দিশারী ডেস্ক। ১৮ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।
অঙ্গীকার (ওয়াদা) পূর্ণ করা মুমিনের অন্যতম গুণ। এই গুণ অর্জন না করলে কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের অঙ্গীকার পূরণে যত্নবান হওয়ার আদেশ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘ হে মুমিনরা! তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করো…। ’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ১)
কারণ কঠিন কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ এই অঙ্গীকারের ব্যাপারেও হিসেব নেবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘ আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। অবশ্যই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৪)
এখানে অঙ্গীকার বলতে শুধু বান্দার সঙ্গে কৃত অঙ্গীকারই উদ্দেশ্য নয়, বরং বান্দার সঙ্গে হোক কিংবা আল্লাহর সঙ্গে, সব ধরনের অঙ্গীকারই পূরণ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে কিছু আয়াতে তা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ আর আল্লাহর অঙ্গীকার পূরণ করো।’ (সুরা : আল আনআম, আয়াত : ১৫২)
এ অঙ্গীকারের দাবি হলো, মহান আল্লাহর কোনো নির্দেশ অমান্য করা যাবে না। তিনি যে কাজের আদেশ দেন, তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি যে কাজে নিষেধ করেন, তার কাছেও যাওয়া যাবে না এবং সন্দেহযুক্ত কাজ থেকেও বাঁচতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার পুরোপুরি আনুগত্য করতে হবে। এ ছাড়া এর অর্থ কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত বিশেষ বিশেষ অঙ্গীকারও হতে পারে। যেমন—আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুলদের মুখে যেসব অঙ্গীকারের ঘোষণা দিয়েছেন সেগুলো পূর্ণ করা।
আল্লাহ বলেন, ‘ হে বনি আদম! আমি কি তোমাদের থেকে এই অঙ্গীকার নিইনি যে তোমরা শয়তানের দাসত্ব কোরো না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ? ’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৬০)
অনুরূপভাবে মানুষের মধ্যকার পরস্পর যেসব অঙ্গীকার হয়ে থাকে সেগুলোও মান্য করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ আর প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণ করবে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৭)
অঙ্গীকার ভঙ্গ করাকে আমাদের সমাজে অনেক হালকা মনে করা হয়। কিছু মানুষতো মনে করে, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, মিথ্যা বলা পেশাদারি, অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হারাম ও মুনাফেকি। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরূপ খুতবা খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথা বলেননি যে যার আমানতদারি নেই তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়াদা-অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দ্বিনও নেই। (শুআবুল ঈমান)
অর্থাৎ কোনো মানুষ যখন দ্বিনের ধার ধারে না, তখনই সে অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। হাদিসের ভাষায় একে মুনাফিকের অভ্যাস বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি ; ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে ; ২. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩)
তাই কেউ যদি প্রকৃত মুমিন হতে চায় এবং দুনিয়া-আখিরাতের লাঞ্ছনা থেকে বাঁচতে চায়, তার উচিত অঙ্গীকারের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া।
Leave a Reply