মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
২১ জুলাই, ২০২৩
———————
হাদিসের ঘোষণা মতে, শেষ যুগে ইলম ওঠিয়ে নেয়া হবে। তখন মানুষের মধ্যে দ্বিনের চর্চা থাকবে না। দ্বিন থেকে দুরে সরে যাওয়ার কারণে সর্বত্র অশান্তি দেখা দেবে। অযোগ্য অথর্বদের ভিড়ে যোগ্যরা কোণঠাসা হয়ে যাবে।
যোগ্যতার মূল্যায়ন না হওয়ায় অযোগ্য মানুষের সংখ্যাই সমাজে বাড়বে। মানুষের মাঝে মানবিক গুণ থাকবে না। দ্বিন-ধর্ম থেকে দূরে সরা মানুষগুলো শয়তানের তাঁবেদারিতে মগ্ন থাকবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ এমন শত উটের মতো, যাদের মধ্য থেকে তুমি একটিকেও বাহনের উপযুক্ত পাবে না। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৯৮)।
অর্থাৎ উটের কাজ হলো বোঝা বহন করা। আর যে উট বোঝা বহন করতে পারে না, সেটা নিজেই একটা বোঝা। অনুরূপভাবে মানুষ আজ নামে মাত্র মানুষ। তার দেহ-সৌষ্ঠব সুন্দর হলেও শত মানুষের মাঝে মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
কিয়ামতের আগে সমাজে অযোগ্যদের এই দৌরাত্ম্য আরো বাড়বে। অশিক্ষিত, গরিব শ্রেণির লোকেরা হঠাৎ করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাবে। হাদিসে জিবরাইলে ইরশাদ হয়েছে, তিনি (জিবরাইল) এবার বলেন, তাহলে কিয়ামতের নিদর্শনগুলো বলুন। তিনি বলেন, দাসী আপন মনিবকে জন্ম দেবে এবং নাঙ্গা পা-ওয়ালা বস্ত্রহীন দেহ গরিব মেষচালকদের দালানকোঠা নিয়ে গর্ব করতে দেখবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৯৫)।
এখানেই শেষ নয়, শেষ যুগে যেহেতু নিম্ন শ্রেণির মানুষের কাছেও অনেক সম্পদ চলে আসবে, তখন তারা সমাজে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠবে।
তারা নিজেরাও জানবে তারা অযোগ্য, অথর্ব। কিন্তু তারা নিজেদের অযোগ্যতা ঢাকতে কৌশলে যোগ্যদের অযোগ্য বলে প্রচার করবে। নির্দোষরা দোষী হয়ে যাবে, আর দোষীরা হয়ে উঠবে ফুলের মতো পবিত্র চরিত্রের মুখোশধারী ব্যক্তিত্ব। অবশেষে তারা হয়তো একসময় নেতৃত্ব পেয়েও যাবে, তখন বুঝে নিতে হবে, পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
হাদিস শরিফে শেষ যুগের এই চিত্র ফুটে ওঠেছে। ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, অচিরেই লোকদের ওপর প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির যুগ আসবে। তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী গণ্য করা হবে, আমানতের খিয়ানতকারীকে আমানতদার, আমানতদারকে খিয়ানতকারী গণ্য করা হবে এবং রুওয়াইবিয়া হবে বক্তা। জিজ্ঞাসা করা হলো, রুওয়াইবিয়া কী ? তিনি বলেন, নীচ প্রকৃতির লোক, সে জনগণের হর্তাকর্তা হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০৩৬)।
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদা আল্লাহর রাসুল (সা.) মজলিসে জনসম্মুখে কিছু আলোচনা করছিলেন। এরই মধ্যে তাঁর নিকট জনৈক বেদুইন এসে জিজ্ঞেস করল, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর আলোচনায় রত থাকলেন। এতে কেউ কেউ বলেন, লোকটি যা বলেছে তিনি তা শুনেছেন কিন্তু তার কথা পছন্দ করেননি। আর কেউ কেউ বলেন বরং তিনি শুনতেই পাননি।
আল্লাহর রাসুল (সা.) আলোচনা শেষে বলেন, ‘কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়?’ সে বলল, ‘এই যে আমি, হে আল্লাহর রাসুল!’ তিনি বলেন, ‘যখন কোনো অনুপযুক্ত ব্যক্তির ওপর কোনো কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন তুমি কিয়ামতের অপেক্ষা করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯)।
অতএব, কঠিন এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে মুসলিমদের আরো সচেতন হতে হবে। কোরআন-হাদিস চর্চায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মকেও সঠিক কোরআন-হাদিসের জ্ঞানে আলোকিত করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বিনের ওপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। কিয়ামতের মন্দ আলামতের চিহ্ন হওয়া থেকে বিরত রাখুন।
Leave a Reply