প্যাঁচা নিয়ে মানুষের প্রচলিত ভুল ধারণা

  • আপডেট সময় সোমবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
  • 157 পাঠক

মুহাম্মদ তাকরীম। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।

গ্রামবাংলার বিলুপ্তপ্রায় পাখি প্যাঁচা। বড় মাথা, চ্যাপ্টা মুখমণ্ডল, গোলাকার পুচ্ছ ও চওড়া ডানার অধিকারী এই পাখিটিকে দিনের বেলা তেমন একটা দেখা যায় না। রাতের স্বল্প আলোয় প্যাঁচার চোখ অধিক আলোর সংস্থান করতে পারায় এই শিকারি পাখিরা অন্ধকারে ভালোই দেখে। এদের চোখ এতটাই আলো শোষণ করে যে অনেক প্যাঁচা দিনের উজ্জ্বল আলোয় অস্বস্তি অনুভব করে।

তবে কিছু দিবাচর প্যাঁচাও আছে। অধিকাংশ প্যাঁচা ছোট ছোট স্তন্যপায়ী ও পাখি শিকার করে খায়। এরা মাটিতে থাকা ছোট ইঁদুরজাতীয় স্তন্যপায়ী বা কীটপতঙ্গ ধরার সময় উঁচু জায়গা থেকে নিচে ছোঁ মারে। গাছের ডালপালা থেকেও পোকামাকড় এবং অন্যান্য শিকার ধরতে অভ্যস্ত।

নিরীহ এই প্রাণীটিকে আমাদের সমাজে অশুভ লক্ষণের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। তাই প্যাঁচার শব্দ কিংবা উপস্থিতি মানুষকে আতঙ্কিত করে। অনেকে মনে করে, প্যাঁচা অমঙ্গল ও বিপদ-আপদ ডেকে আনে। ইসলামে এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই; বরং হাদিসের ভাষ্য দ্বারা বোঝা যায়, জাহিলি যুগেও প্যাঁচাকে অমঙ্গলের প্রতীক মনে করা হতো, ইসলাম এর বিরোধিতা করেছে।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, রোগের কোনো সংক্রমণ নেই, সফরের কোনো অশুভ আলামত নেই, প্যাঁচার মধ্যেও কোনো অশুভ আলামত নেই। তখন এক বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রাসুল, তাহলে আমার এ উটের এ অবস্থা কেন হয়? সেগুলো যখন চারণ ভূমিতে থাকে তখন সেগুলো যেন মুক্ত হরিণের পাল। এমন অবস্থায় চর্মরোগগ্রস্ত উট এসে সেগুলোর পালে ঢুকে পড়ে এবং সেগুলোকেও চর্মরোগে আক্রান্ত করে ফেলে। নবী (সা.) বললেন, তাহলে প্রথমটিকে চর্মরোগাক্রান্ত কে করেছে? (বুখারি, হাদিস : ৫৭১৭)।

জাহিলি যুগে মানুষ মনে করত, প্যাঁচা মৃত মানুষের আত্মা থেকে সৃষ্টি। মৃত আত্মা প্যাঁচার বেশে ফিরে আসে।

প্যাঁচা কোনো ঘরের ওপর বসলে সেই ঘর বিরান হয়ে যায়—এ কথাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। রাসুল (সা.) বলেছেন, মৃত মানুষের আত্মা থেকে প্যাঁচার জন্ম বলতে কিছু নেই। (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৮১)।

অর্থাৎ এ কথার কোনো ভিত্তি নেই। ইসলাম আসার দেড় হাজার বছর পর এসেও গ্রাম-বাংলার অনেক মানুষ প্যাঁচা ডাকলে আতঙ্কিত হয়। তারা মনে করে, পরিবারের কোনো মানুষ মারা যেতে পারে কিংবা পরিবারে বড় কোনো বিপদ আসতে পারে। অথচ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হাব্বা ইবনে হাবিস আত-তামিমি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, প্যাঁচার ডাকে অশুভ কিছু নেই। ফাল-ই হলো অধিক নির্ভরযোগ্য শুভ লক্ষণ এবং বদনজর সত্য বা বাস্তব। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৯২২)।

মহান আল্লাহ আমাদের সব ধরনের কুসংস্কার থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন

সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!