকা করলে তা কবুল করা হবে না এবং (ওই অর্থ-সম্পদ) নিজের কাজে ব্যবহার করলেও তাতে বরকত হবে না। আর ওই অর্থ-সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য জাহান্নামের পুঁজি হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মন্দের দ্বারা মন্দ মিটিয়ে দেন না, তবে সৎকাজ দ্বারা মন্দকাজ নির্মূল করেন। কেননা অবশ্যই মন্দ মন্দকে মেটাতে পারে না। (আহমাদ ও শারহুস সুন্নাহ)

অতএব প্রতিটি মুমিনের উচিত, হালাল রিজিক অন্বেষণে আত্মনিয়োগ করা। হারাম থেকে দূরে থাকা। হালালের মধ্যেই মহান আল্লাহ প্রশান্তি রেখেছেন। আল্লাহ সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!