মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
———————-
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এটা এ জন্য যে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের কাজ নিষ্ফল করে দেবেন।’ [ সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ৯ ]
মুমিনের অসতর্কতার কারণে অনেক সময় তার নেক আমলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। অথচ সে এসব কাজের বিনিময়ে সাওয়াব প্রত্যাশা করে। যেসব কাজে বান্দার নেক আমল নষ্ট হয় তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
১. আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা : আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করলে ঈমান ও আমল নষ্ট হয়ে যায়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই ওহি হয়েছে, তুমি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করলে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত। ’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৬৫)
২. পরকাল অস্বীকার করা : পরকাল অস্বীকার করলে ব্যক্তির আমল নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার নিদর্শন ও আখিরাতের সাক্ষাৎ অস্বীকার করে তাদের কাজ নিষ্ফল হয়। তারা যা করে সে অনুযায়ীই তাদের প্রতিফল দেওয়া হবে। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৪৭)
৩. দ্বিন অপছন্দ করা : মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে বলেন, ‘এটা এ জন্য যে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের কাজ নিষ্ফল করে দেবেন। ’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ৯)
৪. আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ করা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এটা এ জন্য যে তারা তার অনুসরণ করে, যা আল্লাহর অসন্তোষ জন্মায় এবং তার সন্তুষ্টিকে অপ্রিয় গণ্য করে। তিনি তাদের আমল নিষ্ফল করে দেনে। ’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ২৮)
৫. দ্বিনি কাজে বাধা দেওয়া : দ্বিনি কাজে বাধা দিলে মানুষের আমল নষ্ট হয়ে যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা কুফরি করে এবং মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে এবং নিজেদের কাছে পথের দিশা ব্যক্ত হওয়ার পর রাসুলের বিরোধিতা করে। তারা আল্লাহর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি তো তাদের আমল নিষ্ফল করবেন। ’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ৩২)
৬. প্রদর্শনপ্রিয়তা : নেক কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। কিন্তু যখন কেউ আল্লাহর পরিবর্তে মানুষের প্রশংসা ও পুরস্কার কামনা করে, তখন তার নেক আমল নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি পার্থিব জীবন ও তার শোভা কামনা করে, দুনিয়াতে আমি তাদের কাজের পূর্ণ ফল দান করি এবং তাতে তাদের কম দেওয়া হবে না। তাদের জন্য পরকালে অগ্নি ছাড়া অন্য কিছু নাই এবং তারা যা করে পরকালে তা নিষ্ফল হবে। তারা যা করে তা নিরর্থক। ’ (সুরা হুদ, আয়াত : ১৫-১৬)
৭. আল্লাহর প্রতি অমূলক ধারণ করা : আল্লাহর প্রতি অমূলক ধারণা বান্দার সব আমল নষ্ট করে ফেলতে পারে। বিশেষত আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক লোক বলল, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ অমুক লোককে মাফ করবেন না। আর আল্লাহ তাআলা বলেন, সে লোক কে? যে শপথ খেয়ে বলে যে আমি অমুককে মাফ করব না? আমি তাকে মাফ করে দিলাম এবং তোমার আমল (শপথ)-কে নষ্ট করে দিলাম কিংবা সে যেমন বলেছেন। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৫৭৫)
৮. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অসম্মান করা : আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সম্মান রক্ষা করা মুমিনের দায়িত্ব। কেউ তা নষ্ট করলে তার আমল নষ্ট হয়ে যাবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের ওপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু কোরো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চ স্বরে কথা বলো তার সঙ্গে সেরূপ উচ্চ স্বরে কথা বোলো না। কেননা এতে তোমাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসরে। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ২)
৯. খোঁটা দেওয়া : কারো প্রতি অনুগ্রহ করে খোঁটা দিলে আমল নিষ্ফল হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, দানের কথা প্রচার করে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে সে ব্যক্তির মতো নিষ্ফল কোরো না যে নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৪)
১০. গোপনে পাপ করা : আল্লাহ গোপনে কাজ করা অপছন্দ করেন। তাই প্রকাশ্য পাপের মতো গোপন পাপও পরিহার করা উচিত। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, আমি আমার উম্মতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূকিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের কাছে বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেন, তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতো ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৪৫)।
Leave a Reply