রায়ে সন্তুষ্ট নয় খুলনার ৫ সাংবাদিক পরিবার

  • আপডেট সময় সোমবার, জুন ২৬, ২০২৩
  • 281 পাঠক

————————————————————————————————————

সাংবাদিক পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, পুলিশের দুর্বল তদন্তের জন্য হত্যা মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হয়নি, মূল হোতারাও চিহ্নিত হয়নি।

কারা এবং কেন তাঁদের হত্যা করা হয়েছে, সেটি কেউ জানতে পারেনি।

—————————————————————————————————————–

দিশারী ডেস্ক। সোমবার। ২৬ জুন ২০২৩

—————————————

খুলনায় গত ২০ বছরে পাঁচজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। নিরাপত্তার কারণে এগুলোর বেশির ভাগেরই বাদী হননি পরিবারের কেউ। খুলনায় পাঁচ সাংবাদিককে হত্যার বিচার শেষ হয়েছে। তবে কারা এবং কেন তাঁদের হত্যা করা হয়েছে, সেটি কেউ জানতে পারেনি।

সাংবাদিক পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, পুলিশের দুর্বল তদন্ত প্রতিবেদন ও ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্রের কারণে হত্যা মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হয়নি, মূল হোতাদেরও চিহ্নিত করা যায়নি।

খুলনায় ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নিহত হন দৈনিক সংবাদ–এর সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা। খুলনা প্রেসক্লাবের মাত্র ৫০ গজ দূরে বোমা মেরে মানিক সাহাকে হত্যার দুই দিন পর খুলনা সদর থানার পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছিল। পরে বিস্ফোরক মামলাও দায়ের করে সদর থানা–পুলিশের একজন উপপরিদর্শক (এসআই)। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর আদালত ১১ আসামির ৯ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া মামলার ১০ আসামির সবাই খালাস পান। ওই রায়ে খুলনার সাংবাদিক সমাজ ও নিহত ব্যক্তির পরিবার—কেউই সন্তুষ্ট ছিল না।

ওই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলায় সাক্ষী হাজির করাটা খুবই চ্যালেঞ্জ ছিল। যে ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন পর ওই মামলার রায় হয়েছিল, তা নিয়েই রাষ্ট্রপক্ষকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।’

মানিক সাহার ভাই প্রদীপ সাহা বলেন, মামলার বাদী ছিল রাষ্ট্র। নিরাপত্তার কারণে পরিবারের কেউ মামলার বাদী হননি। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীসহ হত্যার নেপথ্যে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কারও নাম তদন্তে উঠে আসেনি। এ কারণে রায় নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ ছিল না।

আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করেছিলাম। রাষ্ট্রই বাদী; রাষ্ট্রের উচিত আপিল করা। কিন্তু সে রকম কিছু হচ্ছে না।

জাহিদ হোসেন, হুমায়ুন কবিরের ভাই ২০০৪ সালের ২৭ জুন খুলনার দৈনিক জন্মভূমি সম্পাদক হুমায়ুন কবিরকে (বালু) নিজ কার্যালয়ের সামনে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নিরাপত্তার কারণে ওই হত্যা মামলারও বাদী হতে পারেননি পরিবারের কেউ। ২০০৮ সালে সাংবাদিক হুমায়ুন কবির হত্যা মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে সাত আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। ১৬ বছর পর ২০২১ সালে একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা আরেকটি মামলায় পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

সাংবাদিক বালুর ভাই খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এস এম জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই ঘটনায় একই আসামিদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছিল। তার মধ্যে হত্যা মামলায় সবাই খালাস আবার বিস্ফোরক মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন হওয়ায় একটা ধূম্রজালের সৃষ্টি করে। আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করেছিলাম। তা ছাড়া ওই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কারা, এর পেছনে অর্থের জোগানদাতা কারা তা জানা যায়নি। রাষ্ট্রই বাদী; রাষ্ট্রের উচিত আপিল করা। কিন্তু সে রকম কিছু হচ্ছে না।’

২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে খুলনা প্রেসক্লাব চত্বরে বোমা হামলায় আহত হন দৈনিক সংগ্রাম-এর শেখ বেলাল উদ্দিন। পরে ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খুলনা সদর থানার একজন এসআই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে দুটি মামলা করেন। ২০০৭ সালে খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায়ে আদালত তিনজন চরমপন্থী নেতাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এদিকে বিস্ফোরক অংশের মামলায় ওই আসামিদের একই সাজা দেওয়া হয়।

বেলাল উদ্দিনের ভাই সাংবাদিক শেখ শামসুদ্দোহা বলেন, ‘মামলার বাদী ছিল রাষ্ট্রপক্ষ। উচ্চ আদালতে গেলেও সঠিক বিচার পাওয়া যাবে না, তাই আমরা আর বিচার চাইনি।’

এর আগে ২০০২ সালের ২ মার্চ খুলনায় দৈনিক পূর্বাঞ্চল–এর প্রতিবেদক হারুন-অর রশীদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কর্মস্থলে আসার পথে খুলনা নগরের মুজগুন্নী নেছারিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি খুন হন। খুনের ঘটনার পরদিন নিহত সাংবাদিকের শ্যালক মিস্টার মোড়ল বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে খালিশপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তক্রমে ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে এটা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। চার বছর পর ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে অভিযুক্ত সব আসামি খালাস পান।

হারুন-অর রশীদের ছেলে সাগর ইকবাল বলেন, ‘হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীরা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছে। তাদের নাম অভিযোগপত্রেই আসেনি। আবার অনেকের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়ে গেছে।’

এর আগে ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে ডুমুরিয়া এলাকায় দৈনিক অনির্বাণ-এর উপজেলা প্রতিনিধি নহর আলীকে ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে সন্ত্রাসীরা। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

নহর হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ উত্থাপন করতে না পারায় রায়ে সব আসামি খালাস পান।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!