দেবতাখুম : রোয়াংছড়ির এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৪, ২০২১
  • 660 পাঠক

শিফিকা আক্তার চন্দন

———————
দুই দৈত্যকার পাহাড়ের মাঝখানে অপরূপ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের রোয়াংছড়ির দেবতাখু।

নৈসর্গিক বান্দরবানকে বলা হয় খুমের স্বর্গরাজ্য আর এই রাজ্যের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিঃসন্দেহেই দেবতাখুম। স্থানীয়দের মতে, প্রায় ৫০-৭০ ফুট গভীর এই খুমের দৈর্ঘ্য ৬০০ ফুট যা ভেলাখুম থেকে অনেক বড় এবং অনেক বেশি বন্য।

দেবতাখুম যেতে রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী আর্মি ক্যাম্পের অনুমতি নিয়ে ট্রেক করে শীলবাঁধা পাড়া (লিরাগাঁও) যেতে হবে।

অবশ্যই শীলবাঁধা পাড়া থেকে বাঁশের মজবুত ভেলা বানিয়ে নিতে হয়। শীলবাঁধা গিয়ে প্রথমে পংসুআং খুম পার হতে হয়।

পংসুআং খুম পার হওয়ার পর দেবতাখুমের শুরু। স্থানীয়দের কাছে এটা হলো সোনাখুম। অনেকে আবার মারমা ভাষায় থংচিখুম নামেও বলেন। দেবতাখুমের ট্রেইল যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ঙ্কর।

বর্ষায় গেলে ট্রেইলের ঝিরি বা পাহাড়ের রূপে যেমন আপনার চোখ আটকাবে তেমনি পিচ্ছিল পাথুরে পথে পা ফসকে বড় ধরনের বিপদে পড়ার আশঙ্কাও থাকে পদে পদে। কোন কোলাহল নেই, নেটওয়ার্কের বাইরে।

চারপাশে নিস্তব্ধ সুনসান নিরবতা, যেন এক ভূতুড়ে পরিবেশ। ফোঁটা ফোঁটা পানির শব্দে আরো ভূতুড়ে মনে হবে পরিবেশটা। বিশাল দুটি পাহাড়ের মাঝদিয়েই চলে গেছে পথ, যা ভেলায় করে পাড়ি দিতে হবে।

প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে পারবেন, যেন মিশে যাবেন প্রকৃতির সাথে। যাওয়ার পথই আপনাকে বলে দিবে স্বর্গের পথ কতটা সুন্দর হতে পারে।

নির্জন ও কোলাহলমুক্ত নিস্তব্ধ প্রকৃতির এলাকা হিসেবেই সকলের কাছে পরিচিত বান্দরবান রোয়াংছড়ির দেবতাখুম এলাকাটি। দেবতাখুম নাম হলেও এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন দেবতা বা মূর্তি পাওয়া যায় না।

নেটওয়ার্কের সম্পূর্ণ বাহিরে নির্জন ভয়ঙ্কর সুন্দর এক এলাকা দেবতাখুম। কি এক ভূতুড়ে পরিবেশ ! দু’পাশের বিশাল পাহাড়ের আনাচে-কানাচে সরু ও সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা সুন্দর পাথুরে পথ। যে পথের সাহায্যে মানুষ তার স্বচক্ষে দেবতাখুমের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। এই পথ পাড়ি দিতে হয় বাঁশের ভেলায় করে।

মূলত দেবতাখুমের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার বুক ছিড়ে খুমের মাঝখানে ভেলার চলাচল। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণবিন্দু দেবতাখুম। এরপাশেই বয়ে চলা অদ্ভুত সৌন্দর্যের শীলবাঁধা ঝর্না।

দেবতাখুমের দু’দিকে দালানের মতো প্রায় ১০০ মিটার খাড়া পাহাড়। যার নাম সিপ্পি পাহাড়। সিপ্পি আয়সুয়াং নামের ২৯৩৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই পাহাড়টি বান্দরবানের পূর্বপ্রান্তে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত।

পাহাড়ের স্বাদ ও গন্ধে নিজে মিশে যেতে চাইলে পায়ে হেঁটে যাওয়াই শ্রেয়। এছাড়াও রোয়াংছড়ির বাজারে পাশ ঘেঁষে নামলেই পাবেন এক পাহাড়ি ছড়া।

বর্ষায় এ ছড়া বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর থাকে। আর ছড়ার বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অগণিত ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির পাথর। সড়কগুলো খাড়া হয়ে নিচের দিকে ঢালুভাবে নেমেছে।

আর সড়কের ডানপাশে অদূরে উঁকি দিচ্ছে বাংলাদেশের বৃহৎ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং এর চূড়া। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাওয়া যায় রনিনপাড়ার মুখে। রনিনপাড়ায় যেতে হলে রাস্তা দিয়ে খাড়া পাহাড় বেয়ে যেতে হবে।

স্থানীয়দের মতে, এই খুমের গভীরতা প্রায় ৬০ মিটারের বেশি। শীতে অবশ্য পানি কম থাকে।

দেবতাখুমের সৌন্দর্য বড়ই মনোমুগ্ধকর এবং রহস্যময়। পানি বেশ স্বচ্ছ, রং সবুজ। দুই পাহাড়ের পুরো পাথর ছোট বড় শ্যাওলা আর লতাপাতা দ্বারা আবৃত।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!