সাইয়েদ আল আমিন
১৩ জানুয়ারি, ২০২৩
—————-
পৃথিবীর সব মানুষের আচার-ব্যবহার এক রকম নয়। সবার ধর্ম, জীবনযাপন, বিশ্বাস, পরিবার, শিক্ষা এক রকম হয় না। তবে মার্জিত ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ হতে পারে অনন্য মর্যাদার অধিকারী।
আচার-আচরণে যে যত মার্জিত হয়, মর্যাদা ও মহিমায় সে তত উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে থাকে। পরকালে যখন মানুষের জীবনের সব কাজ ও অর্জন পরিমাপ করা হবে, তখন সবচেয়ে বেশি ওজনদার হবে মার্জিত ব্যবহার।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মিজানের পাল্লায় আখলাকে হাসানাহ’ তথা উত্তম চরিত্রের চেয়ে ভারী আর কিছু হবে না। উত্তম আখলাক তার মালিককে মর্যাদার দিক থেকে সালাত-সিয়ামের স্তরে পৌঁছে দেয়’ (মাজমাউজ যাওয়ায়েদ : ৮/২৫)। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ঈমানের পর প্রধানতম দুটি বিষয় হচ্ছে-লজ্জাশীলতা ও উত্তম আখলাক। (শারহু জামে সগির : ৬/২০৫)
মার্জিত ব্যবহার ও সুন্দর আচরণের এ আমল শুধু মুসলিমদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মহান আল্লাহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতিও উত্তম আচরণের নির্দেশ করেছেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তায়ালা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে ওহি পাঠিয়ে নির্দেশ করলেন, ‘তোমার আচরণ সুন্দর করো যদিও সেটা কাফেরদের সঙ্গে হয় এবং নৈকট্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হও। কেননা, আমার বিধান অবধারিত, যারা উত্তম আচরণ করবে তাদেরকে আমার আরশের ছায়াতলে স্থান দেব।’ (তাখরিজুল কাশশাফ : ২/৩২৬)
পৃথিবীতে যেমন নিজে পুরোপুরি প্রশান্তি অর্জন করা যায় না, তদ্রুপ মানুষকেও শত দান-অনুদানের মাধ্যমে পুরোপুরি খুশি করা যায় না। তবে শুধু সহাস্য মার্জিত ব্যবহার এমন বিষয়, যার মাধ্যমে মানুষকে সহজে সন্তুষ্ট করা যায়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘তোমরা মানুষকে সম্পদ দিয়ে খুশি করতে পারবে না। বরং হাসিমুখ ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে তাদের খুশি রাখো’ (তাখরিজ ইহইয়ায়ে উলুমুদ দ্বীন : ৩/৬২)। মার্জিত ব্যবহারে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে অগ্রগামী হবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘মানুষকে যে আমল সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হচ্ছে-তাকওয়া ও উত্তম আখলাক।’ (তিরমিজি : ২০০৪)
মানুষ সমাজের কোন কোন মানুষের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে, তা অনেক বিস্তৃত বিষয়। যেমন পিতামাতার সঙ্গে আচরণ, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ। পাড়া- প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সহপাঠী, শিক্ষার্থী। এমনকি দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রের প্রতিও শিষ্টাচারের মাধ্যমে সদাচরণ দেখানো উচিত। পরিচিত-অপরিচিত নিজ ধর্ম ও অন্য ধর্মাবলম্বী সবার সঙ্গেই সদাচরণ করা ইসলামের সৌন্দর্য ও উন্নত চরিত্রের নিদর্শন।
হাদিসে এসেছে, ‘মার্জিত ব্যবহারে মানুষের পার্থিব সম্পদে বরকত হয়। মন্দ আখলাক দুর্ভাগ্য নিয়ে আসে। ন্যায়পরায়ণতা হায়াত বৃদ্ধি করে। আর দানশীলতা অপমৃত্যু রোধ করে।’ (আবু দাউদ : ৫১৬২)
মার্জিত ব্যবহার মানুষের কাছে যেমন প্রিয়, তেমনি আল্লাহর কাছেও প্রিয়। মার্জিত ব্যবহার যেন নিত্যদিনের স্বাভাবিক জীবনাচারে চলে আসে সে জন্য হাদিসে দোয়াও বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর পুরো জীবনই ছিল পরিমার্জিত। মহান আল্লাহ সবাইকে নবীজি (সা.)-এর জীবনাদর্শে নিজেদের জীবন সাজানোর তওফিক দিন।
Leave a Reply