দুর্নীতিবাজদের ছদ্মবেশ ধারণ, ইসলাম কী বলে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, আগস্ট ২৭, ২০২৪
  • 44 পাঠক

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ । ২৭ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।

দুর্নীতির ছদ্মাবরণে সম্পদের পাহাড় গড়ার কারিগরের জীবন কখনো কখনো গড়ায় জেলখানায়! অথচ অপরাধী অনুতপ্ত হয়ে ধরা দেয় না স্বেচ্ছায়, বরং ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়। শান্তির সমাজ বিনির্মাণে ইসলাম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেই অপরাধ দমনে কঠোরতম অবস্থান জানান দেয়—‘ আল্লাহর বিধান কার্যকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের প্রভাবান্বিত না করে, তোমরা যদি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হও।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২)।

ইসলামের সমাজ বাস্তবতায় অপরাধী অনুতপ্ত হয়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে শাস্তির আওতায় নিজেকে সমর্পণ করে ধর্মভীরুতা ও পারলৌকিক মুক্তি প্রত্যাশায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মার্জনা করেন…।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৫৩)।

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘ প্রত্যেক আদম সন্তান দোষত্রুটিপূর্ণ ও অপরাধী, আর অপরাধীর মধ্যে ওই সব লোক উত্তম, যারা তাওবা করে।’ (তিরমিজি)

ইসলামের ইতিহাসে এর উদাহরণ আছে :

১. তাবুকের যুদ্ধের সময় তিনজন সাহাবির অনিচ্ছাকৃত ও সাময়িক ভুলের আত্মগ্লানির প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয় সুরা তাওবার কয়েকটি আয়াত।
২. বুখারি শরিফে আছে ‘ এক ব্যক্তি ১০০ মানুষ খুন করেছিল। খুনি তারপর আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়। তাই আল্লাহ ওই জঘন্য অপরাধীকেও ক্ষমা করেন।’
৩. বুখারি শরিফের অপর বর্ণনায় আছে ‘ মইজ ইবনু মালিক আসলামি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সমীপে উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘ হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয়ই আমি আমার আত্মার ওপর জুলুম করেছি…আমি চাই, আপনি আমাকে পবিত্র করবেন।’
৪. মুসলিম শরিফে আছে, গামিদি গোত্রের এক অনুতপ্ত মহিলা মহান আল্লাহর শাস্তি তার ওপর কার্যকরণের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সমীপে ফিরে ফিরে এসেছে।

অবৈধ অঢেল সম্পদ মূল্যহীন

‘ রিজিকদাতা ’ মহান আল্লাহর ব্যবস্থা ‘ রিজকান কারিমা ’ (সম্মানজনক জীবিকা) এবং জীবিকা অর্জনের কৌশল ‘ হালালান তাইয়্যিবা ’ (বৈধ ও পবিত্র)। অথচ কেউ কেউ জীবিকা অর্জনে ‘ দুর্নীতি ’র মতো পথ-পদ্ধতি বেছে নেয়। পাপ-পতনের মাধ্যম দুর্নীতি ; জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে যথেষ্ট। এতে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা লঙ্ঘিত হয় -‘ অন্যায় অবৈধভাবে তোমরা একে অন্যের ধন-সম্পদ গ্রাস করো না এবং এই লক্ষ্যে তা বিচারকের কাছে উপস্থাপন কোরো না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৮)।

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘ হে বিশ্বাসীরা! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২০)।

দুর্নীতিবাজরা বাঁচার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করে ইসলাম ও মুসলমানের অসম্মান করে। ইসলামে ছদ্মবেশী হওয়া ও রূপবিকৃতির অনুমোদন নেই। সুরা বাকারার ৪২ নম্বর আয়াতের নির্দেশনা—‘ তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিয়ো না এবং জেনেবুঝে সত্য গোপন কোরো না।’

সৃষ্টিগত পরিবর্তন ঘটানোর অধিকার মহান আল্লাহ মানুষকে দেননি। ইরশাদ হয়েছে ‘ হে মুমিনরা! আল্লাহ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট যেসব বস্তু হালাল করেছেন, সে সমুদয়কে তোমরা হারাম কোরো না এবং সীমা লঙ্ঘন কোরো না । আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮৭)।

মহান আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের বাণী : ‘ শয়তান বলল, আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের পথভ্রষ্ট করব—তাদের আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ করব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১৯)।

ইসলামের দৃষ্টিতে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ, অসৎ পন্থাবলম্বন কবিরা গুনাহ। আর এটি মুনাফিকির লক্ষণ।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!