নবীজি (সা.) যাদের নিকৃষ্ট মানুষ বলেছেন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, আগস্ট ২২, ২০২৩
  • 140 পাঠক

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা। ২২ আগস্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

দেশব্যাপী আতঙ্কের আরেক নাম এখন কিশোর গ্যাং। ছোটখাটো অপরাধ থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ড, ইভ টিজিং, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদকাসক্তি, মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কিত গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। নিজেদের পাপের সাম্রাজ্য শক্তিশালী করতে পাড়া-মহল্লার ছিঁচকে ছেলেপুলেকে কাজে লাগিয়ে বেপরোয়া গ্যাং তৈরি করছে কিছু অসাধু মানুষ। যার অনুসারীরা যত বেশি হিংস্র, তার প্রভাব তত বেশি।

অথচ এই প্রভাবের বাস্তবে কোনো মূল্য নেই। যারা এভাবে প্রভাবশালী হয়, তাদের নবীজি (সা.) নিকৃষ্ট মানুষ বলে আখ্যা দিয়েছেন। কারণ তাদের মানুষ সম্মান করে তাদের অনিষ্ট ও অশালীনতা থেকে বাঁচার জন্য।

আয়েশা (রা.) বলেন, একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আসার অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, তাকে অনুমতি দাও।

সে বংশের নিকৃষ্ট ভাই অথবা বলেন, সে গোত্রের নিকৃষ্ট সন্তান। লোকটি ভেতরে এলে তিনি তার সঙ্গে নম্র ভাষায় কথাবার্তা বলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি এ লোকের ব্যাপারে যা বলার তা বলেছেন। পরে আপনি আবার তার সঙ্গে নম্র হয়ে কথা বললেন।

তখন তিনি বলেন, হে আয়েশা, নিশ্চয়ই সবচেয়ে খারাপ লোক সে-ই, যার অশালীনতা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ তার সংসর্গ পরিত্যাগ করে। (বুখারি, হাদিস : ৬০৫৪)।
যেসব উদ্দেশ্যে তারা কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে ও লালন-পালন করে, সে উদ্দেশ্যগুলোও মানুষের ঈমান হরণ করে। যেমন কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম কাজ হলো, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ ইত্যাদি। হাদিসে আছে, কোনো ঈমানদার ব্যক্তি ঈমান থাকা অবস্থায় এসব কাজ করতে পারে না।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো ব্যভিচারী ব্যভিচার করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না, যখন চোর চুরি করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় চুরি করে না, যখন কোনো মদ্যপায়ী মদ পান করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না, আর যখন কোনো ডাকাত লোকচক্ষুর সামনে ডাকাতি করে, তখনো সে মুমিন অবস্থায় ডাকাতি করে না। (নাসায়ি, হাদিস : ৪৮৭০)।

অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) ছিনতাইকারী ও লুটপাটকারীদের নিজের উম্মতের তালিকা থেকেই বাদ দিয়েছেন। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইসলামে ‘জালাব’, ‘জানাব’ বা ‘শিগার’ কোনোটারই স্থান নেই। যে লোক ছিনতাই বা লুণ্ঠন করল সে লোক আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১১২৩)। অর্থাৎ সে উম্মতে মুহাম্মদির গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায়।

কিশোর গ্যাংকে অনেকে লালন-পালন করে তাদের মাদকের ব্যবসা চাঙ্গা করার জন্য। তাদের মাদক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে লাগানোর জন্য, যা তাদের পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। কারণ যারা এই সংশ্লিষ্ট কাজ করে, নবীজি (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, মদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১০ শ্রেণির লোককে রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। এরা হলো- মদ তৈরিকারক, মদের ফরমায়েশকারী, মদ পানকারী, মদ বহনকারী, যার জন্য মদ বহন করা হয়, মদ পরিবেশনকারী, মদ বিক্রেতা, এর মূল্য ভোগকারী, মদ ক্রেতা এবং যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৯৫)।

অনেক সময় প্রতিপক্ষকে হত্যা ও দমন করার জন্যও এসব গ্যাং লালন-পালন করা হয়। অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, কেউ যদি কাউকে হত্যা করে এবং তা অন্য কাউকে হত্যা করার কারণে কিংবা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তারের কারণে না হয়, তবে সে যেন গোটা মানবতাকে হত্যা করল। (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৩২)।

তাই আমাদের উচিত, আমাদের সন্তান-সন্ততি আত্মীয়-স্বজনসহ সবাইকে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা। কিশোরদের আল্লাহমুখী করার চেষ্টা করা। আল্লাহর ভয় তাদের অন্তরে তৈরি করা। কারণ যার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে, সে কোনো ধরনের পাপ করতে পারে না। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, সে কখনো কোনো পাপে লিপ্ত হতে পারে না।

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!