মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
—————————-
সুবিচার না থাকলে একটি সমাজ, একটি দেশ টিকে থাকবে পারে না। ন্যায়পরায়ণতা না থাকলে একটি পরিবার সুখে-শান্তিতে থাকতে পারে না। ইনসাফ না থাকলে কোথাও শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা থাকে না।
মহান আল্লাহ মানবজাতির প্রতি সুবিচার করার সাধারণ নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎকাজ ও সীমা লঙ্ঘন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯০)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘ন্যায়বিচার কোরো। কেননা তা আল্লাহভীতির নিকটবর্তী।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮)
ইসলামের এই সুবিচারের নির্দেশনা জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পরিবারে সুবিচার প্রতিষ্ঠা সবার আগে জরুরি। কেননা পরিবারে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
নুমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার তাঁর পিতা তাকে নিয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে গেলেন এবং বলেন, আমি আমার এ ছেলেকে একটি গোলাম (দাস) দান করেছি। রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি তোমার সব সন্তানকে এমন দান করেছ? পিতা জবাব দিলেন, না। রাসুল (সা.) বলেন, তাহলে এ গোলাম ফেরত নিয়ে নাও।’ (বুখারি, হাদিস : ২৫৮৬)
হাদিসের প্রসিদ্ধ ছয়টি কিতাবের মধ্যে ‘ইবনে মাজাহ’ ছাড়া বাকি পাঁচটিতেই ওপরে উল্লিখিত হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এ হাদিসের কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে : ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ কায়েম করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬২৩)
পারিবারিক জীবনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় হাদিসটির গুরুত্ব অপরিসীম। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে : ‘…যখন তোমরা কথা বলবে, তখন ন্যায্য কথা বলবে—যদিও তা স্বজনদের সম্পর্কে হয়। আর আল্লাহপ্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫২)
যখন কোনো পরিবারে মা-বাবার পক্ষ থেকে কোনো সন্তানদের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ বা স্নেহ-মমতার লক্ষণ দেখা যায়—যদিও তার পেছনে যথেষ্ট ন্যায্য কারণ থাকে, তবু ওই পরিবারে দ্বন্দ্ব ও অশান্তি নেমে আসে।
ইউসুফ (আ.)-এর জীবন-ইতিহাস এর জ্বলন্ত প্রমাণ। তাই প্রত্যেক পরিবারের মা-বাবার উচিত, সন্তান-সন্ততির মধ্যে ইনসাফভিত্তিক আচরণ করা। আমাদের সমাজে অনেক মা-বাবা কন্যা সন্তানের তুলনায় পুত্র সন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেন। কখনো সম্পত্তি থেকে মাহরুম করেন। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। এর ফলে বহু পরিবারে কলহ লেগে থাকে।
তাই পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবার এ হাদিসের প্রতি আমল করা প্রয়োজন। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যারা ইনসাফ কায়েম করতে পারবে তাদের এই ইনসাফপূর্ণ আচরণ কিয়ামতের দিন নূর বা জ্যোতি হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে যারা ন্যায়পরায়ণ, তারা দয়াময়ের ডান পাশে জ্যোতির মিম্বরের ওপর অবস্থান করবে। আর তাঁর উভয় হস্তই ডান। (ন্যায়পরায়ণ তারা) যারা তাদের বিচারে, পরিবারে ও নেতৃত্বাধীন ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে ন্যায়নিষ্ঠ।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮২৭)
Leave a Reply