নামাজের পর মুসল্লিদের দিকে ইমামের ঘুরে বসার কারণ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
  • 494 পাঠক

সাআদ তাশফিন   

——————–
মসজিদগুলোতে দেখা যায় ইমাম সাহেবরা ফজর ও আসর নামাজের পর কিবলা থেকে মুখ ফিরিয়ে মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসেন। তারপর কিছুক্ষণ ব্যক্তিগতভাবে মাসনুন দোয়া-দরুদ, ইস্তেগফার পড়ার পর দোয়া করেন।
ইমাম সাহেবের এই দোয়ার সঙ্গে মুসল্লিদের মধ্যে যাদের মাসনুন দোয়ার আমল শেষ হয়ে যায় তারাও কেউ কেউ শামিল হন। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে ইমাম সাহেব এই নামাজগুলো শেষ হওয়ার পর কিবলার দিক মুসল্লিদের দিকে কেন ঘুরে বসেন?
ইসলামে কি এর কোনো ভিত্তি আছে? নামাজ পড়া হয় কিবলার দিকে ফিরে, নামাজের পর মাসনুন দোয়া ও ব্যক্তিগত আমলগুলো তো কিবলার দিকে ফিরেই করা উচিত। এই প্রশ্নের জবাব হলো—প্রথমত, দোয়ার আমল করার জন্য কিবলামুখী হওয়া শর্ত নয়।
যেসব ফরজ নামাজের পর সুন্নত নেই, যেমন—ফজর ও আসর নামাজ, এসব নামাজ শেষে ইমাম সাহেবের জন্য ডামে-বামে মুক্তাদিদের সামনে নিয়ে বসা সুন্নত। তবে জরুরি বা ওয়াজিব নয়। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/১৬০, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ৫/৯৩)

মহানবী (সা.) বিভিন্ন নামাজের পর সাহাবায়ে কেরামের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তোমাদের মধ্য হতে কেউ যেন তার পক্ষ থেকে শয়তানের জন্য কোনো অংশ নির্ধারণ না করে। অর্থাৎ সে যেন এরূপ মনে না করে যে, নামাজ শেষে ডান দিকে ছাড়া অন্য কোনো দিকে মুখ ফেরানো যাবে না। কেননা আমি বেশির ভাগ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বাম দিকে মুখ ফেরাতে দেখেছি।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫২৩)

আরো অনেক হাদিসে প্রিয় নবী (সা.)-এর মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসার প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি নামাজের পর মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসে তাদের মহান আল্লাহর বিভিন্ন বাণী ও নির্দেশন শোনাতেন, কখনো কখনো তাদের বিভিন্ন সমস্যা বা স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাইতেন।

জায়েদ ইবনে খালিদ জুহানি (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) রাতে বৃষ্টি হওয়ার পর হুদায়বিয়াতে আমাদের নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষ করে তিনি লোকদের দিকে ফিরিয়ে বলেন, তোমরা কি জান, তোমাদের পরাক্রমশালী ও মহিমাময় প্রতিপালক কি বলেছেন? তাঁরা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই বেশি জানেন।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, (রব) বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আমার প্রতি মুমিন হয়ে গেল এবং কেউ কাফির। যে বলেছে, আল্লাহর করুণা ও রহমতে আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি, সে হলো আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী। আর যে বলেছে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের ওপর বৃষ্টিপাত হয়েছে, সে আমার প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৮৪৬)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সামুরাহ ইবনে জুনদাব (রা.) বলেন, নবী (সা.) ফজরের নামাজ আদায়ান্তে লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন এবং বলতেন, তোমাদের কেউ কি গত রাতে কোনো স্বপ্ন দেখেছ? (মুসলিম, হাদিস : ৫৮৩১)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, নামাজের পর কিবলা থেকে ঘুরে মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসা দোষণীয় কিছু নয়। এবং এটি আদবের পরিপন্থী নয়। তবে এভাবে বসা ওয়াজিবও নয়, সুন্নত হিসেবে কেউ বসতে চাইলে বসতে পারে।

 

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!