মুফতি তাজুল ইসলাম
——————-
শয়তান শব্দটির মধ্যে বিদ্রোহ, অবাধ্যতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, পথভ্রষ্টতা, অন্যায় ও অসৎ কাজে নিবেদিত হওয়ার অর্থ রয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্য জিন ও মানুষ উভয়ের মধ্যে থাকতে পারে। জিন জাতির মধ্যে এসব দোষ থাকলে যেমন তার নাম হয় শয়তান, তেমনি মানুষের মধ্যে থাকলেও তার নাম শয়তান হবে। কাতাদা (রহ.) বলেন, ‘জিন ও মানুষের মধ্যে শয়তান রয়েছে।
তারা একে অন্যের কাছে মিথ্যা ও কল্পিত কথা প্রচার করে, একে অন্যকে খোদাদ্রোহিতা, ভ্রষ্টতা ও পাপাচারে উদ্বুদ্ধ করে। ’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)
পবিত্র কোরআনে ‘শয়তান’ (একবচন) শব্দটি ৬৩ বার আর ‘শায়াতিন’ (বহুবচন) শব্দটি ১৮ বার উল্লেখ করা হয়েছে। পৃথিবীতে শয়তান মুমিনের প্রধান শত্রু। কোরআনের অসংখ্য স্থানে মহান আল্লাহ শয়তান সম্পর্কে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না; সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৮)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৮)
পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে যে কাদের পেছনে শয়তান লেগে থাকে। এক আয়াতে এসেছে, ‘আমি কি তোমাদের জানাব কার কাছে শয়তান অবতীর্ণ হয়? শয়তান অবতীর্ণ হয় ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর কাছে। ’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ২২১-২২২)
যারা পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী, তাদের পেছনেও শয়তান লেগে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, এটা এই জন্য যে শয়তান যা প্রক্ষিপ্ত (পাঠ) করে, তিনি তা তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেন, যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যারা পাষাণ হৃদয়। নিশ্চয়ই জালিমরা দুস্তর মতভেদে রয়েছে। (সুরা : হজ, আয়াত : ৫৩)
যারা আল্লাহর স্মরণ ও ইবাদত থেকে গাফিল, তাদের পেছনে শয়তান লেগে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয়, আমি তার জন্য নিয়োজিত করি এক শয়তান। অতঃপর সে হয় তার সহচর। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথ থেকে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে তারা সৎপথে আছে। ’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩৬-৩৭)
আল্লাহর কথা যাদের মনে পড়ে না, যাদের মন আল্লাহকে স্মরণ করে না, শয়তান তাদের পেছনে লেগে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘শয়তান তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। ফলে তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর স্মরণ। তারা শয়তানের দল। সাবধান! শয়তানের দল অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত। ’ (সুরা : মুজাদালা, আয়াত : ১৯)
ইবলিশ শয়তানের ৯টি সন্তান রয়েছে—
► জালিতুন : বাজারগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে, আর নিজের পতাকা গেড়ে থাকে।
► ওয়াসিন : মানুষদের আকস্মিক বিপদে ফেলার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে।
► লাকুস : অগ্নি পূজারিদের সঙ্গে থাকে।
► আওয়ান : শাসকদের সঙ্গে থাকে।
► হাফফাপ : মদ্যপায়ীদের সঙ্গে থাকে।
► মুররাহ : গান-বাজনাকারীদের সঙ্গে থাকে।
► মুসাব্বিত : বাজে কথাবার্তা সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকে।
► দাসিম : ঘরের মানুষদের ভালো কাজ থেকে বিরত ও খারাপ কাজের আদেশ দেয়।
► ওয়ালহান : অজু, নামাজ ও অন্য ইবাদতে কুমন্ত্রণা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
(আল মুনাব্বিহাতি লিল আসকালানী, পৃষ্ঠা : ৯১)
মহান আল্লাহ আমাদের শয়তানের প্ররোচনা থেকে হেফাজত করুন।
Leave a Reply