যেসব উপায়ে মহানবী (সা.) উপার্জন করতেন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
  • 97 পাঠক

আমজাদ ইউনুস ।২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

বিভিন্ন ইসলামী গ্রন্থ ও নবীজীবনীতে নবীজির দারিদ্র্যের দিকটি নিয়ে অনেক আলোচনা দেখা যায়। তাঁর সম্পদের পরিমাণ এবং আয়ের উৎস নিয়ে তেমন সামগ্রিক আলোচনা কম রয়েছে। অথচ কোরআনের ভাষ্য মতে, নবী (সা.) ধনশালী ছিলেন।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, তিনি আপনাকে পেলেন নিঃস্ব অবস্থায়, অতঃপর অভাবমুক্ত করলেন।(সুরা : দুহা, আয়াত : ৮)
নবী (সা.) ধনশালী হওয়া সত্ত্বেও সম্পদের প্রতি তাঁর মোহ ছিল না। পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছদের বেলায় অতিমাত্রায় বিলাসিতা ও শৌখিনতা পছন্দ করতেন না। তিনি ছিলেন মিতব্যয়ী ও মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। মহানবী (সা.) চাটাইয়ে বসতেন এবং শুতেন।

তিনি বিলাসপরায়ণ ছিলেন না। নবুয়ত লাভের আগে থেকেই রাসুল (সা.) গরিব ও অসহায়দের সাহায্য করতেন। অতিথিদের আপ্যায়ন করতেন। মেহমানদের আপ্যায়ন করা, গরিব ও অসহায়দের সাহায্য করা ধনশালী না হলে সম্ভব নয়।

খাদিজাহ (রা.) বলেন, ‘ কক্ষনো না। আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে কখনোই লাঞ্ছিত করবেন না। কেননা, আপনি তো আত্মীয়তার বন্ধন জুড়ে রাখেন, সত্য কথা বলেন, অনাথ ও অক্ষমদের বোঝা বহন করেন, মেহমানদের মেহমানদারি করেন এবং হকের পথে আসা যাবতীয় বিপদে সাহায্য করেন।’ (সহিহ বুখারি)
আন্দালুসীয় ফকিহরা রাসুলকে দারিদ্র্যের গুণে গুণান্বিত করতে নিষেধ করেছেন।

তাঁরা এটিকে তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্য অপমান বলে মনে করেন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেন। (আশ শিফা ফি হুকুকিল মুস্তাফা)

নিচে নবীজির কয়েকটি আয়ের উৎস তুলে ধরা হলো।

১. মজুর

প্রত্যেক নবী-রাসুলই কোনো না কোনো পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সব নবী-রাসুল ছাগল-ভেড়া চরাতেন। ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) শৈশবে তাঁর চাচাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে ছাগল চরিয়েছেন। শৈশবে তিনি মেষ বা বকরি চরিয়ে উপার্জন করেছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো নবী পাঠাননি, যিনি ছাগল (মেষ) না চরিয়েছেন। তখন সাহাবিরা জানতে চাইলেন, আপনিও? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি কয়েক কিরাতের (মুদ্রার নির্দিষ্ট পরিমাণ) বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল (মেষ) চরাতাম। (সহিহ বুখারি)

২. ব্যবসা

চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে নবী (সা.) ব্যবসা-বাণিজ্যের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। শৈশবেই চাচার সঙ্গীরূপে ইয়েমেন ও শামে বাণিজ্য সফরেও যাতায়াত করলেন। যৌবনে পদার্পণ করে কোরাইশের অন্য যুবকদের মতো ব্যবসা-বাণিজ্যকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নবুয়ত লাভ করার আগে নবীজি (সা.) মুদারাবার ভিত্তিতে ব্যবসা করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে সায়েব (রা.)-এর সঙ্গে শেয়ারে ব্যবসা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সায়েব (রা.) বলেন, আমি জাহেলিয়াতের যুগে নবীজির ব্যবসার শেয়ার ছিলাম। আমি যখন মদিনায় গেলাম তখন নবীজি (সা.) বললেন, আমাকে চেনো? বললাম, কেন চিনব না? আপনি তো আমার অনেক ভালো ব্যবসার অংশীদার ছিলেন। না কোনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করতেন, না কোনো কিছুতে ঝগড়া করতেন! (উসদুল গাবাহ)

৩. উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত সম্পত্তি

সিরাতের বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, নবী (সা.) তাঁর মাতা-পিতা এবং তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে অনেক সম্পত্তি পেয়েছেন। তাঁর পিতা আবদুল্লাহ থেকে উম্মে আইমান নামের এক দাসী, পাঁচটি উট এবং এক পাল ভেড়া পেয়েছেন। মক্কায় নবী (সা.) শিআবে বনি আলী উপত্যকায় যে ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন, তিনি তাঁর মা আমিনা বিনতে ওয়াহবের কাছ থেকে সে ঘরটি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন।

মক্কায় সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে, আত্তারিন মার্কেটের পেছনে খাদিজা (রা.)-এর ঘরটিও তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন। যায়েদ বিন হারিসা ও খাদিজা (রা.) নবীজিকে উপহার দিয়েছিলেন। (আল-আহকামুস সুলতানিয়া)

৪. গনিমত ও আনফালের এক-পঞ্চমাংশ

যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রু পক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত মালকে গনিমত বলে। ‘গনিমত’ বা ‘খুমস’ অথবা এক-পঞ্চমাংশ কর যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যসামগ্রী থেকে গ্রহণ করা হতো। গনিমত লুণ্ঠিত দ্রব্যাদিকে বোঝায় এবং বিজিতরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যেসব সম্পদ আহরণ করত তার এক-পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে প্রদান করে অবশিষ্ট চার-পঞ্চমাংশ সৈনিকরা নিজেরা বণ্টন করে নিতেন।

এক-পঞ্চমাংশ সম্পদের মধ্যে নবী (সা.) ও তাঁর পরিবারবর্গ ও অনাথদের ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করা হতো।

মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ করে মুসলমানরা যে গনিমত ও আনফাল লাভ করেছিল তা ছিল আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সম্পদের অন্যতম উৎস।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘ তোমরা জেনে রেখো যে যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করো তার এক-পঞ্চমাংশ হচ্ছে আল্লাহ, তাঁর রাসুল, রাসুলের আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য, যদি তোমরা আল্লাহর ওপর আর চূড়ান্ত ফায়সালার দিন- অর্থাৎ দুই পক্ষের (মুসলমান ও কাফির বাহিনীর) মিলিত হওয়ার দিন- আমি যা আমার বান্দার ওপর অবতীর্ণ করেছিলাম তার ওপর বিশ্বাস করে থাকো। আর আল্লাহ হলেন সব বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।’ সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪১

৫. ফাই

মুসলিমরা যুদ্ধ ছাড়াই কাফিরদের যেসব সম্পদ লাভ করত তাকে ‘ফাই’ বলা হতো। ফাই রাসুলের জন্য মহান আল্লাহ প্রদত্ত আয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল। রাসুল (সা.) এই আয় থেকে দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণ করতেন। পথিক বা মুসাফিরের জন্য ব্যয় করতেন। পাশাপাশি পরিবার, গরিব মুহাজির ও মুসলিমদের সার্বিক কল্যাণের জন্য ব্যয় করতেন।

মালিক ইবনু আওস ইবনুল হাদাসান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর (রা.) নিজের বক্তব্যের অনুকূলে যুক্তি পেশ করে বললেন, শুধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ফাইয়ের সম্পদে তিনটি বিশেষ অংশ ছিল, বনু নাজির, খায়বার ও ফাদাক। বনু নাজির এলাকা থেকে প্রাপ্ত আয় দৈনন্দিনের প্রয়োজন পূরণে ব্যয় করা হতো। ফাদাক থেকে অর্জিত আয় পথিকদের জন্য ব্যয় করা হতো।

খায়বার এলাকার আয়কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন ভাগে ভাগ করেছেন। দুই অংশ মুসলিমদের সার্বিক কল্যাণে ব্যয় করা হতো এবং অপর অংশ দ্বারা তাঁর পরিবারের ব্যয়ভার বহন করা হতো। আর অবশিষ্ট অংশ গরিব মুহাজিরদের মধ্যে বণ্টন করা হতো। (আবু দাউদ)

সম্পাদক ও অনুবাদক সুকুন পাবলিশিং।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!