দেশে দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশ, অতিদারিদ্র্য ৫.৬%

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৩, ২০২৩
  • 134 পাঠক

————————

খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২

————————
নিজস্ব ডেস্ক
এপ্রিল ১৩, ২০২৩

—————–

করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে উঠে এসেছে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখান থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে ২০২২ সালে তা নেমে আসে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। একই সময়ে অতিদারিদ্র্য ১২ দশমিক ৯ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে।

বিবিএসের খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপের ১৭তম রাউন্ড পরিচালিত হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে গতকাল এ জরিপের ফলাফল উপস্থাপন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিবিএস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।

খানার আয়-ব্যয় জরিপে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে এখন খানাপ্রতি গড় মাসিক আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা। ২০১৬ সালে তা ছিল ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা। একই সময় আয়ের মতো ব্যয়ও বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। এ সময় গড় মাসিক ব্যয় ১৫ হাজার ৭১৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘বিআইডিএস সম্প্রতি ঢাকা মেট্রো এলাকায় একটি জরিপ করেছে। দারিদ্র্যের হারের ওপর তারা এ গবেষণা করেছে। তাদের ফাইন্ডিংসের সঙ্গে সরকারের পাওয়া তথ্যের খুব বেশি পার্থক্য নেই।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা রাজনীতি করি, তাই আমাদের স্বার্থ আছে। তবে স্বার্থের জন্য এ রকম জরিপ বা গবেষণার তথ্য নিয়ে অনৈতিক কিছু এ সরকার করে না। জেনেশুনে এ সরকার তথ্য নিয়ে কিছু করে না। দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ শুনে প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন। কভিড নিয়ে আমরা যে পাশের দেশের মতো সংকোচন নীতি গ্রহণ করিনি, তাতে আমরা সফলতা পেয়েছি। এছাড়া আমরা সাহসী কৌশল গ্রহণ করেছি এবং ঝুঁকি নিয়েছি। আমরা সম্পূর্ণ লকডাউনে যাইনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘গরিব মানুষের অনেক কিছুতে প্রবেশাধিকারের বৈষম্য রয়েছে। রাষ্ট্রের যেসব সম্পদ আছে যেমন—বিল, বন ও নদীতে গরিব মানুষদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হয়। তাদের এসবের ওপর হক আছে। কিন্তু এগুলো ইজারা দিয়ে আইনগত বৈষম্য তৈরি করা হয়। যেগুলো থাকা উচিত না।’

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন সাত বছর ও এর চেয়ে বেশি বয়সীদের সাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ। ২০১৬ ও ২০১০ সালে ছিল যথাক্রমে ৬৫ দশমিক ৬ ও প্রায় ৫৮ শতাংশ।

এছাড়া প্রতিবেদনে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুবিধায় জনগণের প্রবেশাধিকার বাড়ার তথ্যও উঠে আসে। এতে বলা হয়, দেশে বর্তমান বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী পরিবারের সংখ্যা ৯৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। ছয় বছরে এ হার বেড়েছে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশীয় পয়েন্ট।

একইভাবে উন্নত টয়লেট সুবিধাভোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯২ দশমিক ২১ শতাংশ। নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে ৯৬ দশমিক ১ শতাংশের। জরিপে উঠে এসেছে, খানাগুলোয় খাদ্যদ্রব্যবহির্ভূত ভোগ্যপণ্যের ব্যয় এখন বাড়ছে। আবার ক্যালরি গ্রহণেও লক্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ দৈনিক ২ হাজার ৩৯৩ কিলোক্যালরি, যা ২০১৬ সালে ছিল ২ হাজার ২১০ কিলোক্যালরি।

এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থায় খানাগুলোর অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ক্রমেই বেড়েছে। জরিপের আগের ১২ মাসে অন্তত একজন সদস্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, এমন খানার হার প্রায় ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৬ সালে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘নিঃস্ব পরিবার আমরা এখন আর কোথাও দেখি না। সম্প্রতি ব্র্যাকের আল্ট্রা পুওর কর্মসূচি থেকে আমাদের কাছে একটা কো-অপারেটিভ কাজের জন্য এসেছিল। তারা আমাদের জানিয়েছে যে এ কর্মসূচির জন্য যথেষ্ট মাত্রায় অতি আল্ট্রা পুওর তারা খুঁজে পাচ্ছে না। তারা ৩৯টি জেলায় কাজ করে। এটি থেকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায়, এ জরিপে যে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ অতিদারিদ্র্য পাওয়া গেছে তা সঠিক। অতিদারিদ্র্যও যে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ সেটা মেনে নেব। কারণ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।’

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!