মহানবী (সা.) দুর্নীতিবাজ বিচারক সম্পর্কে যা বলেছেন

  • আপডেট সময় রবিবার, আগস্ট ২৫, ২০২৪
  • 96 পাঠক

শাহাদাত হোসাইন ।২৫ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

বিচারালয় ও বিচারক সমাজে ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। বিচারকাজ মানুষের মৌলিক অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়। তাতে ইচ্ছাকৃত খেয়ানত ও বিচ্যুতি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ বিচারকাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

দাউদ (আ.)-কে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দেয়ার পর আল্লাহ তাঁকে বলেছিলেন, ‘হে দাউদ! আমরা আপনাকে জমিনে খলিফা বানিয়েছি।
অতএব, আপনি লোকদের মধ্যে সুবিচার করুন এবং খেয়ালখুশির অনুসরণ করবেন না। কেননা এটা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয় তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি, কারণ তারা বিচার দিনকে ভুলে আছে। ’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ২৬)

আলোচ্য আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যারা বিচারকাজে সুবিচার নিশ্চিত না করে খেয়ালখুশির অনুকরণ করবে, তারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হবে। আর পথভ্রষ্টদের জন্য আছে জাহান্নামের কঠিন আজাব।

বিচারকাজে ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করতে নবীজিকে নির্দেশ

কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তাআলা মানুষকে ন্যায়ের পথে পরিচালিত হওয়ার আদেশ করেছেন। নবীজি (সা.), যিনি ছিলেন ন্যায়-নীতির প্রতীক, তাঁকে উদ্দেশ করে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আল্লাহর দেখানো পথে আপনি বিচার করতে পারেন। আর আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষে বিতর্ককারী হবেন না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৫)

অন্যদিকে সব মানুষকে সতর্ক করে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার হকদারকে ফিরিয়ে দিতে। আর তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকাজ পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচারকাজ সম্পাদনা করবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)

নবীজির বর্ণনায় তিন শ্রেণির বিচারক এবং তাদের পরিণতি

নবীজি (সা.) বিচারকদের তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন এবং তাদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন। বুরাইদা (রা.) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘বিচারক তিন শ্রেণির।

তন্মধ্যে দুই শ্রেণি জাহান্নামি আর এক শ্রেণি জান্নাতি। যে বিচারক মানুষের অধিকার বুঝে সে অনুযায়ী বিচারকাজ করবে সে জান্নাতি। আর যে বিচারক মানুষের অধিকার বুঝেছে, কিন্তু তা অনুযায়ী বিচারকাজ করেনি এবং যে বিচারক মানুষের অধিকার না বুঝে মূর্খতাবশত বিচারকাজ করবে, তারা উভয়ে জাহান্নামি । (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ২১৫৭১)

সে জন্য বিচারকদের উচিত সঠিকভাবে মামলা পাঠ করা এবং প্রকৃত দোষীকে শাস্তির মুখোমুখি করা। কারো কোনো চাপে কিংবা উেকাচের লোভে এই মহান পেশাকে কলুষিত করে নিজেকে জাহান্নামের উপযুক্ত করা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

ন্যায়-বিচ্যুত বিচারকের পরামর্শক শয়তান

ন্যায়পরায়ণ বিচারকের সাহায্যকারী স্বয়ং আল্লাহ। পক্ষান্তরে ন্যায়-বিচ্যুত জালিম বিচারকের বন্ধু অভিশপ্ত ইবলিস। আর ইবলিস যার সঙ্গী হবে তার ধ্বংস অনস্বীকার্য। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত বিচারকের সঙ্গে থাকেন, যতক্ষণ সে জুলুম না করে ন্যায়ের ওপর অটল থাকে। কিন্তু যখনই সে অন্যায় করে, তখন আল্লাহ তার থেকে মুক্ত হয়ে যান। তখন শয়তান তাকে ধরে ফেলে। তার সঙ্গী ও পরামর্শক হয়ে যায়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৩০)

উৎকোচ গ্রহণকারী বিচারকের প্রতি নবীজির অভিসম্পাত

বিচারকাজে অন্যায়-অন্যায্য রায় প্রদানের জন্য যারা উৎকোচ গ্রহণ করে, ঘুষ নেয়, তাদের প্রতি নবীজি অভিসম্পাত করেছেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘বিচারকাজ ঘুষদাতা ও গ্রহীতার প্রতি নবীজি অভিসম্পাত করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯০২৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ঘুষদাতা গ্রহীতা উভয়ে জাহান্নামি।’ (মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস : ১০৩৭)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!