দিশারী রিপোর্ট
————-
ব্যাগে কেক, পাউরুটি, বিস্কুটসহ নানা বেকারি পণ্য ঝুলছে ফুটপাতের দোকানে। নোয়াখালী শহরের ছোট থেকে বড় সব দোকানে দিন-রাত সমানতালে চলে বিকিকিনি। এসব দোকানে ক্ষুধার্ত অনেকেই এসব পণ্যের নিয়মিত ক্রেতা। এই তালিকায় আছে রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে স্বল্প আয়ের মানুষও।
তবে বেকারি পণ্যের এসব প্যাকেটের মোড়কে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ নেই। এক দোকানীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভ্যানে করে এক ডিলার এসে প্রতিদিন দুপুরে তাঁকে পাউরুটি, কেকসহ বেকারি পণ্য দিয়ে যায়।
ফলে পণ্যের মেয়াদের বিষয়টি নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা নেই। একদিনে বিক্রি না হলেও তা প্যাকেটে জড়িয়ে রেখে যান দোকানে। পরদিন কিংবা আরো পরে এসব সাবাড় হয়ে যায়। এরকম জেলার হাজার হাজার দোকানে বিক্রি হচ্ছে মানহীন বেকারি পণ্য। এসব পণ্যের মান ও মেয়াদের বালাই নেই।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা বেকারি থেকেই এসব দোকানে পণ্যের যোগান দেয়া হয়। সোনাপুর, দত্তেরহাট, মাইজদী, চৌমুহনী, কবিরহাট, বসুরহাট এলাকায় গড়ে ওঠেছে নামসর্বস্ব বেকারি। বাইর থেকে বোঝার জো নেই-এসব বেকারির।
সরেজমিনে এসব কারখানার ভেতরে ঘুরে দেখা যায়, ট্রেতে কেক তৈরি করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খালি অবস্থায় রেখে দেয়া হয়েছে। এসব কারখানার কর্মীরা কেকগুলো প্যাকেট করছে মাস্কহীন ও খালি হাতে। আবার কেকের প্যাকেটগুলোর মধ্যে খাবারের মেয়াদের কোনো রকমের সিলও নেই। মেয়াদের তারিখ নেই সাজিয়ে রাখা বিস্কুট ও কেকের প্যাকেটগুলোতে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নোয়াখালীতে গড়ে ওঠা বেশির ভাগ কারখানায় খাবার প্যাকেটজাত করার পর কোনো মেয়াদ দেয়া হয় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বেকারির এক কর্মচারী বলেন, অনেক সময় পুরোনো খাবার প্যাকেট করে নতুন একটা মেয়াদজুড়ে দেয়া হয়। ওই বেকারির ব্যবস্থাপক দাবি করেন, খাবার পণ্যগুলো একদম ফ্রেশ। প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু কারখানার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কেক তৈরি করে প্যাকেটজাত করা হয়। কিন্তু প্যাকেটে কোনো রকমের মেয়াদের সিল দেয়া হয় না। আবার পুরনো খাবার প্যাকেট করে বিক্রি করা হয়।
দত্তেরহাট এলাকার আরেকটি কারখানা। এই কারখানায়ও খালি হাতে কেক ও বিস্কুট প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। আবার তৈরি করা কেক অপরিষ্কার স্থানে খোলা রেখে দেয়া হয়েছে। ওই কারখানার ব্যবস্থাপক বলেন, অনেক সময় চাহিদার কারণে ও সময়ের অভাবে কেক ও বিস্কুটের প্যাকেটে মেয়াদের সিল দেয়া হয় না। তবে কারখানা ঘুরে দেখা গেল, বিস্কুট ও কেকের প্যাকেটে কোনো রকমের মেয়াদের সিলই নেই।
আরেক কারখানর মালিক বলেন, ননব্র্যান্ডের কারখানার কর্মীরা অজ্ঞতার কারণেই হাত দিয়ে প্যাকেটজাত করেন। এ ব্যাপারে বিএসটিআইয়ের নজর দেয়া উচিত। খাদ্যের মান সনদ দিয়ে থাকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। কিন্তু এসব নিম্নমানের খাদ্যপণ্য অবাধে বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিএসটিআই কী পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা বলেন, প্যাকেটজাত পণ্যের ওপর অবশ্যই মেয়াদ ও বিএসটিআইয়ের সিল থাকতে হবে। যদি কোনো বেকারি কারখানা প্যাকেটের ওপর সিল না দেয় তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। গোপন তথ্যর ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিএসটিআই।
Leave a Reply