নিজস্ব প্রতিনিধি
—————
করোনা মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখার পাশাপাশি মানবিক কাজও করছেন পুলিশ সদস্যরা। নিজেরা সংক্রমিত হওয়ার ভয়, পরিবার-পরিজনের পিছুটান উপেক্ষা করে মানুষের জন্য অতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকায় রয়েছে তারা।
প্রথম দিকে কোনো কোনো স্থানে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ গ্রহণ তো দূরে থাক জানাজা পড়ানোর জন্যও পরিবারের কেউ ছিল না। সেখানে সম্মুখ সারির যোদ্ধা পুলিশের সদস্যরা জানাজা পড়েছেন, কবর খুঁড়েছেন এবং দাফন করেছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে অন্য কারণে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশও এলাকাবাসী বাধা দেন দাফন করতে। পুলিশ সেখানেও মৃত ব্যক্তির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এছাড়া অসহায় মানুষগুলোর মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া, রক্ত দেওয়া, প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনা মূল্যে প্রদান, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার ও প্রতিবেশীর সুরক্ষায় কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার কাজও করছে পুলিশ।
মানবিকতার হাত বাড়িয়ে এ ধরনের কাজ করায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দেশের মানুষের প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। করোনা ভয়ংকর ছোঁয়াচে ভাইরাস জেনেও দায়িত্ববোধ, সেবাব্রত আর মানবিকতাবোধ তাদের কর্মস্থলে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংক্রমণের শিকার হয়েছেন; অনেকে মারাও গেছেন।
এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন পুলিশের ১০২ জন সদস্য। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ৩৪০ জন পুলিশ সদস্য। তবু করোনা মহামারিতে সেবা প্রদানে অনড় পুলিশ। ভাঙেনি তাদের মনোবল।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজারবাগ হাসপাতালে ভর্তি আছেন এমন ১০ জন পুলিশ সদস্য মৃত্যুভয়ে পিছপা না হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের এ ক্রান্তিকালে জনগণের পাশে থাকবে পুলিশ। কারণ তারা তো এদেশেরই মানুষ।
তারা আমাদের মা, বাবা, ভাই, বোন ও সন্তানদের মতো। দেশের জন্য যে কর্তব্য তা পালন করছি। স্বাধীনতাযুদ্ধে অত্যাধুনিক কামানের সামনেও পিছপা হয়নি এদেশের পুলিশ সদস্যরা। করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও আমরা পিছপা হবো না। গায়ে গা লাগিয়ে সেবা দিচ্ছি আমরা। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের সক্ষমতা বাড়িয়েছেন।
বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও এই সরকার প্রধান বাড়িয়েছেন। কারণ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যত শান্ত থাকবে, তত দেশের উন্নয়ন হবে। দেশের অগ্রগতিতে পুলিশের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
দেশের অপরাধ দমন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা, মামলা তদন্ত, সালিশ করা—এগুলো পুলিশের প্রতিদিনের কাজ। বর্তমানে এসব কাজ ছাড়াও করোনা মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। মানুষের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতেও কাজ করছে পুলিশ।
করোনার সর্বোচ্চ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে সবাই যখন নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে নিরাপদে বসবাস করছে ঠিক সেই মুহূর্তেই রাজধানীর পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চল, মফস্সল শহর এমনকি বিভাগীয় শহরে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অবিরাম ছোটাছুটি করে চলেছেন প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই।
তবে এতে বিচলিত নন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পুলিশ সদস্যরা বরং সহকর্মীদের মৃত্যুশোককে শক্তিতে পরিণত করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। ৯৯৯-এর মাধ্যমে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিচ্ছে পুলিশ। অভাবী মানুষের জন্য সরকারি ত্রাণ যাতে চুরি না হয়, সেক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে পুলিশ। সব মিলিয়ে করোনার এই দুর্যোগে পুলিশের এক নতুন মানবিক ভাবমূর্তি গড়ে ওঠেছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ জানান, করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবতার কাজও করা হচ্ছে। করোনায় পুলিশ সদস্যরাও মারা গেছেন। কিন্তু সেবা প্রদানে পিছপা হয়নি পুলিশ। মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে কঠোরও হচ্ছে পুলিশ।
ড. বেনজীর আহমেদ দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। নিজে বাঁচুন, পরিবার ও প্রতিবেশীকে বাঁচান। তিনি বলেন, করোনায় পুলিশের যে সদস্যরা মারা গেছেন, মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়েই তারা প্রাণ দিয়েছেন। তাদের অবদান জাতি ভুলবে না।
Leave a Reply