সানজিদা কুররাতাইন
——————-
মানুষের সুন্দর গুণ ও অর্জন নিয়ে কথা বলা মানে প্রশংসা। যখন কেউ নিজের গুণ ও অর্জন নিয়ে কথা বলে সেটা হয় আত্মপ্রশংসা। প্রশংসা যে করুক বা যারই করা হোক, সেটার সুফল আছে। তবে অতিরিক্ত প্রশংসা ও নিজেই নিজের প্রশংসা উপকারের চেয়ে বরং ক্ষতি ডেকে আনে।
সমাজে একটা মন্দ প্রথা প্রচলিত আছে, তা হলো বিনা প্রয়োজনে আত্মপ্রশংসা ও অন্যের প্রশংসা করা। কারও কাছ থেকে কিছু আদায় করতে চাইলে বা অন্যকে ছোট করতে চাইলে অনেকে অনায়াসে এই কাজ করে থাকে। যারা অন্যদের সাহায্য করে তাদের একটা একরোখা ভাব থাকে, আর যা-ই হোক ও আমার কোনো প্রশংসা করেনি। আমি ওকে কিছুই দেব না। এটা আসলে ঠিক নয়। আবার অনেকে নিজের প্রশংসা করে বেড়ায় তৃপ্তির সঙ্গে।
অনেক সময় অন্যকে অনুপ্রাণিত করার নামেও এ কাজ চলে। যেমন-আমি যে পরিমাণ বেনামাজি ছিলাম, আমি যদি এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রতিদিন পড়তে পারি, তাহলে তুমিও পারবে। আমি তো কখনো পর্দাই করতাম না, এখন আমি যদি পরিবর্তন হতে পারি তুমিও পারবে। আমি তো সবসময়ই রাতে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতাম, এখন প্রতিদিনই তাহাজ্জুদ পড়ি। আমি পারলে তুমি কেন পারবে না? আমি যদি ভদ্র হতে পারি, তুমি কেন পারবে না, আমি তোমার থেকে বেশি অভদ্র ছিলাম।
নিজেকে কখনোই দোষ-ত্রুটির ঊর্ধ্বে মনে না করা। আত্মপ্রশংসা এবং নিজেকে ত্রুটিমুক্ত মনে করা বৈধ নয়। ইহুদিরা নিজেদের পবিত্র বলে বর্ণনা করত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মপ্রশংসার কারণ হয়ে থাকে অহমিকা ও আত্মগর্ব। কাজেই সদম্ভে আত্মপ্রশংসা ও আত্মপ্রচারে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর প্রশংসাচর্চা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা হচ্ছে নিজেকেই জবাই করা’ (ইবনে মাজা : ৩৭৪৩)। অন্যত্র বলেছেন, ‘যখন তোমরা সামনে প্রশংসাকারীদের দেখতে পাও, তখন তাদের চেহারায় মাটি নিক্ষেপ করো’ (মুসলিম : ৭৩৯৬)। আল্লাহর ভয় থাকলে আত্মপ্রচারে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না, তিনি ভালো জানেন, কে তাকওয়া অবলম্বন করেছে।’ (সুরা নাজম : ৩২)
নিজেকে দোষ-ত্রুটিমুক্ত মনে করা বা প্রচার করা মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়। কেননা প্রতিটি মানুষের মাঝেই অসংখ্য ত্রুটি-বিচ্যুতি বিদ্যমান থাকে। এমনকি অন্য কেউ প্রশংসা করলেও তাতে খুশি না হওয়া।
হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তির প্রশংসা শুনতে পেলেন, সে অপর এক ব্যক্তির অতিরিক্ত প্রশংসা করছে। তিনি তাকে বললেন, ‘তোমরা তো লোকটির মেরুদণ্ড ভেঙে দিলে। (অর্থাৎ তার সর্বনাশ করেছ)’ (বুখারি : ৬০৬০; মুসলিম : ৭৩৯৪)। হজরত আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবীজি (সা.)-এর সামনে এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করল।’ তখন তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য আফসোস। তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে।’
নবীজি (সা.) কথাটি কয়েকবার বললেন, এরপর বললেন, ‘তোমাদের কেউ যদি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রশংসা করতেই চায় তাহলে তার বলা উচিত-‘অমুককে আমি এ রকম মনে করি, তবে আল্লাহই তার সম্পর্কে অধিক জানেন’ (বুখারি : ২৬৬২; মুসলিম : ৭৩৯১)। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
Leave a Reply