নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী
—————————
নোয়াখালীর অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোঁরায় পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল, পচা-বাসি ও নিম্নমানের খাবার। ক্রেতারাও এসব খাবার খেয়ে পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড় হাটবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় শতশত হোটেল-রেস্তোঁরা থাকলেও তার সঠিক সংখ্যা সংরক্ষিত নেই জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে। পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাত্র একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে শুরু করে এর কারবার। এর মধ্যে বেশিরভাগ হোটেল-রেস্তোঁঁরার পরিবেশ খুবই অস্বাস্থ্যকর। নোংরা পরিবেশে এসব হোটেল-রেস্তোঁরার ভেজাল ও পচা-বাসি খাবার বিক্রি হয়ে থাকে। রান্নাঘরের ভেতরে স্যাঁতসেঁতে, ময়লা, দুর্গন্ধপূর্ণ স্থানে রান্না করা খাবার থাকে খোলা। ওই খাবারের মধ্যে প্রায় সময় পোকা-মাকড়, মশা-মাছি কিংবা এক খাবারের মধ্যে অন্য খাবারের অংশ গিয়ে পড়ে।
এসব হোটেল-রেস্তোঁরায় থালা-বাটি ও গ্লাসগুলো ধোয়া হয় অপরিষ্কার পানিতে। ধোয়ার পরও থালা-বাটি ও গ্লাসে তেল জড়ানো থাকে। এমন পরিবেশে থাকা খাবার মানুষকে পরিবেশন করা হয়। এমন অনেক হোটেল-রেস্তোঁরা আছে যেখানে খাবারের পরে খরিদ্দারদের হাত ধোয়ার মতো ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই।
অনেক হোটেলে খাবারের পর হাত পরিষ্কারের জন্য কোনো সাবান, তোয়ালে ও টিস্যু থাকে না। ময়লাযুক্ত কাগজ ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। অথচ প্রতিদিনই তারা সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে রাত অবধি সব ধরনের খাবার পরিবেশন করে থাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে খাবার পরিবেশিত হওয়া হোটেলের সংখ্যা মাত্র হাতেগোনা।
সরেজমিনে জেলা শহরের আমানিয়া, মোহাম্মদীয়া, টোকিও কাবাব, গ্র্যান্ড, রাজমহল, রহমানিয়া, সোনাপুরের জনতা হোটেলে দেখা গেছে খাবারের মান নিম্মমানের হলেও দাম অত্যন্ত চড়া। এসব হোটেলে দ্রব্যমূল্য বাড়ার অজুহাতে আগে যে খাবারের দাম ছিল ১০ টাকা ; হালে তা হয়েছে ১৫ টাকায়। এছাড়া, এমন কোন জিনিস নেই যে যার দাম ইচ্ছেমতো বাড়ায়নি হোটেল মালিকপক্ষ।
জেলা প্রশাসনের এ শাখার দায়িত্বশীল করণিক জানান, সিভিল সার্জন কার্যালয় সবই জানে। তবে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান সহকারী পরিচয়ে একজন জানান, জেলা প্রশাসন থেকে এসব তথ্য পাবেন। আমাদের কার্যালয় থেকে শুধু হোটেল-রেস্তোঁরার কোনো কর্মচারীর মেডিক্যাল রিপোর্ট চাইলে তা দেয়া হয়। এর বাইরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে জেলা প্রশাসন চাইলে আমাদের একজন মেডিক্যাল অফিসার থাকেন ওই টিমে।
হোটেল, রেস্তোঁরার পচা-বাসি খাবার খাওয়া বন্ধ করলে দেশে অনেক রোগী কমে যেত বলে মনে করেন চিকিৎসক আবদুস সাত্তার ফরায়েজী। জেলার বিশিষ্টজনরা জানান, ভেজালবিরোধী অভিযানে নোংরা, পচা-বাসি ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বিক্রেতাদের কয়েক হাজার টাকা জরিমানা করাই যথেষ্ট নয়।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার জানান, বর্তমানে মানুষের জটিল ও কঠিন রোগের একমাত্র কারণ হোটেল-রেস্তোঁরার পচা-বাসি ও ভেজাল খাবার। একমাত্র জনসচেতনতাই এগুলো রুখতে পারে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তন্ময় দাস জানান, অনেক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের জরিমানাও করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর ক’দিন হোটেল-রেস্তোঁরার মালিকরা একটু সতর্ক থাকেন, পরে আগের মতো হয়ে যান।
Leave a Reply