লেখক : আরবি প্রভাষক,
চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা,
বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম
——————————————-
লোক দেখানো কাজকে আরবিতে রিয়া বলা হয়। মানুষকে উত্তম চরিত্র দেখিয়ে তাদের অন্তরে নিজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করাকে রিয়া বলে। ইমাম গাজ্জালি (রা.) বলেন, লোক দেখানো ইবাদতের মাধ্যমে নিজের মহত্ব ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করাই হলো রিয়া। জেনে রেখো, রিয়া হারাম আর রিয়াকারী আল্লাহ তাআলার কাছে অভিশপ্ত। (ইমাম গাজ্জালি (রা.), তাসকিলে কিরদার, উর্দু, পৃষ্ঠা-১৭৬)
রিয়া এক ধরনের প্রতারণা :
রিয়া এক ধরনের ধোঁকা ও প্রতারণা বিধায় হারাম রিয়াকারীর অন্তরে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ভয়ের চেয়ে দুর্বল বান্দার ভয় বেশি থাকে। আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান হওয়ার চেয়ে বান্দার কাছে মর্যাদাবান হওয়ার প্রবণতা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। এমনকি রিয়াকারী আল্লাহকে বাদ দিয়ে বান্দাকে খুশি করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। এদিক দিয়ে রিয়াকারী বান্দাকে আল্লাহর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। তাই এটা ব্যক্তি তার নিজের সঙ্গে নিজে প্রতারণার শামিল।
রিয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার হুঁশিয়ারি :
আল্লাহ তাআলা ও নবী করিম (সা.) যথাক্রমে কোরআন ও হাদিস শরিফে এই মারাত্মক অন্তরব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে বেখবর; যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে এবং নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্যকে দেয় না।’ (সুরা মাউন, আয়াত : ৪-৭)
রিয়া মুনাফিকের আলামত :
রিয়া মুনাফিকের অন্যতম আলামত। তারা ইসলামী রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য মুসলমানদের দেখার জন্য নামাজ, রোজা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগি করত। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আল্লাহ পাক বলেন, ‘অবশ্যই মুনাফিকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সঙ্গে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। আসলে তারা যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন দাঁড়ায় একান্ত শিথিলতা ও লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪২ )
রিয়া থেকে বাঁচার উপায় :
রিয়া আমলকে নষ্ট করে দেয়। রিয়াকারীর ওপর আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হয়। সুতরাং রিয়া থেকে প্রত্যেক মুসলমানকে বাঁচতে হবে। রিয়া থেকে বাঁচতে করণীয় হলো—
এক. রিয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে যেহেতু অন্যের কাছ থেকে মান-মর্যাদা ও প্রশংসা ইত্যাদি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাই প্রথমে রিয়াকারীর অন্তর থেকে ওই সব ধ্বংসশীল আশা-আকাঙ্ক্ষা মুছে ফেলে দিতে হবে।
দুই. রিয়া হলো ইখলাসের বিপরীত অর্থাৎ যার অন্তরে রিয়া আছে তার অন্তরে ইখলাস নেই। ইখলাস অর্জন করলে রিয়া দূরীভূত হবে। সুতরাং ইখলাসের মাধ্যমে রিয়া থেকে বাঁচা সম্ভব।
তিন. যেহেতু এসব গুনাহের মূল উৎস প্রদানকারী হলো নফস শয়তান। সেহেতু সর্বদা শয়তানি কর্মকাণ্ডের বিপরীত কাজ করতে হবে।
চার. এই ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য আরেক উপায় হলো তাজকিরায়ে নফস বা আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করা।
পাঁচ. এই মারাত্মক ব্যাধি থেকে বাঁচার সর্বশেষ পন্থা হলো মহান আল্লাহর দরবারে রিয়ামুক্ত জীবনের জন্য দোয়া করা। নবীজি (সা.) নিজেও এভাবে দোয়া করতেন—হে আল্লাহ, আমার অন্তরকে নেফাক থেকে, আমার আমলকে রিয়া থেকে, আমার জিহ্বাকে মিথ্যা থেকে এবং আমার চোখকে খিয়ানত থেকে পবিত্র রাখো। চোখের খিয়ানত ও অন্তরে গোপন অবস্থা সম্পর্কে তুমি অবিহিত। [হজরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) গুনিয়াতুত তালেবিন, উর্দু, পৃষ্ঠা-৪৭১, আদ-দাওয়াতুল কবির ইত্যাদি)
আসুন, আমরা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের দরবারে এ গর্হিত ও ঘৃণিত চরিত্র থেকে মুক্তি লাভের আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং একনিষ্ঠতার সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টায় শক্তি প্রার্থনা করি।
Leave a Reply