সমাজে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে ?

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১০, ২০২৩
  • 229 পাঠক

দিশারী ডেস্ক। ১০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

যে কোনো সমাজের রীতিনীতি, মনোভাব এবং সমাজের অন্যান্য অনুমোদিত ব্যবহারের সমন্বয়ে মানুষের মধ্যে স্নেহ, মায়া–মমতা, সততা, সম্প্রীতি প্রভৃতি সৃষ্টি হয়। এমন হলে সেখানে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বিদ্যমান আছে বলে মনে হয়।

নৈতিক আদর্শসংবলিত সমাজে কোনো অনাচার থাকবে না। ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, শোষণ, স্বার্থপরতা–এসব কুপ্রবৃত্তি থেকে সমাজ মুক্ত থাকলেই তখন নৈতিকতার আদর্শ প্রতিফলিত হয়। সব ধরনের দুর্নীতি থেকে মুক্ত জীবনই আদর্শ জীবন। ন্যায়নীতি থেকে বিচ্যুত জীবন কখনোই আদর্শরূপে গণ্য হতে পারে না।

কিন্তু যেদিকে তাকাই, সব দিকে হীন তৎপরতা। ক্ষমতাবানরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিত্ত–বৈভবের পাহাড় গড়ছেন। বিদেশে ব্যবসা–বাণিজ্য করছেন, সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন, বাড়ি বানাচ্ছেন, চিকিৎসকরা মানব সেবার নামে অনৈতিক বাণিজ্য করছেন। ব্যবসায়ীরা ভেজাল দিচ্ছেন, তাদের একমাত্র লক্ষ্য মুনাফা লাভ, তারা সামাজিক দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যাচ্ছেন। সুস্থ সমাজ ও মানবিকতার কি কোনো লক্ষণ বা প্রমাণ এর দ্বারা আমরা আশা করতে পারি ? সুস্থ এবং অসুস্থ, মানবিক এবং অমানবিক, ন্যায় এবং অন্যায় –এ পার্থক্য আর রইল কোথায় ? তবে কি মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের সংখ্যা দিন দিন এভাবে বাড়ছে ?

সমাজের শিশুরা নিরপরাধ হয়েও রক্ষা নেই। অস্বীকারের জো নেই, দেশে অবকাঠামোগত ও বুনিয়াদি আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র ব্যাপক। কিন্তু কোথায় যেন গলদ রয়ে গেছে। তা না হলে, এত অবক্ষয় কেন? এমনতো নয়, ধর্মীয় সম্প্রদায়গত বা গোষ্ঠীগত কারণে সমাজে বিভেদ–বিভাজন, অনাচার, অন্যায় বাড়ছে বা ঘটছে।

আমরা যখন সংবাদপত্র আর টিভি চ্যানেলে চোখ রাখি, তখন দেখতে পাই শিশু অপহরণ, গুম–খুনের মত নির্মম ও নির্দয় প্রতিবেদন বা সংবাদ। ভেবে আশ্চর্য হই, এ কোন্‌ সমাজে আমরা বসবাস করছি, যেখানে একে অপরের দুঃখ–ব্যথায় সমব্যথী হওয়ার কথা, সেখানে আত্মীয় তার আত্মীয়ের, বন্ধু তার বন্ধুর, প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর চরম সর্বনাশ করতে সদা সচেষ্ট! সামান্য স্বার্থ আর লোভের কারণে নিষ্পাপ, নিরপরাধ শিশুর জীবন হরণে যাদের হৃদয় কাঁপে না! সংঘটিত এসব অন্যায় অমানবিকতা আমাদের সামাজিক সম্পর্ক বন্ধন কতটা শিথিল করছে–তা ভাববার সময় এসেছে।

আমরা জানি, মানব জীবন যথার্থ সৌন্দর্যময় ও সাফল্যমণ্ডিত হয় তার নৈতিক মূল্যবোধের প্রতিচ্ছায়ায়। মানুষের জীবনের সাধনা হচ্ছে মনুষ্যত্ব অর্জনের চেষ্টা। মনুষ্যত্বের সঙ্গে নৈতিকতার সম্পর্ক বিদ্যমান। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আদর্শবাদিতা প্রভৃতি মহৎ গুণের সমাবেশেই নৈতিকতার স্বরূপ উদ্ভাসিত হয়। মনুষ্যত্বের ঔচিত্য–অনৌচিত্য নির্ধারণের মানদণ্ড নির্ণয় হয় নৈতিক মূল্যবোধের মাপকাঠিতে।

মানুষের যেসব আচার–আচরণকে ভালো বলে বিবেচনা করা হয়, যেসব কাজ করে সুফল পাওয়া যায়, যেগুলো জাতি–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে মানবসমাজে প্রচলিত প্রথা ও রীতি, সেগুলোকেই ভালো বলে গ্রহণ করতে হবে। গতানুগতিক গোত্রীয় রীতিনীতির ওপর এসব সামাজিক ব্যবস্থার আওতায় নৈতিক মানদণ্ডসমূহ প্রতিষ্ঠিত। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত গোত্রীয় প্রথার ভিত্তিতেই মানবজীবনের আদর্শ বিবেচিত হয় এবং সেই উত্তম আদর্শ দ্বারাই পরিচালিত হয় সভ্য মানুষের জীবনাচরণ।

মানুষ যত দিন বিবেকবান হয়ে এ ধরনের নীতি–আদর্শকে সমুন্নত রাখে, তত দিন মনুষ্যত্বের গৌরব বিকশিত হয়। সার্থক মানুষ ও সুন্দর সমাজ গঠনে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক মূল্যবোধ হচ্ছে সততা, বিশ্বস্ততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়নীতি, শিষ্টাচার, ধৈর্য–সহিষ্ণুতা, মায়া–মমতা, ক্ষমা, উদারতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, সদাচরণ প্রভৃতি সুকুমার বৃত্তি বা মানবীয় গুণাবলির সমষ্টি। সেই মূল্যবোধের অবক্ষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতির রয়েছে বড় ভূমিকা। দুটি দিক রয়েছেু একটি ভালো দিক, আরেকটি খারাপ দিক।

কিশোর–কিশোরী, তরুণ–তরুণীরা প্রায় ক্ষেত্রেই এখন আকাশ সংস্কৃতি ও মোবাইল প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। দুর্ভাগ্যবশত, সুস্থ ধারার বা সামাজিক শিক্ষণীয় সাহিত্যকর্ম বা অনুষ্ঠানমালা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রচার ও চর্চার বাইরে থেকে যাচ্ছে অথবা অভিভাবকরা এ দিকটা খেয়াল করছেন না। একটি দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ যতই মজবুত, প্রবৃদ্ধির হার যতই ঊর্ধ্বগামী হোক না কেন, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে সব অগ্রগতিই মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। তাই নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!