ডেস্ক, দৈনিক দিশারী
——————-
দেশের ২ হাজার ২১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছোটখাটো মেরামতের জন্য ৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি) আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
৮ জানুয়ারি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বরাদ্দপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত প্রতিটি বিদ্যালয় ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ পেয়েছে। এসব কাজ হবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, অতীতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের মেরামত কাজে বরাদ্দের টাকা নানাভাবে নয়ছয় করা হয়েছে। এবারও এ কার্যক্রমে সীমাহীন দুর্নীতির শঙ্কা করছে অধিদপ্তর। তাই এবার অধিদপ্তর থেকে মেরামত কাজের আগের ও পরের ছবি এবং ভিডিও সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাঠপর্যায়ে কর্মরত একাধিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, প্রতিবারই অধিকাংশ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নামমাত্র কাজ করে একশ্রেণির প্রকৌশলী ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে উৎকোচ দিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করে নেয়ার অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে এবার কিছুটা কড়াকড়ি করা হচ্ছে।
তারা বলছেন, অনেক সময় দেখা যায় ম্যানেজিং কমিটি চাপ দিয়ে শিক্ষকদের কারচুপি করতে বাধ্য করে। তাই ম্যানেজিং কমিটিকে বাদ দিয়ে স্থানীয় বিশিষ্টজনকে সংযুক্ত করলে দুর্নীতি কমে আসতে পারে। তা ছাড়া শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও এ ধরনের নির্মাণকাজ মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।
নীতিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করা শেষ হলে প্রকৌশলী ও শিক্ষা কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র নিতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এ দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ই ভাঙাচোরা। তাই প্রতিবারই ছোটখাটো মেরামতের জন্য অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়। ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে এ কাজ হয়। তবে তা দেখভাল করেন উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি)।
তবে অধিকাংশ স্কুলেই ম্যানেজিং কমিটির একশ্রেণির সদস্য নামমাত্র কাজ করিয়ে এলজিইডির যোগসাজশে বরাদ্দের টাকা তুলে নেয়। অভিযোগ রয়েছে, অর্থের বিনিময়ে সহকারী প্রকৌশলী এবং সংশ্লিষ্ট কাস্টার অফিসারদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে বিল তুলে সংশ্লিষ্টরা লুটপাট করে থাকে।
আরেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের এসব কাজের দেখাশোনা করতে বলা হয়। কিন্তু প্রতিটি উপজেলায়ই জনবল সংকটের কারণে তারা তা যথাযথভাবে তদারকি করতে পারেন না। সে কারণে অনিয়ম হয়ে থাকে।
তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘নির্দিষ্ট কাজের পরিকল্পনা দেয়ার পরই স্কুলগুলোকে বরাদ্দ দেয়া হয়। এখানে দুর্নীতির সুযোগ কম। তারপরও অভিযোগ উঠলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
গতকাল তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে জানানো হয়েছে, বরাদ্দপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে পুরো কাজ সম্পাদন করতে হবে। তবে কাজ শুরুর আগেই উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে মেরামত কাজের প্রাক্কলন প্রস্তুত করে উপজেলা শিক্ষা কমিটির অনুমোদন নিয়ে মেরামত কাজ শেষ করতে হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সংশ্লিষ্ট সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এসএমসি-কে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন।
বরাদ্দের টাকা দিয়ে বিদ্যালয়গুলো বিদ্যালয় ভবন, ওয়াশব্লক ও টয়লেটের ক্ষতিগ্রস্ত প্লাস্টার, দরজা, জানালা, বেঞ্চ, চেয়ার, কলাপসিবল গেট ইত্যাদি মেরামত করতে পারবে। ছাদের সিলিং ও আস্তর এবং বিভিন্ন ফাটলও মেরামত করা যাবে। টয়লেটের পাইপ, ড্রেন, বেসিন, কমোড, প্যান, টিউবওয়েল ইত্যাদি মেরামত ও প্রতিস্থাপন করা যাবে। এক কথায় বিদ্যালয় ও বিদ্যালয় ভবনের স্বার্থে যেকোনো চাহিদাভিত্তিক ক্ষুদ্র মেরামত কাজ করা যাবে।
Leave a Reply