নিজস্ব প্রতিবেদক ।০৬ আগস্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
পুরোনো লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলোকে রং করে আবার রাস্তায় নামানোর চর্চা মালিকদের দীর্ঘদিনের। এসব বাস রাস্তায় চলাচলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি তৈরি করে। এছাড়া পুরোনো ট্রাকের কালো ধোঁয়া মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে মহাসড়কে। পণ্যবোঝাই করে কচ্ছপের গতিতে চলে এসব ট্রাক। তাই বাস-ট্রাক আয়ুষ্কালের লাগাম টানতে চেয়েছিল সরকার।
—————————————————-
আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল
—————————————————-
গত মে মাসে বাসের ২০ বছর ও ট্রাকের ২৫ বছর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সে প্রজ্ঞাপন মানতে বাধ্য করার জন্য অভিযানেরও ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে হঠাৎই সে প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়েছে। এতে ২০ বছরের পুরোনো বাস ও ২৫ বছরের পুরোনো ট্রাক রাস্তায় চালানোর কোনো বাধা থাকছে না।
গত ৩ আগস্ট জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর ৩৬ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক গত ১৭ মে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানসহ মালবাহী বিভিন্ন যানবাহনের ২৫ বছর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করা হলো।
সূত্র জানায়, গত মে মাসে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল বাস-ট্রাক মালিকরা। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন তারা। সে সময় মালিক সংগঠনের নেতারা বলেন, চলতি বছরের মে মাসে বাস-ট্রাকের ২০ বছর ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ২৫ বছর নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এই হিসেবে দেশে ৬৫ হাজার বাস মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ব্যবহার করা যাবে না। দেশে চলমান ডলার সংকটের মধ্যে গাড়ি আমদানি করা হলে ডলার সংকট আরও বেড়ে যাবে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিবহন সংকটের অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। পাশাপাশি সরকারকে বেকায়দায় ফেলবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তরা।
যদিও সড়কের দুর্ঘটনা ও যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িগুলো দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর বাতাস এবং অসহনীয় তাপপ্রবাহের কারণ হিসেবে গাছ কাটার পাশাপাশি কালো ধোঁয়া নির্গত মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িগুলোকেও অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন পরিবেশবিদরা।
পরিবেশবিদদের তথ্যমতে, পরিবেশ দূষণের অন্যতম তৃতীয় কারণ লক্কড়-ঝক্কড় মেয়াদোত্তীর্ণ এসব যানবাহন, যা বায়ুদূষণের জন্য ১৫ ভাগ দায়ী।
বিআরটিএর তথ্যমতে, মে মাসের প্রজ্ঞাপন কার্যকর করলে দেশে প্রায় ৩৪ হাজার বাস এবং ৩১ হাজার ট্রাক ডাম্পিং করতে হতো। সে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে শুরু থেকে প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে বাস-ট্রাকের আয়ুষ্কাল যথাক্রমে ৩০ বছর নির্ধারণের দাবি করে আসছেন মালিকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো সরকার।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, বাস-ট্রাকের আয়ুষ্কাল পুনর্নির্ধারণের জন্য কমিটি করা হয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
যদিও এর আগে একই ধরনের কমিটি করা হয়েছিল। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই বাস-মিনিবাসের ২০ বছর ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের আয়ুষ্কাল ২৫ বছর নির্ধারণ করা হয়।
উল্লেখ্য, দেশে মোট ৭১ হাজার ৪৮১টি বাস ও মিনিবাস রয়েছে। তার মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় অর্ধেক ৩৩ হাজার ১৭৪টি বাস। আর এক লাখ ২৬ হাজার ২৩টি ট্রাকের মধ্যে ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলেছে ৩০ হাজার ৬২৩টি ট্রাক। পাশাপাশি রাজধানীতে চলাচলকারী ছয় হাজার বাসের ৮৭১টি বাসই লক্কড়-ঝক্কড়।
Leave a Reply