মানুষ যখন ঘুমায়, কান তখন খোলা থাকে। অর্থাৎ কানের ভেতর দিয়ে শব্দ পৌঁছুতে পারে মস্তিষ্ক পর্যন্ত। তবু স্বাভাবিক শব্দ আমরা শুনতে পাই না। শুধু মানুষ কেন, সব প্রাণীর ক্ষেত্রেই কথাটা প্রযোজ্য।
এখন প্রশ্ন ঘুমালে কেন কোনো শব্দ শুনতে পাই না।
———————————————————————
আবদুল গাফফার রনি
২৬ অক্টোবর, ২০২৪
———————————————————————
মানুষের ঘুমের দুটি পর্যায় রয়েছে। একটা হলো রেম বা র্যাপিড আই মুভমেন্ট পর্যায়। অন্যটা হলো নন-রেম।
রেম পর্যায়ে মস্তিুষ্ক বেশ সক্রিয় থাকে। কিন্তু এ সময় শরীরের বাইরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো মোটামুটি অকেজো হয়ে যায়।
অর্থাৎ মস্তিষ্কর বিভিন্ন অংশ—যেগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে–সেগুলো মোটামুটি বিশ্রামে থাকে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের যে অংশ, সেগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে।
তাই বাহ্যিক শারীরিক ক্রিয়াকলাপও বন্ধ থাকে। যদিও ঘুমের সব পর্যায়েই হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, অন্ত্র, বিপাক প্রক্রিয়া—এসব কর্মকাণ্ড সচল থাকে। অর্থাৎ রেম পর্যায়ে কানের সক্রিয়তায় মোটমুটি বন্ধ থাকে, তাই বন্ধ থাকে শ্রবণক্রিয়াও।
অন্যদিকে নন-রেম হলো গভীর ঘুমের পর্যায়। এ সময় শ্বাস-প্রস্বাস, বিপাক, রক্ত-সঞ্চালন প্রক্রিয়া ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ ছাড়া সব ধরনের শারিরিক সক্রিয়তা বন্ধ থাকে। তাই এই পর্যায়েও আমরা কানে শুনতে পারি না।
মার্কিন নিউরোসায়েন্টিস্ট স্যামুয়েল ওয়েইনস্টাইর দীর্ঘদিন ঘুম নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর মতে, ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে কাজ করে যাতে বাইরের শব্দগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া না হয়। ঘুমের গভীর স্তরে প্রবেশ করলে মস্তিষ্ক পারিপার্শিক শব্দগুলোকে প্রবেশের পথ ব্লক করে দেয়। এটা আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের জন্যই জরুরি।
তবে ঘুমালে একেবারেই শব্দ শোনা যায় না, ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। কিছু জোরালো শব্দ ঠিকই শুনতে পাই আর তখন আমরা জেগে উঠি। যেমন, সাইরের বা মাইকের শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। আবার কেউ নাম ধরে জোরে জোরে ডাকলেও জেগে উঠি। কারণ, ঘুমের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ সংকেত বিশেষ করে বিপদের সংকেতগুলো শনাক্ত করতে সক্ষম আমাদের মস্তিষ্ক।
মোটকথা হলো, ঘুমের সময় আমাদের শুনতে না পারার কারণ হলো মস্তিষ্কের কার্যকলাপের পরিবর্তন এবং বাইরের শব্দগুলোর প্রতি মনোযোগ কমে যাওয়া।
সূত্র: হাউ ইটস ওয়ার্কস।
Leave a Reply