রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে রমজান কাটাতেন

  • আপডেট সময় শনিবার, মার্চ ১৬, ২০২৪
  • 106 পাঠক

মিরাজ রহমান ।১৫ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

বারো মাসের শ্রেষ্ঠ মাস রমজান। এ মাসে মুসলমানদের ওপর রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ নিজে রোজার প্রতিদান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রোজার প্রতিদান পেতে সঠিক পদ্ধতিতে রোজা পালন করতে হবে। তাই জানতে হবে রাসুলুল্লাহ (সা.) কীভাবে রমজান যাপন করেছেন, কখন কীভাবে কী কী আমল করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রমজানের আমল ও দিন-রাত যাপনের বিষয়াবলি তুলে ধরা হলো।

যেভাবে নিয়ত করতেন

হাফসা (রা.) বলেন, ‘ রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে রোজার নিয়ত সাহরি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ ফজরের আগেই করতেন।’ (আবু দাউদ, ২৪০৪)।

যখন, যেভাবে সাহরি করতেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণ খাবার দিয়ে সাহরি করতেন। ঘরে যখন যা উপস্থিত থাকত, তা দিয়ে সাহরি সেরে নিতেন। বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, তাঁর খাদ্য তালিকায় সাধারণত গোশত, রুটি, জায়তুন বা তার তেল, খেজুর, দুধ ও মধু থাকত। তিনি অন্য সব সময়ের মতো সাহরিতেও খেজুর খেতেন।

আনাস (রা.) বলেন, “ সাহরির সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ আমি রোজা রাখব, খাবার দাও।’ আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে খেজুর ও পানি পরিবেশন করলাম।” অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মুমিনের উত্তম সাহরি শুকনো খেজুর।’ (আবু দাউদ, ২৩৪৫) ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ তোমরা সাহরি গ্রহণ করো এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও, একটি খেজুর দিয়ে হলেও, আঙুরের কিছু দানা দিয়ে হলেও। নিশ্চয়ই ফেরেশতারা তোমাদের জন্য শান্তির দোয়া করবেন।’ (জামে সুয়ুতি, ৫০৭০)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) দেরিতে সাহরি খেতে পছন্দ করতেন। জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বলেন, ‘ আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাহরি গ্রহণ করি। অতঃপর তিনি নামাজের জন্য দাঁড়ান। আমি বললাম, আজান ও সাহরির মাঝে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিল ?

তিনি বলেন, ৫০ আয়াত তথা ৫০ আয়াত তেলাওয়াত করতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন হয়।’ (বুখারি, ১৯২১) সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময় সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব। তবে সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার আগেই খেতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ সব নবিকে তাড়াতাড়ি ইফতার করতে এবং বিলম্বে সাহরি খেতে আদেশ করা হয়েছে।’ (আল-মুয়জামুল আওসাত, ২/৫২৬)।

যখন, যেভাবে ইফতার করতেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে সময় হলে দ্রুত ইফতার করে নিতেন। (বুখারি, ১৯৫৭) আবু আতিয়া বলেন, “আমি এবং মাসরুক আয়েশা (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। মাসরুক তাকে বলল, ‘ মুহাম্মাদ (সা.)-এর দুই সাহাবির একজন মাগরিব ও ইফতার উভয়টিতে বিলম্ব করে, অপরজন দ্রুত মাগরিব ও ইফতার করে।

আয়েশা বললেন, ‘ কে মাগরিব ও ইফতার দ্রুত করে ? তাকে বলা হলো, আব্দুল্লাহ। তিনি উত্তর দিলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবেই রোজা পালন করতেন।” (মুসলিম, ১০৯৯) ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ভেজা বা শুকনো খেজুর অথবা পানি দিয়ে ইফতার করতেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘ রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ আদায়ের আগে কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, যদি ভেজা খেজুর না থাকত, তবে সাধারণ শুকনো খেজুরই গ্রহণ করতেন। যদি তাও না থাকত, তবে কয়েক ঢোক পানিই হতো তার ইফতার।’ (তিরমিজি, ৬৯৬)।

রোজাদার যেকোনো হালাল খাদ্য দিয়ে ইফতার করতে পারবে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অভ্যাস ছিল খেজুর দিয়ে ইফতার করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না থাকলে পানি দিয়ে ; নিশ্চয়ই পানি পবিত্র।’ (আলফিয়াতুল হাদিস, ৫৬২)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ যখন তোমাদের মধ্যে কেউ রোজায় ইফতার করে, সে যেন খেজুর কিংবা খোরমা দিয়ে ইফতার করে। কারণ তা হচ্ছে বরকত। আর তা না থাকলে পানি দিয়ে করবে, তা পবিত্র।’ (তিরমিজি, ৬৯৫)।

এ ছাড়া বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, বার্লি, খেজুর, ডুমুর, আঙুর, মধু, তরমুজ, দুধ, মাশরুম, জয়তুনের তেল, ডালিম বা বেদানা, লাউ, কিশমিশ, জলপাই, সামুদ্রিক মাছ, ভিনেগার, পনির ও পানি—এ জাতীয় খাবারগুলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় ছিল। তিনি এসব খাবার আগ্রহভরে খেতেন। সাধারণ খাবার হিসেবে ইফতারিতেও এর কোনো না কোনো একটা থাকত। (শামায়েলে তিরমিজি, ৬৮)।

যেভাবে তারাবি পড়তেন

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘ রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে বেশি নামাজ পড়ার প্রতি উৎসাহিত করতেন। তবে তিনি তা অপরিহার্য করেননি। তিনি বলতেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় নামাজ আদায় করবে; তার আগের গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম, ১/২৫৯)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়েননি। আয়েশা (রা.) বলেন, “ রাসুলুল্লাহ (সা.) এক রাতে মসজিদে তারাবি পড়লেন। সাহাবিরাও তার সঙ্গে নামাজে শামিল হলেন। দ্বিতীয় রাতে মুসল্লির সংখ্যা আরও বেড়ে গেল। এরপর তৃতীয় বা চতুর্থ রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবির জন্য বের হলেন না। সকালে সবাইকে লক্ষ করে বললেন, ‘ আমি তোমাদের আগ্রহ ও উপস্থিতি লক্ষ করেছি। আশঙ্কা করছিলাম, এ নামাজ তোমাদের ওপর ফরজ হয়ে যাবে। (যা নিয়মিত পালন তোমাদের জন্য কষ্টকর হবে)। এ আশঙ্কায় আমি তোমাদের কাছে আসিনি।” (মুসলিম, ৭৬১) ।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবি ও বিতর পড়তেন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৭৬৯২)।

যেভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতেন

রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআনের চর্চার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। অধিক পরিমাণ তেলাওয়াত করতেন এবং সাহাবিদের কোরআন শিক্ষা দিতেন। প্রতি রমজানে তিনি ও জিবরাইল (আ.) পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘ রমজান মাসের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে হাজির হতেন এবং তাঁরা উভয়েই কোরআন তেলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন।’ (বুখারি, ১৮০৩)।

ফাতেমা (রা.) বলেন, ‘ তাঁর পিতা তাকে বলেছেন, প্রতি রমজানে জিবরাইলকে (আ.) তিনি একবার কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। আর মৃত্যুর বছর তিনি তাকে দুবার কোরআন শোনান।’ (মুসনাদে আহমাদ, ২৪৯৪)।

যেসব বাড়তি আমল করতেন

রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশ কিছু বাড়তি আমল করতেন। যেমন—কোরআন তেলাওয়াত ; দান-খয়রাত ; তাওবা-ইসতেগফার ও জিকির-আজকার ; জান্নাতপ্রাপ্তির দোয়া ; জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রার্থনা ; তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় ; কল্যাণকর কাজ ; ইতেকাফ ; লাইলাতুল কদর তালাশ এবং ফিতরা দেয়াসহ আরও বিভিন্ন নেক আমলে কাটত তাঁর প্রতিটি রমজানের প্রতি মুহূর্ত।

বেশি বেশি দোয়া করতেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ তিন শ্রেণির ব্যক্তির দোয়া সর্বাধিক কবুল করা হয় ; রোজাদারের দোয়া, নিপীড়িতের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।’ (বাইহাকি, ৭২০৫)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘ অবশ্যই আল্লাহতায়ালা রমজান মাসের প্রতি দিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, ৭৪৫০)।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, রমজানে বেশ কিছু সময় দোয়া কবুল হয়। সেগুলো হলো—ইফতারের আগে। (ইবনে মাজাহ, ১৭৫২)। রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। (বুখারি, ১১৪৫)।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে যা করতেন

রমজানে রোজাবস্থায় তাপমাত্রা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেলে রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো কখনো শাররিক শীতলতার জন্য মাথায় বা শরীরে পানি দিতেন। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছতেন। আবু বকর ইবনে আব্দুর রহমান (রহ.) এক সাহাবির বরাতে বলেন, ‘ মক্কা বিজয়ের বছর এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.) লোকদের প্রতি রোজা ভঙ্গের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, দুশমনের মোকাবিলায় তোমরা শক্তি সঞ্চয় করো। অবশ্য রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে রোজা রেখেছেন।

আবু বকর (রহ.) বলেন, হাদিস বর্ণনাকারী বলেছেন, ‘ আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ‘আলআর্জ’ নামক স্থানে পিপাসার কারণে বা গরমের তীব্রতায় রোজা অবস্থায় তাঁর মাথায় পানি ঢালতে দেখেছি।’ (আবু দাউদ, ২৩৬৫)।

যেভাবে ভ্রমণ করতেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে সফর করতেন; সফরে তিনি কখনো কখনো রোজা পালন করতেন, কখনো ত্যাগ করতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘ রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে রোজা অবস্থায় সফরে বের হলেন, পথে ‘উসফান’ নামক এলাকায় পৌঁছে পানপাত্র আনার নির্দেশ দিলেন। লোকদের দেখানোর জন্য তিনি প্রকাশ্যেই পানি পান করলেন। মক্কায় পৌঁছা অবধি তিনি পানাহার বজায় রাখলেন।’

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ইবনে আব্বাস বলেন, ‘ রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে সফররত অবস্থায় রোজা পালন করেছেন এবং ভঙ্গও করেছেন।’ (বুখারি, ৪২৮৯)।

স্ত্রীদের সঙ্গে যেমন আচরণ করতেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে স্ত্রীদের ইবাদত-আমল শিক্ষা দিতেন। (তিরমিজি, ৩৫১৩) রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিবারের সদস্যদের রমজানে ইবাদত-আমলের প্রতি বেশ তাগিদ দিতেন। জয়নব বিনতে উম্মে সালামা (রা.) বলেন, ‘ যখন মাসের মাত্র ১০ দিন অবশিষ্ট থাকত, তখন পরিবারের সক্ষম সবাইকে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত্রি জাগরণ করাতেন।’ (বুখারি, ৬২২) ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্মিলিতভাবে তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে ইবাদত পালন করতেন। রমজানের কোনো কোনো রাতে স্ত্রীদের নিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করতেন।

আবু জর (রা.) বলেন, ‘ তিনি মাসের তিন দিন অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন না, তৃতীয় দিন আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। ডেকে নিলেন তার পরিবার ও স্ত্রীদের। এত দীর্ঘসময় আমাদের নিয়ে রাত্রি জাগরণ করলেন—আমাদের সাহরির সময় অতিক্রান্তের ভয় হলো।’ (আবু দাউদ, ১৩৭৫)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের তাঁর সঙ্গে ইতেকাফ পালনের অনুমতি দিয়েছিলেন। আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষ ১০ দিনে ইতেকাফের কথা উল্লেখ করলেন। আয়েশা (রা.) অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দিলেন।’ (বুখারি, ২০৪১)।
স্ত্রীদের সঙ্গে তিনি খুবই বন্ধুসুলভ আচরণ করতেন। রোজা অবস্থাতেও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের চুমো খেয়েছেন।

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ রাসুলুল্লাহ (সা.) চুম্বনের জন্য আমার কাছে ঝুঁকে এলে বললাম, আমি তো রোজাদার। তিনি বললেন, আমিও রোজাদার। আয়েশা বলেন, অতঃপর তিনি ঝুঁকে এসে আমাকে চুম্বন করলেন।’ (মুসলিম, ১১০৭) তবে যদি চুমো দিতে গিয়ে কারও অন্তরঙ্গ মেলামেশার আশঙ্কা হয়, তবে চুমো না দেয়াই ভালো। কারণ রোজা অবস্থায় সহবাস নিষেধ। এতে রোজা ভেঙে যায়। কাফফারা আবশ্যক হয়।

এ ছাড়া ইবনুল আম্মাদ (রহ.) বলেন, ‘ হিজরি তৃতীয় বর্ষের রমজান মাসের রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) যথাক্রমে হাফসা, জয়নব বিনতে জাহাশ এবং জয়নব বিনতে খুজাইমা (রা.)-এর সঙ্গে রাত যাপন করেন।’ (শাজারাতুজ জাহাব ফি আখবারি মান জাহাব, ১/১১৯)।

যেভাবে ইতেকাফ করতেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে ইতেকাফ করতেন। একান্ত কিছু সময় যাপন করতেন আল্লাহর সান্নিধ্যে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল।’ (বুখারি, ২০৪১)।

যেভাবে লাইলাতুল কদর তালাশ করতেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল কদর তালাশ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতেকাফ করলাম। এরপর ইতেকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিনে। অতঃপর অহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হলো—তা শেষ দশ দিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতেকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতেকাফ করে।’ (মুসলিম, ১১৬৭)।

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের সন্ধানে ইতেকাফ করতেন।’ (মুসলিম, ২৬৭১)।

যেভাবে সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন

হাদিসে সদকাতুল ফিতর আদায়ের বিশেষ পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। দুটি মাপকাঠি দ্বারা আদায় করতে হবে। তা হলো—১. আধা সা (১ কেজি ৬৫০ গ্রাম) গম বা যব বা তার সমমূল্য অর্থ। ২. এক সা (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) খেজুর, কিশমিশ, পনির ও যব বা তার সমমূল্য অর্থ। যব, খেজুর, পনির ও কিশমিশ দ্বারা আদায় করলে এক সা এবং গম দ্বারা আদায় করলে আধা সা প্রযোজ্য হবে।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘ আমরা সদকায়ে ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্য দ্বারা অথবা এক সা যব অথবা এক সা খেজুর, কিংবা এক সা পনির বা এক সা কিশমিশ দ্বারা। আর এক সা এর ওজন ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুযায়ী।’ (মুয়াত্তা মালেক, ১২৪) সাহাবায়ে কেরাম সাধারণত খেজুর দ্বারাই সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সারা জীবন খেজুর দ্বারাই সদকাতুল ফিতর আদায় করেছেন। তিনি একবার মাত্র যব দ্বারা আদায় করেছেন।’ (আল ইসতিজকার, ৫৯০)।

ঈদুল ফিতরের দিন ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব হয়। কাজেই সেদিন ভোরের আগে যে জন্ম নিয়েছে, সে যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়—তাকেও এই সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। কেউ যদি সেদিন ভোরের আগে মারা যায়, তার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়।

লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!