লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চাননা ৯৩% মানুষ

  • আপডেট সময় বুধবার, আগস্ট ২১, ২০২৪
  • 89 পাঠক

জরিপের ফলাফল

——————————————————————-
দিশারী ডেস্ক। ২১ আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন ৯৩ শতাংশ মানুষ। একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন জরিপে এই চিত্র ওঠে এসেছে। জরিপে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত হবে না। আর ২ শতাংশ পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মত দেননি।

১৪ আগস্ট সন্ধ্যে ৭টা থেকে ২০ আগস্ট বিকেল ৫টা পর্যন্ত (গতকাল মঙ্গলবার) সাত দিন ওই পত্রিকার ফেসবুক পেজে এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে প্রশ্ন করা হয়, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন কি ?’

এই প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৩০ জন। অর্থাৎ তাঁরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে নিজের মতামত জানিয়েছেন। অন্যদিকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিপক্ষে, অর্থাৎ ‘না’ ভোট দিয়েছেন ১৯ হাজার ৫৬১ জন।

জরিপে ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’–এর পাশাপাশি ‘মন্তব্য’ নেই এমন একটি ঘর ছিল। মন্তব্য নেই-এর ঘরে ভোট দিয়েছেন ৩ হাজার ৮৪২ জন। ফেসবুকে পরিচালিত এই জরিপে ভোট দিয়েছেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৩০ জন। একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল।

———————————————————————————————————————————-
বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা বলছেন, ছাত্ররাজনীতি নয়, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে

———————————————————————————————————————————

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচলিত ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার দাবি তোলেন। এমন প্রেক্ষাপটে এই জরিপ করেছে ওই দৈনিকটি।

অবশ্য বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা বলছেন, ছাত্ররাজনীতি নয়, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি চালু থাকতে হবে।

ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবিতে গত সোমবার ও মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করছেন কিছু শিক্ষার্থী।

দেশে ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্র বিবেচনা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকারের সময় দেখা গেছে, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেন। কে হলে থাকতে পারবেন আর কে পারবেন না, তা এত দিন নির্ধারণ করতেন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। এখানে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ভূমিকা থাকে না। আওয়ামী লীগের সময় ছাত্রলীগ আর বিএনপির সময় ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছে। অবশ্য মেয়েদের হলে এই নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কম ছিল।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের দলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে যাওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। না গেলে নির্যাতনের মুখে পড়তে হতো। সে রকমই একটি ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ছাত্রলীগ নেতারা হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে ব্যাপক মারধর করেন দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী এহসান রফিককে। তখন তাঁর একটি চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়।

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধু ২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ৩৮টি চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারধর ও প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনায় নাম এসেছিল ছাত্রলীগের। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ছাত্রদলকেও এ ধরনের অপরাধে জড়াতে দেখা গেছে।

লেজুড়বৃত্তিক এ ধরনের ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীর ক্ষোভ বিভিন্ন সময় সামনে এসেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রায় সব হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে ‘হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’ এ রকম লিখিত অঙ্গীকার নেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্তত ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৬টি মেডিকেল কলেজ ও দুটি সরকারি কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দেশের শীর্ষ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই বছরের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী। এরপর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্যাতনের নানা অভিযোগ এনে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবির মুখে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে’ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট প্রশাসন।

ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কেন্দ্রীয় সভাপতি রাগীব নাঈম ওই দৈনিককে বলেন, ছাত্ররাজনীতির নামে দখলদারি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি বিরাজনীতিকীকরণের চেষ্টা। এর পেছনে কারা আছেন, তা খুঁজে দেখা দরকার। শিক্ষার্থীদের রাজনীতি সচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন।

রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গসংগঠন হিসেবে কোনো ছাত্রসংগঠন রাখতে পারবে না, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইন) এমন বিধান রয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো কৌশলে ছাত্র সংগঠন রেখে দিয়েছে। ছাত্রলীগকে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রে বলেছে, ছাত্রদল হবে সহযোগী সংগঠন, তারা নিজস্ব গঠনতন্ত্রে পরিচালিত হবে।

১০ আগস্ট এক সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ওই দৈনিককে বলেছিলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে দলীয় লেজুড়বৃত্তি, সন্ত্রাস ও পেশিশক্তিনির্ভর ছাত্ররাজনীতির কোনো প্রয়োজন নেই বলেই শিক্ষার্থীরা মনে করে। মেধা ও জ্ঞানভিত্তিক বিকাশ এবং অধিকার আদায়ের আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীরা কাজ করবে, জাতীয় স্বার্থে শিক্ষার্থীরা কথা বলবে। ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি ছাত্র সংসদভিত্তিক হওয়া উচিত। কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করার জন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় না। খুব দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!