দিশারী রিপোর্ট
———
নোয়াখালী জেলার হাটবাজার গুলোতে স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে চলছে জমজমাট সুদের কারবার। চোখ ধাঁধানো ডেকোরেশন। আলোকসজ্জা, থরে-থরে সাজানো রয়েছে বাহারি ডিজাইনের স্বর্ণালঙ্কার। সবাই জানে জুয়েলারির দোকান। অথচ এই জুয়েলারির আড়ালে চলছে চড়া সুদে স্বর্ণ বন্ধকীর নামে সুদের ব্যবসা।
এ বন্ধকী ব্যবসায় মানা হচ্ছে না সরকারি কোনো নিয়মনীতিও। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌরসভার সামান্য একটি ট্রেড লাইসেন্সকে ব্যবহার করে তারা যুগের পর যুগ চালিয়ে যাচ্ছে এই অবৈধ বন্ধকী সুদের ব্যবসা। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে গিয়ে প্রতারিত ও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী।
জেলার কয়েক শত জুয়েলারি দোকানে কয়েকশ কোটি টাকার অবৈধ বন্ধকী ব্যবসা চলছে। তবে প্রশাসনের সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এ অবৈধ স্বর্ণ বন্ধকী ব্যবসার নামে সুদের ব্যাপারে তারা অবগত নন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারসহ ছোট বড় বিভিন্ন বাজারে প্রায় দুই শতাধিক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে বন্ধকী ঋণের ব্যবসা চলছে। বন্ধকী ব্যবসায় ১শ টাকায় মাসে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত সুদ নেয়া হয়। এতে প্রতি মাসে এই সব স্বর্ন ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলের দরিদ্র্য মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে সুদের ব্যবসা করে অনেকে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার আশায় মাত্র দুই-তিন বছরে অলংকার তৈরির কারিগর থেকে নিজেই স্বর্ণ ব্যবসায়ী বনে যায়।
অনেক অসহায় মানুষ টাকার প্রয়োজনে স্বর্ণ বন্ধক রেখে টাকা নেয় এসব স্বর্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। টাকা নেয়ার সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা গ্রাহককে নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দেয়। তাদের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে স্বর্ণ নিতে না পারলে গ্রাহকের ওই স্ব^র্ণ আর ফেরত পাওয়া যায়না।
কিছু অসাধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গ্রাহকদের সাথে বিভিন্ন কৌশলে প্রতারনা করে অনেক ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে বিভিন্ন ক্যারেট স্বর্ণ আমদানির নাম করে গ্রাহকদের কাছে ভেজাল স্বর্ণ বিক্রি করছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে ব্যবসায়ীদের সাথে গ্রাহকদের হারহামেশা দেন দরবার দেখা যায়।
বন্ধকী ব্যবসায়ীরা জানান, স্বর্ণ বন্ধক রাখা গ্রাহকদের জন্য তাদের আলাদা খাতা বা ফাইল সংরক্ষণ করতে হয়। সেখানে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ স্বাক্ষর ও ফোন নম্বর রাখা হয়। স্বর্ণের মালিককে স্বর্ণ ও টাকার তথ্য সংবলিত একটি কার্ডও দেয়া হয়।
শর্তানুযায়ী, কোনো ঋণ গ্রহীতা টানা তিন মাস সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে স্বর্ণ গলিয়ে বিক্রি করার অধিকার থাকে বন্ধকী ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি সুদ ও ঋণের টাকার পরিমাণ বন্ধকী স্বর্ণের দামের চেয়ে বেশি হয়ে গেলে স্বর্ণ গলিয়ে ফেলার শর্তও জুড়ে দেন ব্যবসায়ীরা।
তবে স্বর্ণ বা গহনা গলিয়ে ফেলার আগে ব্যবসায়ীরা গ্রাহককে অবহিত করার রীতি অনুসরণ করেন বলে জানান তারা।
গ্রাহকরা জানান, তাৎক্ষণিক কোনো ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে কাগজপত্রের ঝামেলা ছাড়া টাকা পাওয়ার আর কোনো সহজ পথ নেই।
এছাড়া ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এক সপ্তাহের আগে টাকা দিতে পারে না। পাশাপাশি তাদের সদস্য হতে হয়। কিন্তু বন্ধকী ব্যবসায়ীর কাছে স্বর্ণ ছাড়া আর কিছুই লাগে না।
তাই তারা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে বন্ধক রাখেন। এতে তাদের কাছ থেকে চড়া সুদ আদায় করেন এসব সুদি মহাজনরা। তবে এসব সুদীজনেরা সুদ কারবারে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে চললেও সরকার নানা ফাঁকফোকরে রাজস্ব আদায়ে চরমভাবে প্রতারিত হচ্ছেন তাদের কাছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে বন্ধকী ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া পুরোপুরি অবৈধ।
Leave a Reply