দুশ্চিন্তাই চিন্তা

  • আপডেট সময় বুধবার, মার্চ ১৬, ২০২২
  • 364 পাঠক

——————–

হানিফ সংকেত

———————

ফেসবুক যন্ত্রণার মতোই অভিভাবকদের আর এক দুশ্চিন্তা সন্তানের মাদকাসক্তি। পরিবারের জন্য এ এক সাংঘাতিক অভিশাপ। যারা মাদকাসক্ত তাদের জীবনে কোনো শৃঙ্খলা থাকে না। তাদের ধর্মীয়, সামাজিক, মানবিক মূল্যবোধের মৃত্যু ঘটে। মাদকের জন্য অর্থের প্রয়োজনে সে মাঝে মাঝে যে আচরণ করে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। মূলত মাদকের অর্থ জোগাড় করতেই এসব কিশোর-তরুণ নানান অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

কবিগুরু বলেছেন, ‘ব্যাধির চেয়ে আধিই বড়’ অর্থাৎ রোগের চেয়ে দুশ্চিন্তাই বড়। সমাজের নানান অনিয়ম, অসংগতি দেখে অনেকেরই দুশ্চিন্তা হয়, ক্ষোভ জন্মায়। আর এসব দুশ্চিন্তাজনিত অশান্তি খোশমেজাজি মানুষকেও রোশমেজাজি করে ফেলে। এই অশান্তির কারণে অনেকের মধ্যে বিরক্তি-অভক্তি কিংবা নিষিদ্ধ দ্রব্যের প্রতি আসক্তিও আসতে পারে। বাজে অভ্যাস নানান কাজে, নানান সাজে অনেকের মাঝেই দেখা যায়। দুশ্চিন্তার অনেকগুলো কারণের একটি হলো ফেসবুক।

বলা হয় এটি একটি বিশাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। অর্থাৎ আগে মানুষ অসামাজিক ছিল এখন এই ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সামাজিকতা বেড়েছে। অনেকেই তা মানতে নারাজ, কারণ এই ফেসবুক ক্ষেত্রবিশেষে আমাদের অসামাজিক করে তুলেছে। ইদানীং অফিস-আদালতসহ অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্টেও মোবাইল ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়।
কিছুদিন আগে শুনেছি একটি হোটেলে নাকি-ফেসবুক, ইউটিউবসহ সব ধরনের সার্ভিস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হোটেলে ঢুকে শুধু ইনকামিং এবং আউটগোয়িং কল করা যাবে। আবার ইনকামিং কলে দুই মিনিটের বেশি কথা বলা যাবে না। স্বভাবতই প্রশ্ন আসতে পারে হোটেলে খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে ফেসবুকের সম্পর্ক কি?
কর্তৃপক্ষের উত্তর হচ্ছে, আনন্দমুখর পরিবেশে খাওয়া এবং খাওয়া শেষে অন্যকে খাওয়ার সুযোগ দেওয়া। কারণ হোটেলে মানুষ বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে আসবে, গল্প-গুজব করবে, আনন্দের সঙ্গে খাবে-তা না বসে বসে ফেসবুক দেখে, চ্যাট করে, টিকটক দেখে, নইলে গেম খেলে। এর ফলে এমন নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে একসময় খাবারও ঠান্ডা হয়ে যায়। ফলে খাবারের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
রটে যায় এই দোকানের খাবার ভালো নয়। অথচ এক সময় হোটেলগুলো মানুষের কোলাহলে ছিল সরগরম। বিভিন্ন দেয়ালে লেখা থাকত-‘আস্তে কথা বলুন’। আর এখন সবাই যেন নির্বাক। পুরো হোটেল ভর্তি মানুষ কিন্তু কোনো কথা নেই। সুনসান নিস্তব্ধতা। সবাই যেন সবার অপরিচিত। বেশির ভাগই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।
শুধু তাই নয়, এই ফেসবুকের কারণে বাড়িঘরেও এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ছেলেমেয়েরা মা-বাবার সঙ্গেও কথা বলে না। খাবার নিয়ে টেবিলে বসে থাকেন মা, ছেলেমেয়েকে ডাকেন-‘খেতে আয় বাবা’। কিন্তু কে শোনে কার ডাক। পরে খাবার টেবিল থেকে উঠে সন্তানকে ধরে নিয়ে আসতে হয়। সেখানেও শান্তি নেই।
ছেলেমেয়েরা এমন আচরণ করে, মনে হয় খেতে বলে মা মহাঅপরাধ করে ফেলেছেন। সন্তানের ফেসবুক ব্যবহারের কারণে অনেক মা অসহায় হয়ে পড়েছেন। যা তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলছে। সন্তান ঠিকমতো খায় না, ঘুমায় না, শরীরের প্রতি যত্ন নেয় না।
সব সময় খিটখিটে মেজাজ, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে না। ফলে অনেক সময় আত্মীয়স্বজনের কাছে লজ্জায় পড়তে হয়। এ কীসের সামাজিকতা? বরং এই ফেসবুক আমাদের সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে আত্মকেন্দ্রিক মানুষে পরিণত করেছে।স্কুলে গ্যালে সব অভিভাবকেরই একই কথা, একই দুশ্চিন্তা, ট্যাব আর মোবাইলের কবল থেকে আমার সন্তান কবে রক্ষা পাবে। ফেসবুক ব্যবহারে যারা সুখ পান, অতি ব্যবহারে তা অসুখে পরিণত হতে পারে। ফেসবুকে বন্ধুর তালিকায় শত শত বন্ধুর নাম থাকলেও প্রকৃত বন্ধুর মতো বিপদে এরা কেউ পাশে এসে দাঁড়াবে না। লাইক আর কমেন্ট দিয়েই এদের দায়িত্ব শেষ।ফেসবুক যন্ত্রণার মতোই অভিভাবকদের আর এক দুশ্চিন্তা সন্তানের মাদকাসক্তি। পরিবারের জন্য এ এক সাংঘাতিক অভিশাপ। যারা মাদকাসক্ত তাদের জীবনে কোনো শৃঙ্খলা থাকে না। তাদের ধর্মীয়, সামাজিক, মানবিক মূল্যবোধের মৃত্যু ঘটে। মাদকের জন্য অর্থের প্রয়োজনে সে মাঝে মাঝে যে আচরণ করে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।মূলত মাদকের অর্থ জোগাড় করতেই এসব কিশোর-তরুণ নানান অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আর অপরাধী চক্র তাদের ব্যবহার করে নানান অপকর্মে। প্রায়ই আমরা পত্রিকার পাতায় দেখি ছেলের হাতে বাবা খুন কিংবা মাদকাসক্ত মেয়ের হাতে বাবা-মা উভয়েই খুন। কী ভয়াবহ অবস্থা। পুরো পরিবারই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

এই মাদকের সহজ প্রাপ্তি মাদকসেবীদের দিনে দিনে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে। তাই মাদক সরবরাহকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি মাদকাসক্তের পুনর্বাসন প্রয়োজন। প্রয়োজন মাদকের কুফল সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা। নইলে মাদক নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়তেই থাকবে।

আছে অগ্নিদুর্ঘটনা। কিছুদিন পর পর একের পর এক অগ্নিদুর্ঘটনা যেন অগ্নিদুর্যোগ। মুহূর্তেই দুর্ঘটনাস্থল পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। প্রাণ হারান অনেকেই। এ এক ভয়ঙ্কর দুশ্চিন্তার কারণ। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে অনেকেরই সারা জীবন কাটাতে হয় দুঃসহ যন্ত্রণায়।

অথচ এই অগ্নিকান্ডের দুশ্চিন্তা বাড়ছেই। কারণ পুরান ঢাকাসহ অনেক স্থানেই রাস্তাঘাট সরু। ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি তো দূরের কথা দুটি রিকশা গাড়ি পর্যন্ত সহঅবস্থান করতে পারে না। অরক্ষিত বিদ্যুতের তারে প্রায়ই অগ্নিস্ফূলিঙ্গ দেখা যায়। বহুতল ভবনগুলোতে দেখা যায় অপ্রতুল অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। তাই অগ্নি দুশ্চিন্তা বাড়ছেই।

যানবাহনে চলতে গেলে আর এক আতঙ্ক গ্যাস সিলিন্ডার। বিশাল আকৃতির সিলিন্ডার দেখলে মনে হয়-প্রতিটি যানবাহনেই যেন বোমা ফিট করে রাখা হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। এগুলোতেও ভেজাল রয়েছে। কিছু কিছু গাড়িতে দেখেছি পিছনের গ্যাস সিলিন্ডারে মরচে ধরে গ্যাছে, মেয়াদ শেষ-তারপরও বদলাচ্ছে না।

ভাবখানা-চলছে তো চলুক না। টনক নড়ে যখন দুর্ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীদের ধর্মঘটের সময় একটা সেøাগান সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, ‘টনক তুমি নড়বে কবে’। কারণ ঘটনা ঘটলেই নানান সংবাদ, বাদ-প্রতিবাদ, মানববন্ধনসহ অনেক কিছুই হয় আবার কিছুদিন পর সেই একই অবস্থা। সুতরাং এ ব্যাপারেও দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না।

আরেক দুশ্চিন্তা সড়কে। সড়কে-মহাসড়কে প্রতিনিয়তই ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। যারা বেঁচে গ্যাছেন তারা পঙ্গু হয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু ব্যক্তির জীবনহানিই ঘটে না বরং সৃষ্টি হয় পারিবারিক অনিশ্চয়তা। এ থেকে উত্তরণের উপায় চালক ও পথচারী উভয়েরই আইন মেনে চলা। কিন্তু কেউই তা মানছে না। দুর্ঘটনাও থামছে না। এটাই সড়ক দুশ্চিন্তার বড় কারণ। তবে সৎভাবে আইনের যথার্থ প্রয়োগ করলে এ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেখানেও দুশ্চিন্তা-আইনের প্রয়োগ সৎভাবে হচ্ছে কি না?

রাস্তাঘাটে, দোকানে, রেস্তোরাঁয় যেখানেই যাবেন সাধারণ মানুষ যেন আরও সাধারণ হয়ে গেছে। ভেজাল দেখলেও প্রতিবাদ করে না। ফলমূলে ফরমালিন দেখলে জিজ্ঞেস করে না। পছন্দ না হলে নীরবে চলে যান। কেউ ঘুষ চাইলে প্রতিবাদ করেন না। মোট কথা কোনো অন্যায়-অবিচার হলেও মানুষের মধ্যে প্রতিবাদ করার ইচ্ছেটা কমে গ্যাছে। জানতে চাইলে উত্তর আসবে-প্রতিবাদ করে কি হবে? এত বলা হচ্ছে তারপরও কি রাস্তাঘাটে শৃঙ্খলা ফিরেছে? দুর্নীতি কমেছে?

মাদক আসা বন্ধ হয়েছে? উত্তর একটাই হয়নি। বেড়েই চলেছে। ঢাকা শহরের আকাশে উড়াল দেওয়ার অনেক সেতু, তারপরও আছে যানজট। বাড়ছে জটের সময়, বাড়ছে দুশ্চিন্তা। ভেজালবিরোধী অভিযান চলছে-সবাই বাহবা দিচ্ছে কিন্তু সবাই নিশ্চিত ভেজাল দেওয়া চলবেই, থামানো যাবে না। সাময়িক আইন প্রয়োগের ঝলকানি দেখা গ্যালেও ক’দিন পরেই আবার একই অবস্থা হবে। দুশ্চিন্তা সে কারণেই।

বড় বড় যানবাহন যেমন বাস, ট্রাক এরা সবসময় ছোট যানবাহনের চলাচলে বিরক্ত হয়। আর ছোট ছোট যানবাহন এদের বেপরোয়া আচরণে ক্ষিপ্ত হয়, আবার ছোট-বড় সব যানবাহন পথচারীদের অনিয়ম চলাচলে বিরক্ত হয়। আর সব পথচারী এবং যানবাহন চালক মোটরসাইকেলের বেপরোয়া চলাচলে বিরক্ত হয়। ডাক্তারের চেম্বারে সিরিয়াল নিতে গিয়ে রোগী বিরক্ত হন। ব্যাংক থেকে নিজের টাকা তুলবেন, তারপরও লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে হয় বলে অনেকে বিরক্ত হন।

ওভারলোড লিফটে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় গায়ে গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তারপরও যখন কেউ লিফটে উঠার জন্য ঠেলাঠেলি করেন তখন বিরক্ত হন। স্কুলে অযথা নানান ধরনের ফিস নেওয়ার কারণে বিরক্ত হন। অনর্গল মিথ্যে কথা শুনলে বিরক্ত হন।

টেলিভিশন খুলে যখন দেখেন দেশের বড় বড় বুদ্ধিমান লোকজন মিথ্যে বলছেন, তখন বিরক্ত হন। কারণ আপনি জানেন যা বলছে তা মিথ্যে কিন্তু ওনারা বলছেন ওটাই সত্য। ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছেই। অর্থাৎ টক শো থেকে রক শো, বিভিন্ন রান্না থেকে নাটকের নাকি কান্না কিংবা কাতুকুতু দেওয়া হাসি মার্কা অভিনয় দেখে দর্শকের উক্তি এবং বিরক্তি সবই দুশ্চিন্তার কারণ। খুঁজলে এমনি হাজারো বিরক্তির কারণ খুঁজে পাবেন। এসব বিরক্তিও এক সময় দুশ্চিন্তায় রূপ নেয়।

যেমন শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা প্রশ্নপত্র ফাঁস।

ইদানীং অধিকাংশ মিডিয়ার সুরই এক। এক সুরের গান সব সময় ভালো লাগে না। বৈচিত্র্য দরকার। সংবাদে এই বৈচিত্র্যহীনতাও দুশ্চিন্তা বাড়ায়। আবার কিছু কিছু মিডিয়ার কর্তাব্যক্তিদের নিজ চ্যানেলে আত্মপ্রচার দুশ্চিন্তা বাড়ায়। হরেক নামের রিয়েলিটি শোতে ট্যালেন্ট হান্টের নামে ব্যবসা করার চেষ্টা দেখে দুশ্চিন্তা বাড়ে। দেশে এখন মানসম্মত ছবির অভাব অথচ সংগঠনের অভাব নেই। এরপর আছে পারস্পরিক কোন্দল। যা অনাকাক্সিক্ষত। আবার দেশে চলে না অথচ সেই ছবিরই দেশ-বিদেশে নানাবিধ পুরস্কার লাভ-পুরস্কারের মান সম্পর্কেও দুশ্চিন্তা বাড়ায়।

দেশে এখন মরিচা বাতির পলিটিকস চলছে। মিটমিটি আলো জ্বলছে আর নিভছে। আর মুখস্থ কিছু বুলি চলছে। কে কী বলল তাতে কারও কিছু যায় আসে না। তবে রাজনীতির এই নানা মত-পথ ও ভেদাভেদ দুশ্চিন্তা বাড়ায়। অফিসে প্রশাসনে অতিমাত্রায় চাটুকারিতাও দুশ্চিন্তার কারণ। আসলে মানুষের মধ্যে মান ও হুঁশ বিসর্জন দিয়ে আস্থা অর্জনের জন্য ব্যক্তিত্ব বর্জন করা একটি শ্রেণি রয়েছে। যাদের বলা হয় চাটুকার। এরাও দুশ্চিন্তা বাড়ানোর আর এক কারণ।

নদী দখল, ভূমি দখল, বাড়ি দখল করেছে যারা-দেখলাম ধরা পড়ছে তারা। প্রশংসনীয় বিষয় হচ্ছে এই উচ্ছেদে নেই কোনো ভেদাভেদ। যে অবৈধ সেই উচ্ছেদ। এ ধারায় চলতে থাকলে ভালো কিন্তু ক’দিন পরেই যদি আবার বন্ধ হয়ে যায়? দুশ্চিন্তা সেখানেই।

সবচেয়ে বড় কথা মানুষ বেঁচে থাকার জন্য খায়। কিন্তু এখন সেই খাদ্য নিয়েও দুশ্চিন্তা। মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এরপর আছে মাছ, মাংস, তরকারি, ফলমূল যেটাই খাচ্ছেন সন্দেহ-ভেজাল নেই তো? ভাবলেন হোটেল থেকে কিছু খাবার কিনবেন-বাস্ টেলিভিশনে দেখলেন পচা-বাসি-গন্ধযুক্ত আগের দিনের মাংস ফ্রিজে রেখে দেয়া হয়েছে পরের দিনের জন্য। দেখলেন বাজারের মরা মুরগি হোটেলে সস্তায় কিনে চালিয়ে দিচ্ছে সুতরাং হোটেলে খাওয়া বন্ধ। কোথাও বিশ্বাস নেই। এই অবিশ্বাসও দুশ্চিন্তার আর একটি কারণ।

এসব ভেজাল, নোংরা এবং রাস্তার ধুলোবালি কিংবা দূষিত পানি খেয়ে যদি অসুস্থ হন যাবেন কোথায়? হাসপাতালে? সেখানেও দুশ্চিন্তা। সুচিকিৎসা হবে তো? কারণ দেশ যতই উন্নত হোক চিকিৎসা ব্যবস্থার বোধহয় উন্নতি হচ্ছে না। না হয় দেশের বড় বড় মানুষ কথায় কথায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন কেন? বড় অসুখ থেকে ছোট অসুখ সব অসুখেই বিদেশ। সর্দি-কাশি-হাঁচি থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত। কিন্তু যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের তো ১০ টাকার টিকিটে হাসপাতালের আউটডোরই ভরসা। কিন্তু এই আউটডোর চিকিৎসায় সুস্থ হব তো? দুশ্চিন্তা সেখানেও।

ছোটবেলায় নাক চেপে মিক্সার খেতাম। যত কষ্টই হোক খেতাম এই ভেবে এই মিক্সার পেটে গ্যালে ভালো হব। এখন সব ওষুধ খাই নাক খুলেই কিন্তু ভাবনায় বিশ্বাস নেই। পেটে গ্যালে কি হবে? কারণ এখানেও দুশ্চিন্তা এই ওষুধে ভেজাল নেই তো? বাঁচব তো?

আরেক দুশ্চিন্তা মানবপাচার। নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য তরুণ সমাজ প্রলোভনের শিকার হচ্ছেন মানবপাচারকারীদের। অত্যন্ত বিপজ্জনক পথে মানবপাচার হচ্ছে। দেশ উন্নত হচ্ছে, দেশে কাজ করার সুযোগ বাড়ছে, আমাদের মাথাপিছু আয়ও বাড়ছে। তাহলে জমিজমা বিক্রি করে দালাল ধরে বিদেশ যাত্রা কেন? এও আর এক দুশ্চিন্তা।

কিছুদিন আগে একটি পত্রিকার শিরোনাম দেখেছিলাম-‘ধর্ষণের বিভীষিকায় দেশ’। কল্পনা করা যায়? শিরোনাম দেখেই বুক কেঁপে উঠে। দেশে নাকি মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে এই ধর্ষণ। ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশু-বৃদ্ধা এমনকি প্রতিবন্ধী নারীরা পর্যন্ত। চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে পর্যন্ত শিশু ধর্ষণ হচ্ছে।

আমরা কোন জগতে বসবাস করি? এখনো ক করে আমরা সহজভাবে চলছি, কথা বলছি? চারদিকে প্রশ্ন-কেন এদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হচ্ছে না? শুধু ধর্ষণেই শেষ নয় এরপর নির্মম নির্যাতন এবং চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া কিংবা আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। এই ভয়াবহ চিত্র কল্পনা করলেও শরীর শিউরে উঠে। এসব ঘটনা দুশ্চিন্তাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এখন দুশ্চিন্তাই যেন বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা মনকে অশান্ত করছে।

‘মানুষের এই মন

কভু সচেতন, কভু অচেতন’

অচেতন নয়, আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমাদের জীবনযুদ্ধে বিশুদ্ধভাবে চলার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। নিজের দেশ, পরিবেশ, সংস্কৃতি, মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, অনিয়ম-অসংগতি, সৎ আদর্শ, সৎ নীতি সব ব্যাপারেই প্রয়োজন সচেতনতা। প্রয়োজন কর্মক্ষেত্রের সর্বক্ষেত্রে সবার সৎ এবং সততা নিয়ে চলা। তাহলে দুশ্চিন্তা আর চিন্তা হবে না। আমাদের ভালোবাসা হোক আমাদের দেশ, দেশের সুখী পরিবেশ এবং দেশের মানুষ।

লেখক : গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়নকর্মী।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!