এ ব্যাপারে আল্লাহ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘(হে নবী)! আপনি ইমানদার পুরুষদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্রতা। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। আর আপনি ইমানদার নারীদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে। তারা যেন সাধারণ প্রকাশমান (অঙ্গ) ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে।’ সুরা নুর, আয়াত ৩০-৩১।
উপরোক্ত আয়াতে দৃষ্টি সংযত ও যৌনাঙ্গ হেফাজতের ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কেননা দৃষ্টির মাধ্যমেই ব্যভিচার ও ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপকর্মের সূচনা হয়, আর এর পরিসমাপ্তি বা পূর্ণতা পায় যৌনাঙ্গের মাধ্যমে। উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে ইবনে কাসিরে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) মুসলিম থেকে একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন।হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ বাজালি (রা.) বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে হঠাৎ কোনো নিষিদ্ধ বস্তুর ওপর দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিলেন।’
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন তিন ধরনের চোখ ছাড়া সব চোখ কাঁদবে- ১. যে চোখ হারাম বস্তু দেখা থেকে বিরত থাকে। ২. যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় জাগ্রত থাকে। ৩. যে চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু নির্গত হয়; যদিও তা মাছির মাথা পরিমাণ হয়।’ দুররে মানসুর।
হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমানের দৃষ্টি যদি রমণীর সৌন্দর্যের প্রতি পড়ে এবং সে আল্লাহর ভয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় তাহলে সে ইমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে।’ মুসনাদে আহমাদ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহর বাণী- দৃষ্টি হলো শয়তানের বিষাক্ত তীরসমূহ থেকে একটি তীর, যে ব্যক্তি আমাকে ভয় করে তা হেফাজত করবে আমি তাকে এমন ইমান দান করব যার মিষ্টতা সে নিজের হৃদয়ে অনুভব করতে পারবে।’ তাবারানি।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘চোখের জিনা হলো দেখা। জিবের জিনা বলা। কানের জিনা হলো শোনা। হাতের জিনা ধরা। পায়ের জিনা হাঁটা। অন্তর কামনা বা লালসা সৃষ্টি করে, আর যৌনাঙ্গ তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে।’ বুখারি, মুসলিম।
আত্মশুদ্ধি অর্জন, চরিত্র গঠন ও মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে দৃষ্টি হেফাজতের গুরুত্ব অপরিসীম। পক্ষান্তরে ইভ টিজিং, ধর্ষণ ও ব্যভিচারের মতো অপরাধের প্রথম ধাপ হলো কুদৃষ্টি। অতএব দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া গুনাহ থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।
ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেছেন, ‘মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের চোখ হারাম বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত থেকে বিরত রাখতে না পারবে ততক্ষণ সে পাপ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না।’
লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
Leave a Reply