স্বামীকে ভাই ডাকার বিধান

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, জুন ১৪, ২০২২
  • 275 পাঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

—————–

রেওয়াজের ওপর। বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে সাধারণত স্বামীর নাম ধরে ডাকাকে অসম্মানজনক ও বেয়াদবি মনে করা হয়, যদিও আরবদেশে স্বামীর নাম ধরে ডাকার প্রচলন ছিল। এ ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো, রেওয়াজ থাকলে এবং প্রয়োজন হলে যেকোনো সময় স্বামীর নাম উচ্চারণ করা যাবে।

স্ত্রী স্বামীকে যেভাবে ডাকবে : স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে সম্মানসূচক নাম ব্যবহার করে ডাকবে।

বিশেষ করে স্ত্রী তার স্বামীকে সম্মান প্রদর্শন করব—এটাই স্বাভাবিক। তাই এ সম্পর্কে ফাতাওয়া শামিতে বর্ণিত আছে, ছেলে কর্তৃক তার বাবাকে এবং স্ত্রী কর্তৃক তার স্বামীকে নাম ধরে ডাকা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়।

ইবনে আবেদিন শামি (রহ.) ওই বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘বরং এমন শব্দের মাধ্যমে ডাকা উচিত—যেটা সম্মান বোঝাবে। যেমন—হে আমার সর্দার, অমুকের বাবা ইত্যাদি অথবা সম্মানসূচক পেশার সঙ্গে সংযুক্ত করে ডাকবে। যেমন—ইমাম সাহেব, ডাক্তার সাহেব ইত্যাদি)। কেননা বাবা ও স্বামী—তাদের উভয়ের হক একটু বেশি। (রাদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার : ০৬/৪১৮)

স্ত্রীকে বোন বলে ডাকার বিধান : স্ত্রীকে বোন বা আপু বলে ডাকা মাকরুহ। হাদিস শরিফে এসেছে, ‌‘‘এক ব্যক্তি নিজ স্ত্রীকে বলল, হে আমার বোন। রাসুল (সা.) তা শুনে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে কি তোমার বোন?’ তিনি তা অপছন্দ করেন এবং তাকে এভাবে ডাকতে নিষেধ করেন। ’’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২২০৪)

একইভাবে স্বামীকে ভাই বলে সম্বোধন করাও অনুচিত। তবে কেউ এমন বলে ফেললে এর কারণে বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হবে না। (ফাতহুল কাদির ৪/৯১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫০৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭০)

তবে স্বামী স্ত্রীকে বোন বলে সম্বোধনের মাধ্যমে এমন ইচ্ছা করে যে, আমার বোন যেমন আমার জন্য হারাম, তুমিও তেমনি আমার জন্য হারাম; তাহলে তা ‘জিহার’-এর অন্তর্ভুক্ত হবে। এমতাবস্থায় স্ত্রী-স্বামীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল থাকবে না যতক্ষণ না স্বামী ‘কাফ্ফারা’ আদায় করে। আর জিহারের কাফ্ফারা হলো ধারাবাহিকভাবে দুই মাস রোজা রাখা বা ৬০ জন অসহায় ব্যক্তিকে খাওয়ানো। (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত : ৩)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের ‘জিহার’ করে তারা যেন জেনে রাখে যে, তারা তাদের মা নয়, তাদের মা তো তারাই যারা তাদেরকে প্রসব করেছে, তারা তো কেবল অশালীন ও মিথ্যা কথা বলে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী। ’’ (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত : ২)

তাই এ ধরনের অহেতুক ঝামেলা এড়াতে স্ত্রীকে বোন সম্বোধন করা থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ।

স্বামীর নাম ধরে ডাকা কি জায়েজ : স্বামী-স্ত্রী যদি সমবয়সী হয় কিংবা বন্ধুসুলভ হয় এবং স্বামী যদি তার নাম ধরে ডাকলে মনে কষ্ট না পায়, তাহলে নাম ধরে ডাকলে কোনো সমস্যা নেই। কেননা ইসলামে এর নজির আছে।

ইবরাহিম (আ.) যখন তাঁর স্ত্রী হাজেরা এবং শিশুপুত্র ইসমাইলকে মক্কার জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে চলে যাচ্ছিলেন, তখন পেছন থেকে তাঁর স্ত্রী তাঁকে এভাবে ডাকেন—‘হে ইবরাহিম!’ পুরো ঘটনা সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে আছে—ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর স্ত্রীর (সারার) মধ্যে যা হওয়ার তা হয়ে গেল, তখন ইবরাহিম (আ.) (শিশুপুত্র) ইসমাইল ও তাঁর মাকে নিয়ে বের হলেন। তাঁদের সঙ্গে একটি থলে ছিল, যাতে পানি ছিল। ইসমাইল (আ.)-এর মা মশক থেকে পানি পান করতেন। ফলে শিশুর জন্য তাঁর স্তনে দুধ বাড়তে থাকে।

অবশেষে ইবরাহিম (আ.) মক্কায় পৌঁছে হাজেরাকে একটি বিরাট গাছের নিচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। অতঃপর ইবরাহিম (আ.) নিজ পরিবারের (সারার) কাছে ফিরে চললেন। তখন ইসমাইল (আ.)-এর মা কিছু দূর পর্যন্ত তাঁকে অনুসরণ করেন। অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন তিনি পেছন থেকে ডেকে বলেন, ‘হে ইবরাহিম! আপনি আমাদের কার কাছে রেখে যাচ্ছেন?’  ইবরাহিম (আ.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে। ’ হাজেরা (আ.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৬৫)

এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে স্বামীর নাম ধরে ডাকার প্রচলন আছে। সুতরাং এ বিষয়ে সামাজিক নিয়ম-নীতি, সম্মান ও ভদ্রতার প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!