নিজস্ব প্রতিনিধি
———–
শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই এখন ইন্টারনেটের আওতায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাণিজ্যসহ সব খাতেই বাড়ছে ইন্টারনেট গ্রাহক। আর এই সুযোগে ব্যবসায় গ্রাহক ঠকিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত সংযোগ দেয়ায় মানসম্পন্ন সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। আর কোয়ালিটি অব সার্ভিসের নীতিমালা থাকলেও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় যথেষ্ট মনিটরিং নেই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার।
——————————————-
সক্ষমতার অতিরিক্ত সংযোগ গতি কম, ঠকছে গ্রাহক
——————————————
কয়েকজন গ্রাহকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বিটিআরসির নতুন নীতিমালায় আগের চেয়ে সেবার মান কিছুটা উন্নত হলেও এখনও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত হয়নি। বিটিআরসির নীতিমালার আগে আর পরে যে উন্নতি হয়েছে তা হলোÑআগে অনেক সময় ইন্টারনেট কানেকশনই থাকত না, এখন কানেকশন থাকছে কিন্তু গতি কম। অভিযোগ করলে বলা হয়, রাউটার ভালো না থাকায় গতি পাচ্ছে না, বা হাই রেজ্যুলেশন ভিডিও দেখায় গতি কমে যাচ্ছে।
সদর উপজেলার ধর্মপুর এলাকার অধিবাসী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘একেক এলাকায় একেক রকম সেবা। তেমনি গ্রাহকদের বেলায়ও সেবার তফাত রয়েছে। একই প্যাকেজের সংযোগে আমার বন্ধুর বাসায় গতি ভালো, আবার আমার বাসায় গতি কম। দুই বাসাতেই সমান ব্যবহারকারী, কিন্তু সেবার মানে অনেক ফারাক। বিটিআরসির নতুন নীতিমালা কিছুটা কাজে এসেছে। অর্থাৎ আগে মাঝেমধ্যেই সংযোগ থাকত না। বৃষ্টির কারণে তার কাটা পড়েছে বা বিদ্যুৎ চলে গেছেÑনানা অজুহাত দেখাত। আর এখন সংযোগ থাকছে, তবে স্পিড ওঠছে না।
সোনাপুর এলাকার গ্রাহক মুজিবুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘নতুন নীতিমালায় ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারে ব্যয় বাড়লেও সেবা বাড়েনি। অভিযোগ জানাতে বিটিআরসি’তে কল সেন্টারে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন ওঠায় না কেউ। গ্রাহকদের সেবার মান বাড়াতে বিটিআরসির আরও বেশি কাজ করা উচিত। দেশের নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় অভিযোগ জানাতে ফোন করে না পাওয়া সত্যিই অপ্রত্যাশিত। বিষয়টি বিটিআরসির গুরুত্বসহ দেখা দরকার।’
এদিকে ক্যাপাসিটির তুলনায় অতিরিক্ত সংযোগ দেয়ায় গ্রাহকরা মানসম্পন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, গ্রাহকরা মানসম্পন্ন সেবা না পাওয়ার কয়েকটি কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বল্প ব্র্যান্ডউইথ দিয়ে বিপুলসংখ্যক গ্রাহককে সেবা দেয়া হয়। ৫০০ গ্রাহকদের সংযোগের বিপরীতে যখন কোনো প্রতিষ্ঠান ৮০০ সংযোগ প্রদান করে, তখনই স্পিড পড়ে যাচ্ছে, যেটি গ্রাহকরা বুঝতে পারছেন না। গ্রাহকদের টেকনিক্যাল নলেজ না থাকায় তারা গিগাবাইট বা ব্র্যান্ডউইথ কতটুকু ব্যবহার হচ্ছে, তা বুঝতে পারছেন না। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তির কারসাজিতে গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাণিজ্য সব জায়গায় এখন ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। গ্রাহকদের মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে হলে বিটিআরসির ফিজিক্যালি আরও বেশি তৎপর হতে হবে। গ্রাহকদের দোরগোড়ায় তাদের সমস্যা জানার চেষ্টা করতে হবে, ফিল্ড ভিজিট করতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত অভিজ্ঞতা জানতে হবে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসপিএবি) এক সদস্য বলেন, ‘গ্রাহকদের কোয়ালিটিসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসির নীতিমালা অনুসরণ করছে। প্রতিনিয়ত ব্রডব্যান্ড সেবা বাড়ছে, প্রতিষ্ঠানও বাড়ছে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো গ্রাহকের অভিযোগ পেলে আমরা তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও তা মনিটরিংয়ে জনবল বাড়েনি। ফলে অনেক জায়গায় এখনও তদারকির ঘাটতি রয়েছে। গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানে বা তা মনিটরিং করতে জনবল বাড়ানোর বিকল্প নেই। নতুন করে ফোর-জি প্রযুক্তি চালু হয়েছে, ফাইভ-জির তরঙ্গ বিক্রি সম্পন্ন হলো, গ্রাহকদের উন্নত সেবা প্রদানে কোয়ালিটি অব সার্ভিস গাইড লাইনসহ অনেক কিছুই হচ্ছে। তবে এসব দেখভালের জন্য পর্যাপ্ত জনবল নেই।
উল্লেখ্য, ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে বিটিআরসি গত নভেম্বরে একটি নির্দেশনা জারি করে। এতে বলা হয়, টানা পাঁচ দিন ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে গ্রাহকের কাছ থেকে ওই মাসে মোট বিলের ৫০ শতাংশ নেয়া যাবে। টানা ১০ দিন ইন্টারনেট না থাকলে নেয়া যাবে মাসিক বিলের ২৫ শতাংশ। আর ১৫ দিন ইন্টারনেট না থাকলে সে মাসে কোনো বিলই নেয়া যাবে না। আর গত জুনে সারাদেশে ইন্টারনেটের একই বিলের হার ‘এক দেশ এক রেট’ ঘোষণা করে বিটিআরসি। এতে গ্রাহক পর্যায়ে পাঁচ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড) গতির ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ মূল্য হবে ৫০০ টাকা, ১০ এমবিপিএসের মূল্য ৮০০ টাকা এবং ২০ এমবিপিএসের মূল্য এক হাজার ২০০ টাকা বেঁধে দেয়া হয়।
Leave a Reply