অর্থের বিনিময়ে সুপারিশ করা জঘন্য পাপ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৫, ২০২২
  • 162 পাঠক

আতাউর রহমান খসরু

————————-

গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন ব্যক্তির সুরাপিশ গ্রহণের প্রচলন আছে সমাজে। সমাজের যে ক্ষেত্রে যার গ্রহণযোগ্যতা আছে, সে ক্ষেত্রে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। ইসলামী শরিয়তে মৌলিকভাবে সুপারিশ বৈধ এবং নেকির কাজ। আর সুপারিশ করার ক্ষেত্রে শরিয়তের সীমালঙ্ঘন করলে তাকে অবৈধ এবং তা পাপের কাজ।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ কোনো ভালো কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে এবং কেউ কোনো মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে নজর রাখেন। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৫)

সুপারিশ করা পুণ্যের কাজ : ইসলামের দৃষ্টিতে সুপারিশ করা শুধু বৈধ নয়; বরং তা কখনো কখনো সওয়াব লাভের মাধ্যম। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে যখন কোনো সাহায্যপ্রার্থী আসত কিংবা তাঁর কাছে কোনো প্রয়োজনের কথা বলা হতো, তখন তিনি বলতেন, তোমরা সুপারিশ কোরো, তাহলে তোমরা পুরস্কৃত হবে। আর আল্লাহ যা চান, তাঁর নবীর জবানে সেই ফয়সালা করাবেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৩২)

সুপারিশ সাক্ষ্যস্বরূপ : কারো জন্য সুপারিশ করার অর্থ হলো ব্যক্তির পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া। সুতরাং সাক্ষ্য দানে যেসব বিষয়ের শর্তারোপ করা হয়, তা সুপারিশের ক্ষেত্রেও করা হবে। যেমন জেনে-বুঝে সুপারিশ করা, সত্য বলা, সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ না ঘটানো ইত্যাদি।

হাদিসে এসেছে, নবী কারিম (সা.) একবার হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। তখন সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি কি তোমাদের বলব বড় বড় গুনাহ কী? সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, অবশ্যই বলুন। রাসুল (সা.) বললেন, বড় বড় গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা ও মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। এ কথা বলে, রাসুলুল্লাহ (সা.) হেলানাবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে পড়লেন এবং বললেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। তিনি কথাটি তিনবার বললেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪২)

সুপারিশ করা অন্যায় যখন : সুপারিশ করা অন্যায় হয় দুই কারণে। যখন তা কোনো অযোগ্য ব্যক্তির জন্য করা হয় অথবা যখন কোনো অন্যায় কাজের জন্য করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কেউ কোনো মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে নজর রাখেন। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৫)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, উল্লিখিত আয়াত মানুষের প্রয়োজন বিষয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। কেউ যদি মানুষের উপকার করতে বৈধ কাজে বৈধভাবে সুপারিশ করে, তবে সে তার প্রতিদান পাবে। আর কেউ যদি কারো ক্ষতি করতে অন্যায় কাজে, অযোগ্য ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করে তবে তার দায়ভার সুপারিশকারীর ওপরই বর্তাবে। প্রকৃতপক্ষে উত্তম সুপারিশ হলো নেক ও পুণ্যের কাজে হয়ে থাকে এবং মন্দ সুপারিশ হলো পাপের কাজে হয়ে থাকে। সুতরাং কেউ যদি মানুষের ভেতর মীমাংসা করতে সুপারিশ করে, তবে সে পুণ্যের অধিকারী হবে আর কেউ যদি বিবাদ ছড়িয়ে দিতে একজনের কথা অপরজনকে বলে বেলায়, তবে তার গুনাহ হবে। (তাফসিরে কুরতুবি)

অন্যায় সুপারিশ করার ক্ষতি : অযোগ্য বা অন্যায় কাজে সুপারিশ করলে মানুষ তিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা হলো : ক. একজন যোগ্য ব্যক্তি বঞ্চিত হয়, খ. সেবাগ্রহীতা সাধারণ মানুষ যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়, গ. আর যদি কোনো অপরাধীকে মুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়, তবে সমাজে অন্যায়-অবিচার বেড়ে যায়। এতে মানুষের জীবন, সম্পদ ও অধিকার নষ্ট হয়। আর ইসলাম মানুষকে সব ধরনের ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহ্যও করা যাবে না। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৪১)

অন্যত্র তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করবে, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দেবে, আল্লাহ তাকে কষ্ট দেবেন। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৪২)

অন্যায় সুপারিশে জাতি ধ্বংস হয় : যখন কোনো সমাজে অন্যায়ভাবে সুপারিশ করা এবং তা আমলে নেওয়ার চর্চা শুরু হয়, তখন সে জাতির ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে। চুরি অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার এক নারীর শাস্তি মওকুফ করার ব্যাপারে নবীজি (সা.)-এর সুপারিশ করা হলে তিনি বলেন, ‘তোমাদের আগের লোকেরা ধ্বংস হয়েছে এ জন্য যে তাদের কোনো ধনী লোক চুরি করত, তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন কোনো দুর্বল লোক চুরি করত, তারা তার ওপর হদ বা দণ্ড বাস্তবায়ন করত। আল্লাহর কসম, যদি ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদও চুরি করত, তাহলে আমি তার হাতও কাটার নির্দেশ দিতাম। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪৯০১)

অর্থের বিনিময় সুপারিশ করা জঘন্য পাপ : সমাজের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের ভেতর এই চর্চা আছে যে তারা অর্থ গ্রহণ করে মানুষের জন্য সুপারিশ করে। অথচ যার জন্য সুপারিশ করছে তাকে হয়তো সে চেনেও না অথবা ক্ষমতাসীন ব্যক্তির সুপারিশে কোনো অপরাধী তার অপরাধ থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের জন্য কোনো বিষয়ে সুপারিশ করার কারণে যদি সে তাকে কিছু উপহার দেয় এবং সে তা গ্রহণ করে তাহলে সে সুদের একটি বড় দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৫৪১)

উল্লিখিত হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, অর্থের বিনিময়ে সুপারিশ করা ঘুষ। আর ঘুষখোরের শাস্তি জাহান্নাম। সুতরাং ক্ষমতা, পদ-পদবির প্রভাব খাটিয়ে কারো জন্য অন্যায় সুপারিশ করা এবং তার বিনিময়ে অর্থগ্রহণ করা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

আল্লাহ সবাইকে পাপাচার থেকে রক্ষা করুন। আমিন

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!