উপার্জনে বরকত বাড়াতে করণীয়

  • আপডেট সময় শুক্রবার, জানুয়ারি ১৩, ২০২৩
  • 151 পাঠক

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
১৩ জানুয়ারি, ২০২৩

———————-
মহান আল্লাহ কাউকে অঢেল সম্পদ দান করেন। কাউকে উত্তম জীবিকা ও প্রশস্ততা দান করেন। আবার কাউকে দেন পরিমিত, স্বল্প ও নামমাত্র। এমনও হয়, একজন লাখ টাকা আয় করেন। তারপরও মাস শেষে টানাপড়েন লেগে থাকে। টাকার হিসাব মেলে না। আরেকজন সামান্য আয় করেন। তাতে সুন্দরভাবে মাস চলে যায়। কারণ তার আয়ে বরকত থাকে। সে হালাল উপায়ে আয় করে। অল্প আয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। কামাই-রোজগারে বরকত অন্যতম বড় নেয়ামত।

আসলে যার চিন্তা থাকে পরকাল নিয়ে, আল্লাহ-প্রদত্ত বিধিমালা যে মেনে চলে, তার অল্প আয়ও অনেক কাজের হয়। আল্লাহ তার অভাব দূর করে দেন। এ জন্য আমাদের পার্থিব কাজগুলো হওয়া চাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ সে ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্র করে সুসংহত করে দেবেন, তখন তার কাছে দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দেবে।

আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া; আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির দারিদ্র্য ও অভাব-অনটন দুই চোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়ায় সে এর চেয়ে বেশি পাবে না’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬৫)।

আফসোসের বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ মানুষের চিন্তা থাকে নিজের স্বার্থ ও লাভ। নিজের আনন্দের জন্য পার্থিব কাজে মেতে থাকে। আল্লাহর খুশি ও সন্তুষ্টি তার চিন্তায় থাকে না; পরকাল তো দূরের কথা। দুনিয়া নিয়েই সে ব্যস্ত থাকে, আল্লাহ তায়ালাও তাকে ঠিকই দুনিয়া দেন; তবে সে হারায় আখেরাত। দুনিয়া নিয়ে অতটুকু পরিমাণ ব্যস্ততাই যথেষ্ট, যা আল্লাহ বলেছেন এবং নবী (সা.) করতে বলেছেন ও করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। মানুষ নবী (সা.)-এর সুন্নতের বাইরে গিয়ে অযথা সুখ অন্বেষণ করে। এ যেন এক মিছে মায়ার পেছনে ছুটে চলা। আখেরাত ভুলে যে দুনিয়ার চিন্তায় মগ্ন থাকে, সে যেন সব হারাল।

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার সব চিন্তাকে একই চিন্তায় অর্থাৎ আখেরাতের চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করে, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকে, সে যেকোনো উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহর কিছু আসে-যায় না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫৭)

মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য। মানুষ যেন তা ভুলেই গেছে। আয়ের বৈধ-অবৈধ সূত্রের বালাই নেই। যে অবৈধ পথে আয় করে, সেও মিছে সুখ খুঁজে বেড়ায়। অথচ যারা আল্লাহভীরু, আয়ের পথ যাদের সৎ- তারা কতই না সৌভাগ্যবান!

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহাপবিত্র আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর হতাশা দিয়ে পূর্ণ করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব না’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৭)।

ঈমানদারেরাও অনেক সময় অভাবে পড়েন। তবে অন্যদের সঙ্গে তাদের পার্থক্য হলো- তারা ধৈর্য ধারণ করেন, আর অন্যরা হা-হুতাশ করেন; আল্লাহ এত বড় বিপদ দিলেন কেন? মহান সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপ করতে ছাড়েন না। জীবনে চলার পথে বিপদ-দুর্যোগ আসবেই, তবে বৈধ উপায়ে চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি রিজিকে বরকত আসে, এমন কিছু কাজও করতে হবে। তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে।

বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন’ (সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২)।

হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে সব দুশ্চিন্তা ও সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেবেন এবং ধারণাতীতভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন’ (আবু দাউদ)।

জীবন-জীবিকায় সচ্ছলতা লাভের আরেকটি উপায় হলো, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রিজিকের সচ্ছলতা ও দীর্ঘ জীবন পছন্দ করে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলে’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৫)।

সবচেয়ে উত্তম হলো, যখন যে অবস্থা আসুক না কেন, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। তার ওপর ভরসা রাখা। পাশাপাশি হালাল উপায়ে অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করা। তবেই অল্প আয় অনেক মনে হবে। মহান আল্লাহ উপার্জিত ও সঞ্চিত সম্পদে ঢেলে দেবেন অঢেল বরকত।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!