ইস্তেগফার সৌভাগ্যবানদের আমল

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, আগস্ট ৮, ২০২৩
  • 105 পাঠক

দিশারী ডেস্ক ।০৮ আগস্ট ২০২৩।

নবী-রাসুলরা ছাড়া কোনো মানুষই নিষ্পাপ নয়। আমরা জেনে- না জেনে রাতদিন পাপের সাগরে ডুবে আছি। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা। ইস্তেগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা। বান্দা যখন আল্লাহর সামনে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে, শরিয়তের দৃষ্টিতে এটিকে ইস্তেগফার বলা হয়।

গুনাহে লিপ্ত হওয়ার পর বান্দা অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলে মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় হিসেবে পায়।’ (সুরা নিসা: ১১০)

ইস্তেগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার অনেক উপকার রয়েছে। ইস্তেগফারের কারণে শুধু পরকাল নয়, দুনিয়ার জীবনও সমৃদ্ধ হয়। পাপ থেকে মুক্তি ছাড়াও মানবজীবনের যাবতীয় সংকট ও বিপদাপদ থেকে মুক্তির হাতিয়ার এই ইস্তেগফার। আলেমদের মতে, মানুষ যদি খাঁটি দিলে ইস্তেগফার করতে অভ্যস্ত হয়, আল্লাহ তাআলা অসংখ্য পুরস্কার দান করবেন।

আল্লাহর হুকুম পালন :

পবিত্র কোরআনে বেশি বেশি ইস্তেগফারের তাগিদ দেয়া হয়েছে। কারণ, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বান্দা প্রতিনিয়ত গুনাহ করে থাকে। কিন্তু তারাই উত্তম, যারা গুনাহ হয়ে গেলে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চেয়ে নেয়। গুনাহও করবে, আবার ক্ষমাও চাইবে না—এটি বোকামি ছাড়া অন্য কিছু নয়। মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল। তিনি বান্দাকে ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা বাকারা: ১৯৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও।’ (সুরা হুদ: ৩)
এসব আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের হুকুম করছেন, যে তোমরা (ইস্তেগফার করো) ক্ষমা চাও। অতএব ইস্তেগফারের প্রথম উপকারিতা হলো এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর হুকুমের তামিল হয়।

গুনাহ মাফের মাধ্যম :

এমন ধারণা করা উচিত নয় যে, এত বেশি গুনাহ করে ফেলেছি যে, আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। মূলত এমন চিন্তা থেকে গুনাহের পরিমাণ আরও বাড়ে। অথচ গুনাহ হয়ে গেলে মহান আল্লাহর কাছে যারা ক্ষমা চায়, তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কেউ কোনো মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করে পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।’ (সুরা নিসা: ১১০)

বিপদাপদ দূর হয় :

ভয়াবহ বিপদ কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে বান্দাকে পাপের শাস্তি দেন। কিন্তু বান্দারা যখন ইস্তেগফারে রত হয়ে যায়, তখন তিনি আজাব উঠিয়ে নেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে (ইস্তেগফার করবে) অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন।’ (সুরা আনফাল: ৩৩)। অতএব কোনো ধরনের বিপদাপদ ও মহামারি দেখা দিলে মুমিনের প্রধান কাজ হলো বেশি বেশি ইস্তেগফার করা।

দুশ্চিন্তা দূর হয় :

প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘ যে ব্যক্তি নিজের জন্য ‘ইস্তেগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) আবশ্যক করে নেবে, আল্লাহ তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, সব সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা তার চিন্তার বাইরে।’ (সুনানে নাসায়ি: ৩৮১৯)

রিজিকে বরকত হয় :

রিজিকের বরকতের জন্য পাপমুক্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। পাপমুক্ত থাকার অন্যতম মাধ্যম হলো ইস্তেগফার। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের কারণে তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ৪০২২)
ইস্তেগফারের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বান্দাকে পরিশুদ্ধ করেন। ফলে তার রিজিকের অভাবও দূর হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৬৭৭)

সম্মান বাড়িয়ে দেন :

দুনিয়ার সফলতা ইস্তেগফারের মাধ্যমে মহান আল্লাহ দুনিয়ায় সফলতা দান করেন। সম্মান বাড়িয়ে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থন করো, তারপর তার দিকেই ফিরে আসো। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরও শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (সুরা হুদ: ৫২)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা লেখেন, ‘ আল্লাহ তাআলা হুদ (আ.)-কে আদ জাতির কাছে নবীরূপে প্রেরণ করেছিলেন। হুদ (আ.) আদ জাতিকে তাওহিদের দাওয়াত ছাড়াও পূর্ববর্তী গুনাহের জন্য তওবা-ইস্তেগফার করতে বলেছিলেন। তাদেরকে তওবার সুফল সম্পর্কে বলেন, যদি তোমরা সত্যিকার তাওবা ও ইস্তেগফার করতে পারো তবে তার বদৌলতে আখেরাতের চিরস্থায়ী সাফল্য ও সুখময় জীবন তো লাভ করবেই, দুনিয়াতেও এর বহু উপকারিতা দেখতে পাবে। দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টির পরিসমাপ্তি ঘটবে যথাসময়ে শক্তি-সামর্থ্য বর্ধিত হবে।

এখানে ‘শক্তি’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার মধ্যে দৈহিক শক্তি এবং ধন, বল ও জনবল সবই অন্তর্ভুক্ত। (কুরতুবি; ইবনে কাসির)। অতএব বোঝা গেল, ইস্তেগফারের মাধ্যমে মানুষের যেমন আখেরাতের মুক্তি অর্জন হয়, তেমনি দুনিয়াতেও ধন সম্পদ এবং সন্তানাদির মধ্যে বরকত হয়ে থাকে।

আখেরাতের সফলতা মহান আল্লাহ ইস্তেগফারকারীদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট পুরস্কার বরাদ্দ রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ বলুন, আমি কি তোমাদেরকে এসব বস্তু থেকে উৎকৃষ্টতর কোনো কিছুর সংবাদ দেব ? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর নিকট থেকে সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। যারা বলে, হে আমাদের রব ! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি ; কাজেই আপনি আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থী। (সুরা আলে ইমরান: ১৫-১৭)

উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর জান্নাতি বান্দাদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো তারা ক্ষমাপ্রার্থী। তারা শেষ রাতে ওঠে মহান আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, মহামহিম আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে। আমি তাকে তা দেবো। কে আছে এমন যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি: ১১৪৫)

অতএব যারা রাতের শেষাংশে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দেবে এবং ইস্তেগফার করবে, মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!