আরশে লেখা আত্মীয়তার বন্ধন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২১
  • 426 পাঠক

রায়হান রাশেদ   

—————–

পারিবারিক সূত্রে গাঁথা সম্পর্কের নাম আত্মীয়তা। তবে সাধারণত রক্ত, বংশ কিংবা বৈবাহিক সূত্র ধরেই আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে আত্মীয়তার বাঁধন সর্বতোভাবে জড়িত। আত্মীয়তা ছাড়া এ জীবন অচল। আত্মীয়তার বাঁধন ছাড়া জীবন হয়ে পড়ে একাকী, বিচ্ছিন্ন ও আনন্দহীন। এই বাঁধন ছুঁয়ে আছে খোদার আরশ।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোনো সম্পর্ক রাখেন না। আমরা যদি প্রিয় নবীর হাদিসের দিকে তাকাই, দেখব তিনি বলছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি রহমান! আর এই ‘রাহিম’—আত্মীয়তার বন্ধন। তাকে আমার নাম থেকেই একটি নাম দিয়েছি। যে ব্যক্তি এই বন্ধন রক্ষা করবে আমি তার সঙ্গে বন্ধন রক্ষা করব। আর যে ব্যক্তি তার সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করবে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯৬)

আত্মীয়তার সম্পর্কে আছে কল্যাণ

অনেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে রাখে। টাকা পয়সা খরচের ভয়ে আত্মীয়ের খোঁজখবর রাখে না। তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করে। অথচ এই সম্পর্কের হৃদ্যতায় আছে জীবিকার প্রশস্ততা ও জীবনের দীর্ঘায়ু। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার জীবিকার প্রশস্ততা কিংবা দীর্ঘায়ু কামনা করে সে যেন তার আত্মীয়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪১৭)

আত্মীয়ের সঙ্গে নবীজির আচরণ

প্রাণের নবী মুহাম্মদ (সা.) জীবনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে আত্মীয়তার সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছেন। সাহাবিদের এ ব্যাপারে আদেশ করেছেন। প্রিয় স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর বান্ধবীদের জন্য উপহার পাঠাতেন। উপার্জনের সিঁড়িতে পা রাখা মাত্রই চাচা আবু তালেবের কষ্ট লাঘব করার জন্য আলী (রা.)-এর রুটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমি আমার মা-বাবাকে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত পেয়েছি। আমাদের এমন কোনো দিন যায়নি, যেদিনের দুই প্রান্তে সকালে ও বিকেলে রাসুল (সা.) আমাদের কাছে আসতেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৭৯)

আত্মীয়দের দ্বিনের পথে আহ্বান

রাসুল (সা.) ইসলামের প্রথম প্রভাতে নিকটাত্মীয়দের দাওয়াত দেন। তাদের এক আল্লাহর পথে আহ্বান করেন। মুহাম্মদ (সা.)-এর ধর্মে প্রথম বিশ্বাস স্থাপনকারী মানুষ ছিলেন স্ত্রী খাদিজা (রা.)। কিশোরদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন চাচাতো ভাই আলী (রা.)। সুনানে তিরমিজিতে আছে, ‘পুরুষদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী আবু বকর (রা.)। কিশোরদের মধ্যে আলী (রা.) আট বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। নারীদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন রাসুল (সা.)-এর স্ত্রী খাদিজা (রা.)।’

আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না

আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন জীবন ব্যক্তিকে জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। মুহাম্মদ (সা.) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি আরোপ করে বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪১৫)

সম্পর্ক ছিন্ন করা নিষিদ্ধ

মানুষের পাশে থাকা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। মিলেমিশে একসঙ্গে বাস করা জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না এবং পরস্পর শত্রুতা করবে না, পারস্পরিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে না এবং তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪২৪)

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!