মো. আমিনুল ইসলাম। ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
সরকারি সম্পদ চুরি মহাপাপ। বদরের যুদ্ধের পর যুদ্ধলব্ধ একটি চাদর খোয়া যায়। কেউ কেউ বলল হয়তো সেটি রসুল (সা.) নিয়ে থাকবেন। (তিরমিজি ৩০০৯, আবু দাউদ ৩৯৭১)। এসব কথা যারা বলত তারা যদি মোনাফেক হয়ে থাকে, তবে তাতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। আর তা কোনো অবুঝ মুসলমানের পক্ষে বলাও অসম্ভব নয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন, কোনো নবীর পক্ষেই খেয়ানত করা সম্ভব নয়, তবে মানুষের মধ্যে কেউ যদি খেয়ানত করে তাহলে কেয়ামতের দিন সে ব্যক্তি তার খেয়ানতের সেই বস্তুসহ হাজির হবে। এরপর প্রত্যেককে যা সে অর্জন করেছে তা পূর্ণমাত্রায় দেয়া হবে। তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৬১)।
সরকারি সম্পদ থেকে কোনো কিছু আত্মসাৎ বা চুরি খেয়ানত অপেক্ষা বেশি পাপের কাজ। কারণ এ সম্পদের সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সংযুক্ত। কাজেই যে লোক এ সম্পদ চুরি করবে সে সাধারণ মানুষের সম্পদ চুরি করছে যা তাকে পাপের ভাগীদার করছে। কখনো যদি তার মনে এ সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য শুভবুদ্ধির উদয় হয় বা ক্ষমা চাওয়ার ইচ্ছা জাগে তাহলে তা হবে অত্যন্ত দুরুহের কাজ।
সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের ব্যাপারটি অন্যান্য চুরি অপেক্ষা কঠিন পাপ হওয়ার অন্যতম কারণ এই, হাশরের ময়দানে যেখানে সমগ্র সৃষ্টি সমবেত হবে এবং সবার সামনে তাকে সেখানে এমনভাবে লাঞ্ছিত করা হবে যে চুরি করা বস্তুগুলো তার কাঁধে চাপানো হবে।
রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ দেখো, কেয়ামতের দিন কারও কাঁধে একটি উট চাপানো অবস্থায় থাকবে এবং ঘোষণা করা হবে যে, এ লোক গনিমতের মালের উট চুরি করেছিল, এমন যেন না হয়। যদি সেই লোক আমার শাফায়াত কামনা করে তবে আমি তাকে পরিষ্কার ভাষায় জবাব দিয়ে দেব যে, আমি আল্লাহর যা কিছু নির্দেশ পেয়েছিলাম তা সবই পৌঁছে দিয়েছিলাম, এখন আমি কিছুই করতে পারব না।’ (বুখারি ৩০৭৩)।
এই যে মানুষ মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণে টাকাপয়সা দান করে, এ দানের অর্থ কেউ যদি তছরুপ করে সেটাও খেয়ানতের শামিল। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্ত হাদিয়া বা উপঢৌকন গলুলের শামিল।’ (মুসনাদে আহমদ, ৫/৪২৪)।
গলুলের অর্থ সরকারি সম্পত্তি থেকে কোনো কিছু গোপন করা বা চুরি। আজকে যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করছে, এ সম্পদই কেয়ামতের দিন তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।
রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমি দখল করবে, কেয়ামতের দিন সাত স্তবক জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)। আল্লাহ বলেন, ‘ অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতগুলো তাদের যথার্থ মালিকের কাছে সোপর্দ করে দেবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত ৫৮)।
আল্লাহ আরও বলেন, ‘ আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থসম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং মানুষের ধনসম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে পেশ কোরো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৮)।
আমাদের সমাজে মানুষ জেনেও রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করে ফায়দা লোটে, অন্যের বা গরিবের সম্পদ লুট করে। তাকে প্যাঁচে ফেলে মামলা দিয়ে সম্পদ গ্রাস করে যা শরিয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে সম্পদ আত্মসাৎকারীর পাপের ভাগীদার হওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। আল্লাহর কাছে তা তার জন্য হারাম বলেই বিবেচিত হবে।
রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিক জনগণ। তার সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের নৈতিক দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের।
রসুল (সা.) বলেন, ‘ তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারি)। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, জমি, বন, পাহাড় যা কিছু আছে তার অপচয় কিংবা দখল সম্পূর্ণ বেআইনি। এর জন্য পবিত্র কোরআনে সতর্কবাণী বিবৃত হয়েছে। আল্লাহর রসুল (সা.)ও আমাদের সতর্ক করেছেন।
সুতরাং আমরা যেন রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ না করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।
Leave a Reply