প্রবীণের হাহাকারে কাঁপে আল্লাহর আরশ

  • আপডেট সময় শনিবার, অক্টোবর ১, ২০২২
  • 215 পাঠক

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ

—————————–

১ অক্টোবর ‘বিশ্ব প্রবীণ দিবস’। এখন প্রবীণরা অনেকভাবে উপেক্ষিত—‘কঠিন ঝামেলা’। কারো কারো স্বার্থ-ভাবনায়, অসুস্থ-অক্ষম প্রবীণরা আজ বিপন্ন। তারাই জীবন-যৌবনের সর্বস্ব সন্তানের জন্য লুটিয়ে দিয়েও নিদানেরকালে অপাঙক্তেয়।

কবির ভাষায় : ‘…টলমল করে খোদার আরশ/ব্যথিত যখন রোদন করে। ’
মানবতার স্খলন ‘বৃদ্ধাশ্রম’

‘বৃদ্ধাশ্রম’ আমাদের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় কি? সন্তান-সান্নিধ্য, বার্ধক্যপীড়িত, মৃত্যুপথযাত্রীদের একমাত্র সুখ সান্ত্বনা। কিন্তু হায়! নানা রকম জিনিস, বিদেশি কুকুর, দামি আসবাবের সঙ্গে Senior Citizen প্রসঙ্গে নচিকেতা চক্রবর্তীর কটাক্ষ : .‘..স্বামী-স্ত্রী আর অ্যালসেশিয়ান/জায়গা বড়ই কম/আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম। ’

প্রবীণদের দুর্ভাগ্যের রূঢ় আখ্যান

——————————-

প্রবীণের প্রতি অযত্ন-অবহেলা এখন নির্যাতন পর্যায়ের বৈশ্বিক সমস্যা। এমনকি তা অনেক সময় প্রবীণদের মৃত্যুর কারণও হয়। WHO-র মতে বিশ্বে বর্তমানে প্রতি ছয়জনে একজন প্রবীণ নির্যাতনের শিকার, যাঁরা সংখ্যায় ১৪ কোটিরও বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এস এম আতিকুর রহমান গত প্রায় চার দশক গবেষণায় বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বার্ধক্য এমন একটা বিষয়, যেটা কেউ বুঝতে চায় না, জানতে চায় না, শুনতে চায় না। প্রবীণদের কষ্টের কোনো সীমা নেই, বিশেষ করে নারী প্রবীণদের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি। ’

ভরণ-পোষণ আইন ২০১৩

———————–

‘পিতামাতার ভরণ-পোষণ আইন ২০১৩’-এ ‘ভরণ-পোষণ অর্থ খাওয়াদাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদান’ বোঝানো হয়েছে। আইনটির ধারা-উপধারা সন্তান কর্তৃক লঙ্ঘন, অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত, অনাদায়ে তিন মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। প্রত্যাশা, আইনের কঠোরতম প্রয়োগের মাধ্যমে ‘সন্তান পরিত্যক্তা জননী’ ও প্রবীণের হাহাকার বন্ধ হবে।

প্রবীণবান্ধব রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি

————————-

১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর থেকে ‘বয়স্ক ভাতা’ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়েছে।

এ ছাড়া আছে : তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা, পরিবার ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধি ও আবাসন, আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে তাদের মনোবল জোরদারকরণ, চিকিৎসা ও পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা।

ইসলামের নির্দেশনা

——————–

নগরায়ণ ও বহুমুখী ব্যস্ততায় আমাদের মধ্যেও চিরচেনা পারস্পরিক দায়বদ্ধতা লোপ পাচ্ছে। প্রবীণদের পাশে দাঁড়াতে ইসলামী দর্শনই যথার্থ। আল্লাহর নির্দেশ—‘মাতা-পিতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। …তাদের প্রতি ‘উহ্’ শব্দটিও উচ্চারণ করবে না। …হে প্রভু, তাদের ওপর সদয় হোন। যেমন শিশুকালে তারা আমাদের প্রতি সদয় ছিলেন। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩, ২৪)

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘মা সন্তানকে কষ্টের ওপর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছেন। সুতরাং …সে যেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৪)

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘মাতা-পিতার সন্তুষ্টিই আল্লাহর সন্তুষ্টি, মাতা-পিতা অসন্তুষ্টিই আল্লাহর অসন্তুষ্টি। ’ (তিরমিজি)

মানুষের পারস্পরিক দায়িত্ব একটি আমানত ও এটাই ইসলামের দর্শন। এ জন্যই প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে প্রবীণদের সম্মান করে না, সে আমার দলভুক্ত (উম্মত) নয়। ’ (আবু দাউদ)

বয়স্কদের প্রতি সম্মানের তাৎপর্য প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃদ্ধকে তার বয়সের কারণে সম্মান করল, আল্লাহ অন্যের দ্বারা তার সম্মান করাবেন। ’ (আবু দাউদ)

এক সময় জীবন-যৌবনের স্বর্ণালি অধ্যায়ে মাতা-পিতার প্রার্থনা ছিল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে—

‘হে প্রভু,

দাও যে এমন স্ত্রী-সন্তান (পরিজন) ওদের সবাই যেন—

শীতল করে, শুধুই মোদের নয়ন। ’

(কাব্যানুবাদ, ফুরকান, আয়াত : ৭৪)

অথচ আজ সবার কাছ থেকে একা হয়ে ওই প্রবীণরা যখন আল্লাহর সান্নিধ্যের অপেক্ষায় থেকে থেকে নীরব অভিমানে চলে যান, তখনো কারো কারো বোধোদয় হয় না:

অভিমানে আপন মানুষ হয়ে যায় পর।

অতি কষ্ঠে ওই মানুষ, হয়ে যায় পাথর…।

শেষকথা

———-

বেঁচে থাকলে বার্ধক্য আসবেই; কচুপাতার পানির মতো যৌবন গড়াবে নিশ্চিত বার্ধক্যে। বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু ৭৪ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় সাত শতাংশ। ২০৫০-এ হবে চার কোটি বা আরো বেশি। কাজেই, সবাইকে আন্তরিক হতে হবে ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!