যাদের উপদেশ গ্রহণ করা যাবে

  • আপডেট সময় সোমবার, জুন ৬, ২০২২
  • 186 পাঠক

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা 

————————— 

বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো হুট করে কোনো কাজ না করা এবং কোনো কাজের সিদ্ধান্তও গ্রহণ না করা কল্যাণকামী কোনো বিচক্ষণ ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ না করে। কেননা আল্লাহ তাঁর নবী (সা.)-কে পরামর্শ করার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি কাজে-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

পরামর্শ কেন করবেন : পরামর্শ মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে এবং ভুলত্রুটি থেকে রক্ষা করে।

পবিত্র কোরআনে পরামর্শের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আপনি কাজে-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

বিখ্যাত আরবি প্রবাদ হলো, ‘পরামর্শ লজ্জা থেকে রক্ষাকারী দুর্গ এবং দোষারোপ থেকে নিরাপত্তা দানকারী বন্ধু। ’ (মুহাদারাতুল উদাবা : ১/৫২)

যাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে : যখন কোনো ব্যক্তি পরামর্শ করার ইচ্ছা করে, তখন সে যেন পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তি থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে।

১. অভিজ্ঞতা : পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে এমন ব্যক্তির কাছ থেকে যে বিচক্ষণ ও পূর্ণ অভিজ্ঞতা রাখে। কেননা অভিজ্ঞতা মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিচক্ষণ ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করো, তারা সুপথ প্রদর্শন করবে। তাদের অবাধ্য হয়ো না, লজ্জিত হবে। ’ (মাউসুআতুল হাফিজ, পৃষ্ঠা ৪২৭)

২. আল্লাহভীতি : পরামর্শ দানকারী ব্যক্তি অবশ্যই দ্বিনদার ও আল্লাহভীরু হবে। কেননা আল্লাহভীতিই সব কল্যাণের ভিত্তি এবং মুক্তির দরজা। যে ব্যক্তির দ্বিনদারি ঠিক আছে, গোপন বিষয় তার কাছে নিরাপদ এবং আপন প্রত্যয়ে সুদৃঢ়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহভীরুদের পথপ্রদর্শনের অঙ্গীকার করা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাকে পথ প্রদর্শন করেন। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২)

৩. কল্যাণকামী হওয়া : যার সঙ্গে পরামর্শ করা হবে সে অবশ্যই কল্যাণকামী ও আন্তরিক হবে। কেননা কল্যাণকামিতা ও ভালোবাসা মানুষকে যথাযথ চিন্তা করতে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। জ্ঞানীরা বলেন, ‘এমন জ্ঞানীদের সঙ্গে পরামর্শ করো যারা হিংসুক নয়, এমন আন্তরিক ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করো যে বিদ্বেষী নয়। ’ (নাসরুদ দুরার : ৪/২১১)

৪. সুষ্ঠু চিন্তার অধিকারী হওয়া : এমন ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে যে সুষ্ঠু চিন্তার অধিকারী। যে দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্ত। কেননা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তির মন স্থির থাকে না এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না।

৫. ব্যক্তিগত স্বার্থ না থাকা : পরামর্শকৃত বিষয়ে পরামর্শদাতার কোনো স্বার্থ জড়িত না থাকা আবশ্যক, বিশেষ কোনো আগ্রহ না থাকা। কেননা স্বার্থ মানুষকে প্রলুব্ধ করে, আগ্রহ সুবিচারের পথে বাধা। আর কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে যখন প্রবৃত্তি ও স্বার্থ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, তখন তাতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

আর পরামর্শ গ্রহণকারী পরামর্শদাতার প্রতি সুধারণা পোষণ করবে এবং পরামর্শ শরিয়তের বিরোধী না হলে তা মান্য করবে। কেননা আল্লাহ মুমিনের প্রতি সুধারণা পোষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমরা বিষয়টি শুনলে, তখন মুমিন নারী ও পুরুষ কেন নিজেদের ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করল না এবং বলল না—এটা সুস্পষ্ট অপবাদ। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২)

 

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!